দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় দুই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে একটি ভুয়া এনজিও। গতকাল রোববার ঋণ নিতে গিয়ে এনজিও অফিসে তালা ঝোলানো দেখে মাথায় হাত পড়েছে গ্রাহকদের। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা জানান, বিনা সুদে ঋণ পাওয়ার আশ্বাসে আইডিএফএন সংস্থা নামে একটি এনজিওকে টাকা দিয়েছিলেন তাঁরা।
ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা জানান, গত বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এনজিওর লোকজন সুদবিহীন ঋণ ও ৪০ প্রকারের কাজ দেওয়ার কথা বলে সদস্য সংগ্রহ করেন। এরপর সদস্য ভর্তি ফি বাবদ ২৫০ এবং সঞ্চয় বাবদ প্রতিজনের কাছ থেকে ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন তাঁরা। গতকাল ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। এদিন বেলা ৩টায় উপজেলার সাতকুড়ি এলাকায় এনজিও অফিসটিতে ঋণ নিতে এসে তালা ঝোলানো দেখেন তাঁরা। পরে কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে নম্বর বন্ধ পান। প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রায় ৮৯ জন গ্রাহক থানায় অভিযোগ করেছেন।
হাকিমপুর উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের সাদুরিয়া গ্রামের ভুক্তভোগী মালেকা বিবি (৪৭) নামের একজন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় গিয়ে এনজিওর কর্মকর্তারা বলেন, সুদবিহীন ঋণ দেবেন এবং ৪০ ধরনের কাজ শেখাবেন। সেজন্য সদস্য দরকার। পরে আমি নিজেই সদস্য হই এবং ধারদেনা করে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে এসে তাঁদেরকে দেই। তাঁরা আজকে (রোববার) ঋণ দেবেন বলে অফিসে আসতে বলেছিলেন। দুপুরে এসে দেখি অফিসে তালা ঝোলানো। ফোন দিলে নম্বর বন্ধ দেখায়। আমরা তো গরিব মানুষ, কী হবে এখন।’
ভুক্তভোগী আরও কয়েকজন বলেন, ‘আমাদেরকে ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে এনজিও টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমরা এখন অসহায়। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, আমাদের টাকা যেন উদ্ধার করা হয়।’
বাড়িভাড়া নিয়েও প্রতারণা
বাড়ির মালিক রিয়াজুল বলেন, ‘৪ সেপ্টেম্বর আমার কাছে দুজন এসে অফিস ভাড়া চান। আমি তাঁদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে চাইলে তাঁরা বলেন, তাঁদের এরিয়া ম্যানেজার স্যার এসে চুক্তিনামা করবেন—এ কথা বলে তাঁরা রুমে ওঠেন। আজ আমার সঙ্গে তাঁদের ভাড়ার চুক্তিনামা হওয়ার কথা; কিন্তু সকাল থেকে ফোন দিচ্ছি, তা বন্ধ দেখাচ্ছে। পরে এসে দেখি রুমে তালা লাগানো।’
হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, গতকাল বিকেলে প্রতারিত হওয়া কিছু মানুষ থানায় এসে একটি এনজিওর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের উপজেলায় যেসব এনজিও আছে, তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে এবং নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে কোথাও যদি ভুয়া এনজিও থাকে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’