হোম > সারা দেশ > দিনাজপুর

বদলে যাওয়া গড়ুরগ্রাম

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর

ঘটনাটি ২০০২ সালের। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজ ও দিনাজপুর সরকারি কলেজের কয়েক বন্ধু। সবার বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। চলছিল ব্যাপক আড্ডা। সেই আড্ডাতেই পরিকল্পনা হয়েছিল গ্রামের শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা হবে। সে বছরই দিনাজপুরের বিরল উপজেলার গড়ুরগ্রামে যাত্রা শুরু করেছিল ‘গড়ুরগ্রাম ছাত্রকল্যাণ যুব সমবায় সমিতি লিমিটেড’। গত দুই দশকে প্রায় ৩০ জন যুবকের গড়ে তোলা সংগঠনটি ধীরে ধীরে বদলে দিয়েছে পুরো গ্রামের চিত্র। এখন সংগঠনটির সদস্য ৮২ জন।

এক আশ্চর্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও রাজনৈতিক সহাবস্থান আছে গড়ুরগ্রামে। গ্রামটিতে এখন চাকরিপ্রত্যাশী ছাড়া কোনো বেকার নেই। সক্ষম প্রতিটি যুবককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করা হয়েছে। সমিতি থেকে দেওয়া হয়েছে সুদহীন ঋণ। কেউ এখন আধুনিক কৃষক, কেউ বীজ উৎপাদনকারী, কেউ মৎস্যচাষি, কেউবা গরু ও হাঁস-মুরগির খামারি। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই হাঁস-মুরগির পাশাপাশি গরু-ছাগলের খামার আছে। বাড়িতে আছে ফলের গাছ অথবা শাকসবজির মাচান।

সমিতির সদস্যরা শুরুতে নিজেরাই মাসে জনপ্রতি ১০ টাকা করে সঞ্চয় শুরু করেন। নিজেদের জমানো সঞ্চয় থেকে অভাবী শিক্ষার্থীদের বই-খাতা-কলম, স্কুলের বেতন এমনকি ফরম পূরণের টাকাও দেওয়া হতো। পরবর্তীকালে বাড়তে থাকে কাজের পরিধি।

ছেলে নাহিদুর রহমান নাহিদকে ‘ভালো কাজ’ করতে দেখে বাবা হোসাইন সোহরাওয়ার্দী সমিতির নামে লিখে দেন ৩ শতাংশ জায়গা। সেখানে গড়ে তোলা হয় টিনশেড ভবন। বটগাছের নিচে সড়কের ওপর তৈরি হওয়া সেই টিনশেড ভবনই এখন গ্রামের সব ভালো কাজের কেন্দ্রবিন্দু। বিচার-সালিশ থেকে শুরু করে সভা-সমাবেশ, শিশুদের টিকাদান সবকিছুর ঠিকানা সবুজ টিনশেড ভবনটি।

এই সমিতির সদস্যদের প্রচেষ্টায় দূর হয়েছে নিরক্ষরতা ও বেকারত্ব। গ্রাম থেকে বিদায় নিয়েছে বাল্যবিবাহ, মাদকাসক্তি ও জুয়ার মতো সামাজিক ব্যাধি। এই গ্রামে কারও নামেই কোনো মামলা নেই।

গড়ুরগ্রাম ছাত্রকল্যাণ যুব সমবায় সমিতি এলাকার বেশ কয়েকটি খাস পুকুর লিজ নিয়ে মাছের চাষ করছে। স্থানীয় সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এলাকার ১২ কিলোমিটার সড়কে প্রায় ১১ হাজার গাছ লাগিয়ে সামাজিক বনায়ন করেছে। বেশ কয়েক বিঘা জমি লিজ নিয়ে সমিতিকে লভ্যাংশ দেওয়ার শর্তে বর্গা দেওয়া হয়েছে জমির মালিককেই। 
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার হাত। তাঁর আর্থিক সহযোগিতায় সমিতির নিজস্ব জায়গায় নির্মিত হয়েছে নতুন ভবন। 
গড়ুরগ্রাম ছাত্রকল্যাণ যুব সমবায় সমিতির সদস্যরা নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকলেও সংগঠনের প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ। সামাজিক কাজে তৎপরতার কারণে সমিতিটি বেশ কয়েকবার জেলায় শ্রেষ্ঠ হয়েছে। পাশাপাশি ২০২১ সালে জিতে নিয়েছে শেখ হাসিনা ভলান্টিয়ার জাতীয় যুব পদক। সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু রাসেল হুদা ২০২২ সালে নেতৃত্বের বিকাশ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অবদানের জন্য পেয়েছেন জাতীয় যুব পুরস্কার।

প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাহিদুর রহমান নাহিদ জানিয়েছেন, একটা দারুণ প্রজন্ম পেয়েছিলেন তাঁরা। যাঁদের সবাই ছিলেন শিক্ষিত এবং পরোপকারী।

সাধারণ সম্পাদক কলেজশিক্ষক আবু রাসেল হুদা জানিয়েছেন, ছাত্রদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত হলেও ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে পরবর্তীকালে সামাজিক কল্যাণ ও সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমিতিটি এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

সেতুর দাবি: চাষির ফসলের ন্যায্যমূল্য আটকা ইছামতীতে

জৌলুশ হারিয়ে ক্রেতাশূন্য মন্ত্রী মার্কেট, দোকান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

হাদির ওপর হামলা: জড়িতদের দেশত্যাগ ঠেকাতে ফুলবাড়ী সীমান্তে নজরদারি জোরদার

হাদিকে গুলি: জড়িতদের দেশত্যাগ ঠেকাতে হিলি সীমান্তে সতর্কতা জারি

নিজ ঘরে রক্তাক্ত লাশ

দিনাজপুরে তিন অবৈধ ইটভাটায় অভিযান

নির্বাচনকে সামনে রেখে হিলি সীমান্তে টহল জোরদার বিজিবির

কৃষকের ঘরে ১২ ফুট লম্বা গাঁজার গাছ, আটক

চিরিরবন্দরে বাসচাপায় দুই নারী ভ্যানযাত্রী নিহত