ঈদের কথা বলতে গেলে শৈশবের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। তখনকার ঈদ এত জমকালো হতো না, কিন্তু অনেক আনন্দের ছিল। শুধু এক ঈদেই আমরা জামাকাপড় কিনতাম। ওই সময় ঈদের চাঁদ পরিষ্কার দেখা যেত। ঈদের চাঁদ দেখলেই জুতো পলিশ করে ফেলতাম। জামাকাপড় গুছিয়ে ঠিকঠাক করে রাখতাম।
ঈদের সকালে বাসায় নাশতা করে বন্ধুদের নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম।
আমার ছোটবেলা কেটেছে করাচিতে। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। আমাদের বাঙালি কমিউনিটিতে যাঁরা ছিলেন, সবার বাসায় যেতাম। পাড়াময় ঘুরে বেড়াতাম। সবার বাসায় খাওয়াদাওয়া করতাম। কোন বাসার খাবারটা বেশি ভালো ছিল, দিন শেষে তা নিয়ে বন্ধুরা মিলে গল্পগুজব করতাম।
ঈদের চাঁদ দেখে মা রান্নাবাড়া শুরু করতেন। সারা রাত জেগে রান্না করতেন। সেমাই, জর্দাসহ মিষ্টির নানা পদ রান্না হতো। সেই সঙ্গে দইবড়ার মতো নোনতা খাবারও থাকত। লুচি, আলুর দম ও পরোটা-কাবাব হতো। আর পোলাও-মাংস তো থাকতই।
আমার বয়স যখন পনেরো-ষোলো, তখন আমরা ঢাকায় আসি। সেই সময়ও আত্মীয়স্বজনদের বাসায় যেতাম। খাওয়াদাওয়া হতো, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো হতো।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পর আমি একেবারে গ্রামে গিয়ে কাজ করতে শুরু করি। সেই সময় মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে আমার ঈদে আনন্দ করার ইচ্ছা ম্লান হয়ে যেতে থাকে। তখন থেকেই আমি ঈদ উদ্যাপন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করি। কিন্তু ওই সময় একটা ব্যাপার খুব ভালো লাগত, গ্রামের মানুষগুলোকে দেখতাম, এত অভাব, এত দুর্দশার মধ্যেও তারা ঈদের দিনে একটু করে সেমাই রান্না করত, পিঠা বানাত।
আশির দশকের মাঝামাঝিতে আমার মেয়ের জন্মের পর থেকে আমার ঈদ উদ্যাপনটা আবার শুরু হয়। কারণ আমি ভাবতাম, ঈদটা তো আমাদের সংস্কৃতির অংশ। আমার মেয়েকে তো আমি ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে পারি না। ঠিক একইভাবে পয়লা বৈশাখ, পূজা ও বড়দিন আমি আমার মেয়েকে ওর মতো করে উদ্যাপন করতে দিয়েছি। কারণ আমি মনে করি, ধর্ম যার যার, কিন্তু উৎসব সবার।
খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি
অনুলিখন: অর্চি হক