কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ, স্বতন্ত্র প্রার্থীর অফিস ও নৌকা প্রার্থীর সমর্থকদের বেশ কিছু মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছয়জন আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাইসুল ইসলাম, তাঁর বাবা আব্দুল করিম ও মা হাসিনা খাতুন এবং নৌকা প্রার্থীর ভাটার ম্যানেজার ওবাইদুর রহমান, মাসুদ ও শান্ত। আহতরা কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর, বেলঘুড়িয়া, আড়াপাড়া ও নাউতি পূর্বপাড়া এলাকা ঘুরে জানা গেছে, গতকাল রাত ৯টার দিকে মির্জাপুর বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী হাসান তারেক বিপ্লবের সমর্থকেরা একটি মিছিল বের করেন। এ সময় নৌকার প্রার্থী সালাউদ্দিন খান তারেকের সমর্থকেরা ১৫ থেকে ২০টি মোটরসাইকেল নিয়ে মিছিল করেন। মিছিলে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়ে কটু কথা ও অশ্লীল গালিগালাজ করা হয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়।
এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে নৌকার ৬০ থেকে ৭০ জন সমর্থক উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাইসুল ইসলামের বাড়িতে ও মির্জাপুর বাজারের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর অফিসে হামলা চালায়। এ সময় রাইসুল ও তাঁর পরিবারের লোকজন চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা ছুটে এলে দুই গ্রুপে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ছয়জন আহত হন।
অন্যদিকে, মির্জাপুর বাজার এলাকায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষ নিজ নিজ এলাকার মির্জাপুর, বেলঘুড়িয়া, আড়াপাড়া ও নাউতি পূর্বপাড়া জামে মসজিদে ঘোষণা দেয়, তাদের প্রার্থী মির্জাপুর এলাকায় আটকা পড়েছেন। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। এই প্রচার শুনে গ্রামবাসী রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে এবং উভয় পক্ষ মুখোমুখি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আড়পাড়া পূর্বপাড়া জামে মসজিদ এলাকার লোকজন বলেন, ‘রাত ১টার দিকে হঠাৎ মসজিদের মাইকে শোনা যায়, একটি কুচক্রী মহল আমাদের চেয়ারম্যান গাজী হাসান তারেক বিপ্লবের বাড়িতে হামলা করতে আসছে। আপনারা সবাই যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে অবস্থান করেন।’
বেলঘুড়িয়া দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ এলাকার বাসিন্দারা জানান, রাত ১টার দিকে মসজিদের মাইকে শোনা যায় আমাদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন খান তারেকের বাড়িতে একটি কুচক্রী মহল হামলা করতে আসছে। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শী মির্জাপুর গ্রামের লোকমানের ছেলে রিপন হোসেন বলেন, পুলিশের সহযোগিতায় নৌকার লোকজন অফিস ও রাইসুলের বাড়িতে হামলা চালায়। পুলিশের আচরণ এমন হলে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী গাজী হাসান তারেক বিপ্লব বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী উপস্থিত থেকে পুলিশের সহযোগিতায় আমার অফিস ও কর্মী রাইসুলের ওপর হামলা করেছে। প্রশাসন পক্ষপাতিত্ব করছে। আমি নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করা হবে।’
নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন খান তারেক বলেন, ‘রাতে আমার কর্মীরা ভোট চাইতে গিয়েছিল। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি আমার লোকদের ওপর হামলা চালায়। এতে মাসুদ ও ওবাই নামের দুজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ ছাড়া বেশ কিছু মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।’
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘ঘটনা ঘটার আগে বা পরে সেখানে আমি যাইনি। খবর পেয়ে প্রশাসনকে অবিহিত করি। পরে প্রশাসন ছাত্রলীগ সভাপতির বাড়ি থেকে আহতদের উদ্ধার করে।’
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘পুলিশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। পুলিশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে নিরপেক্ষ ভূমিকায় আছে। রাতে খবর পেয়ে পুলিশ পরিবেশ শান্ত করেছে। এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা রিটার্নিং ও নির্বাচন কর্মকর্তা শিরিনা আক্তার বানু বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণসহ কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।