গাজী বংশের সর্বশেষ মুসলিম জমিদার সাধক সিদ্ধপুরুষ শের আলী গাজীর নামানুসারে শেরপুর নামকরণ হয়। সেকালে ময়মনসিংহ, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও কলকাতার সঙ্গে শেরপুরের সরাসরি নৌ-যোগাযোগ ছিল। ১৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্রহ্মপুত্র নদ যমুনা নদীর সঙ্গে মিশে গেলে শেরপুরের সঙ্গে সব ধরনের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে সড়কপথই শেরপুরবাসীর একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে গড়ে ওঠে। পার্শ্ববর্তী জামালপুর মহকুমা ও আশপাশের থানাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সড়কপথের কোনো বিকল্প ছিল না।
শেরপুর ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি থানা থেকে মহকুমায় উন্নীত হয় এবং ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হয়। পাঁচটি উপজেলা তথা শেরপুর সদর, নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী নিয়ে নতুন জেলা শেরপুরের যাত্রা শুরু হয় অনেকটা শূন্য থেকে। রাস্তাঘাটের ভগ্নদশা, অধিকাংশ রাস্তা কাঁচা হওয়ায় একমাত্র গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল চোখে পড়ার মতো।
১৯৭৫–পরবর্তী সরকারগুলো গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং যোগাযোগ সংস্কারে তেমন মনোযোগ দেয়নি। ফলে এই বিস্তীর্ণ জনাঞ্চলের মানুষ শিক্ষায় ও অর্থনীতিতে বরাবরের মতোই পিছিয়ে থাকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে জেলার উন্নয়ন শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পশ্চাৎপদ ও অবহেলিত শেরপুর জেলায় যোগাযোগ ও সেতু খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
সৌন্দর্যমণ্ডিত ও নান্দনিক উন্নয়নে শেরপুর জেলার সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা অধিকতর সুগম, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও মানসম্মত হয়েছে। এর প্রভাবে আর্থসামাজিক অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে মানুষের মধ্যে জাগরণ এসেছে। এসেছে জীবনমানের অনেক পরিবর্তন। সীমান্তের গারো পাহাড়সহ শেরপুরের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় এলাকায় বেড়েছে ভ্রমণপিপাসুদের যাতায়াত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন অভিযাত্রায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি), জেলা পরিষদ, শেরপুর পৌরসভাসহ চারটি পৌরসভার অধীনে উন্নয়নের চিত্র নিরীক্ষণ করে পাওয়া গেছে সাফল্যের এমন চিত্র।
ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে শেরপুরের জেলা পরিষদ তৃণমূলের সড়ক যোগাযোগসহ মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আর ওই কাজের ধারাবাহিকতায় গত এক যুগে শেরপুর জেলা পরিষদের অনুকূলে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শতাধিক কিলোমিটার পাকা ও তিন শতাধিক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা, শতাধিক ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। একই সময়ে নকলা, নালিতাবাড়ী এবং শ্রীবরদী পৌর এলাকায়ও সড়ক যোগাযোগ ও সেতু খাতে করা হয়েছে দৃশ্যমান উন্নয়ন।
তালাত মাহমুদ
কবি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবং সভাপতি, কবি সংঘ বাংলাদেশ