প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা। আর এই সময়ে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটায় অযত্ন-অবহেলায়পড়ে থাকা খেজুরগাছের কদর বেড়ে যায় বহুগুণ। পিঠাপুলি ও সুস্বাদু গুড়ের প্রধান উপকরণ খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য এখন চরম ব্যস্ততা দেখা দিয়েছে এই এলাকার গাছিদের মধ্যে।
গাছিরা বর্তমানে খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এটিকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘গাছ তোলা’ বা গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা। এই প্রক্রিয়ায় গাছ পরিষ্কার করা হয়। প্রাথমিক পরিচর্যার এক সপ্তাহ পরই আবার গাছে চাঁছ দিয়ে নলি ও গুজা (রস সংগ্রহের যন্ত্রাংশ) লাগানো হবে।
পাটকেলঘাটার বিভিন্ন গ্রামে, বিশেষ করে রাস্তার পাশে এখন খেজুরগাছ তোলা ও চাঁছার দৃশ্য চোখে পড়ছে। এই রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হবে গুড় ও পাটালি তৈরির উৎসব।
খলিষখালীর বাগমারা গ্রামের গাছি আব্দুস সবুর জানান, তিনি অনেক বছর ধরে এই কাজ করে আসছেন। বর্তমানে শীত এলে রসের চাহিদা ভালো থাকে, তাই তাঁদের উপার্জনও ভালো হয়।
জুজখোলা গ্রামের মধু মোড়ল জানান, একটি গাছ তোলা থেকে রস সংগ্রহ পর্যন্ত গাছিকে ১৫০ টাকা দিতে হয়। বর্তমানে এক ভাঁড় রস ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়।
গাছি শওকাত আলী খাঁ ও সুরোত আলী জানান, এক ভাঁড় রস জ্বালানোর পর তাতে প্রায় এক কেজি গুড় বা পাটালি হয়, যার বাজারমূল্য ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
একদিকে যখন গাছিরা ব্যস্ত, অন্যদিকে তখন খেজুরবাগান কমে আসার দৃশ্য চোখে পড়ছে। এখন আর আগের মতো মাঠজুড়ে খেজুরবাগান দেখা যায় না। রস জ্বালানোর জন্য ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী ‘বান’-এর (চুলা) সংখ্যাও নিতান্তই কম। ফলে নলেন গুড় ও পাটালি পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে।
পাটকেলঘাটার খলিষখালী ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাব্বির হোসেন এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘ইট পোড়ানোর কাজে এলাকার খেজুরগাছ নিধন হচ্ছে। যার প্রভাব পরিবেশের ওপর পড়ছে। এ ব্যাপারে পরিবেশবিদদের সুদৃষ্টি কামনা করি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন জানান, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গাছিরা রস সংগ্রহের জন্য গাছের পরিচর্যা করছেন এবং রস সংগ্রহের জন্য নানান প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।