ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ও কাঁঠাল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো। উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত পাগারিয়া নদীর ওপর সাঁকোটি বানানো হয়েছে। প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সাঁকো দিয়ে চলাচল করেন। বাঁশের এ সাঁকো পার হতে গিয়ে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটলেও সেখানে নির্মিত হয়নি কোনো স্থায়ী সেতু।
উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কাকচর উত্তরপাড়া গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত পাগারিয়া নদীর ওপর তৈরি বাঁশের সাঁকোটি ব্যবহার করেন কাকচর, দরিল্লা, কাঁঠাল তেতুলিয়াপাড়া, বালিয়ারপাড় ও কানিহারী ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। জাহেদের ঘাট নামে পরিচিত জায়গায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা পাশের কাঁঠাল ইউনিয়নের তেতুলিয়াপাড়ার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে।
জানা গেছে, প্রায় পাঁচ বছর আগে কাকচর গ্রামের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী দুখুনি সাঁকো থেকে পা পিছলে নদীতে পড়ে মারা যায়। দুখুনি ছিল ওই গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে। ঘটনাটি স্মরণ করে গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আমিরুল হক বলেন, ‘ইস্কুল যাইতে গিয়া সাওক্কা (সাঁকো) থেইক্যা পইড়া মাইয়াটা মরল। এরপর পরিবারডাও গেরাম ছারল। মেলা পোলাপান ইস্কুল যাইবার গিয়া পইড়া গিয়া হাত-পা ভাঙে। নেতা-ফেতাগরে কত কইলাম আমরা, একটা বিরিজ (ব্রিজ) কইরা দেন, কিন্তু কেউ দিল না। মানুষ মরলেও বিরিজ করার খবর নাই।’
বাঁশের সাঁকোর পাশেই নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফজাল হোসেনের বাড়ি। গত বছর স্কুল থেকে ফেরার পথে সাঁকো থেকে পড়ে তার হাত ভেঙে যায়। আফজালের বাবা দুলাল মিয়া বলেন, ‘খালি আমার ছেলে না, প্রায়ই পোলাপান পড়ে গিয়া হাত-পা ভাঙে। একটা সেতু অইলে আর এমন কষ্ট করতে হইত না।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে রামপুর, কাঁঠাল ও কানিহারী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে। কৃষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ মালামাল নিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পার হয়। নদীর এক পাড়ের জমি অন্য পাড়ে থাকায় ফসল আনা-নেওয়ার একমাত্র পথও এই সাঁকো।
স্থানীয় কলেজশিক্ষার্থী সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাছে হওয়ায় আমরা স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন এই সাঁকো পার হই। মাঝেমধ্যে সাঁকো ভেঙে যায়, কিন্তু বিকল্প কোনো পথ নাই।’
কাকচর গ্রামের আজিজুল হক বলেন, গ্রামের চারটি ওয়ার্ডসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে আছেন। বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। অনেকবার অভিযোগ করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
স্থানীয় কৃষক মানিক মিয়া বলেন, ‘আমার দুই সন্তান প্রতিদিন এই সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যায়। বৃষ্টির সময় সাঁকো পিচ্ছিল হয়ে পড়ে, তখন আরও ভয় লাগে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আলিম উদ্দিন বলেন, এই সাঁকো দিয়ে কয়েক গ্রামের শত শত মানুষ চলাচল করে। এখানে একটি কংক্রিটের ব্রিজ হওয়া খুবই জরুরি। সাঁকো থেকে পড়ে এক শিশু মারা যাওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আপেল মাহমুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরে জানিয়েছি। তারা লোক পাঠিয়ে মাপজোখও করেছেন। কিন্তু কেন এখনো কাজ শুরু হয়নি, তা জানি না। আমি শিগগির তাদের সঙ্গে আবারও কথা বলব।’
ত্রিশাল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ বলেন, নদীর এক পাশে রাস্তা থাকলেও অপর পাশে নেই। চেয়ারম্যানকে রাস্তা নির্মাণের জন্য বলা হয়েছে। রাস্তার ব্যবস্থা হলে সেতু করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ত্রিশাল উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) যুবায়েত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি সম্পর্কে এখনো অবগত নই। তবে এখানে যদি ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে জরিপ করা হয়ে থাকে বা ডিপিপি তে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে, তবে অনুমোদন সাপেক্ষে স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হবে।’