হোম > সারা দেশ > দিনাজপুর

চিকিৎসার জন্য সন্তান বিক্রি: অবশেষে ‘নাগরিকত্ব’ পেলেন আব্দুর রশিদ, চিকিৎসার দায়িত্ব নিল প্রশাসন

ফাহিম হাসান, পঞ্চগড়

ছাত্র–জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ স্বামীর চিকিৎসা করাতে সন্তান বিক্রি করে দিয়েছিলেন এক নারী। সেই টাকাও ফুরিয়ে যায়। নাগরিকত্বের কোনো সনদ না থাকায় সরকারি সহায়তাও পাচ্ছিলেন না। অবশেষে উপজেলা প্রশাসন সেই দম্পতির দায়–দায়িত্ব নিয়েছে।

দিনাজপুরে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হন দিনমজুর আব্দুর রশিদ (৩০)। স্বামীর চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে না পেরে মাত্র ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ৩ দিনের নবজাতক কন্যাকে বিক্রি করে দেন আব্দুর রশিদের স্ত্রী রত্না।

সন্তান বিক্রি করা টাকা দিয়ে আবার শুরু করেন চিকিৎসা। কিন্তু সেই টাকাও শেষ হয়ে যায় খুব দ্রুত। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সনদ (জন্ম সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র) না থাকায় কোনো সাহায্য সংস্থা বা সরকারি আর্থিক সহায়তাও পাননি।

অবশেষে আব্দুর রশিদের ঘটনাটি জানতে পেরে নাগরিকত্ব দেওয়াসহ চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন।

গতকাল রোববার দিবাগত রাতে আব্দুর রশিদকে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে ভর্তি করান তেঁতুলিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি। আব্দুর রশিদের শরীরে এখনো গুলি রয়েছে, এ ছাড়া আগের অপারেশন থেকে তিনি এখনো আশঙ্কামুক্ত নন। শারীরিকভাবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তিনি উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবেন। যদি প্রয়োজন হয়, আরও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সব ব্যয়ভার নিজেই বহন করবেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট গর্ভবর্তী স্ত্রীকে নিয়ে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার সময় হাসপাতালের গেটে পুলিশের গুলিতে আহত হন আব্দুর রশিদ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজনের সহায়তায় চিকিৎসা নিয়ে কোনো রকমে বেঁচে ফেরেন তিনি। অর্থাভাব ও স্ত্রীর বাচ্চা প্রসবের সময় যখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন শারীরিক অবস্থান অবনতি হতে থাকে। গত ৮ আগস্ট দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি এবং সেখানে ৯ আগস্ট আব্দুর রশিদের অপারেশন হয়। পরের দিন ১০ আগস্ট আব্দুর রশিদের স্ত্রী রোকেয়া বেগম এক কন্যা সন্তানের প্রসব করেন।

স্বামীর শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসা। স্বামীর জীবন বাঁচাতে উপায়ন্তর না পেয়ে মাত্র ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ৩ দিনের নবজাতক কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দেন আব্দুর রশিদের স্ত্রী রত্না। ঘটনাটি জানাজানি হলে, দ্রুততার সঙ্গে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিক্রীত সন্তান ফেরত পেয়েছেন আব্দুর রশিদ দম্পতি।

দিনাজপুর সদর উপজেলার ইউএনও ফয়সাল রায়হান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জানার হওয়ার পরেই দ্রুত বাচ্চাটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি।’

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আব্দুর রশিদের বাড়ি তেঁতুলিয়া উপজেলা ভজনপুর ইউনিয়নের মালিগছ গ্রামে। আব্দুল রশিদের মা (রশিদা বেগম) প্রায় ১০ বছর আগে মারা গেছেন। বাবা নজরুল ইসলাম দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। বিভিন্ন বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায় একসময় ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান আব্দুর রশিদ। পরে দিনাজপুর জেলার রাজবাড়ী এলাকায় দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালাতেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আব্দুর রশিদের জন্মসনদ বা নাগরিকত্ব সনদ না থাকায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে তাৎক্ষণিকভাবে জটিলতা নিরসনের উদ্যোগ নেন তেঁতুলিয়ার ইউএনও। গুলিবিদ্ধ, আহত ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়া আব্দুর রশিদের স্থায়ী ঠিকানা উদ্ধারের জন্য তাঁর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বিভিন্ন প্রচেষ্টায় জানা যায়, তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের মালিগছ এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে এই আব্দুর রশিদ। তবে কয়েক বছর ধরে দিনাজপুর জেলা শহরের রাজবাড়ী এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী–সন্তান নিয়ে থাকছেন ট্রাক্টর শ্রমিক আব্দুর রশিদ।

আব্দুর রশিদ বলেন, আমি ছোটবেলায় মাকে হারিয়ে পারিবারিক ঝামেলা ও বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কারণে পরিচয়পত্র বা জন্মসনদ নিতে পারিনি। আমার চিকিৎসার জন্য আমার স্ত্রী সন্তানকে বিক্রি করেছিল। কিন্তু নাগরিক না হওয়ায় কোনো সহযোগিতা পাই না। আমার শরীরে এখনো চারটা গুলি আছে। পরিচয় না থাকায় সবাই আমার চিকিৎসা করতে ভয় পায়। বিষয়টি ফোনে ইউএনও স্যারকে জানালে, নিজে পরিষদে এসে আমার সব কথা শোনেন। পরে আমার পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা নিজে বসে থেকে করেন এবং আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করান।

আব্দুর রশিদ বলেন, নতুন বাংলাদেশের নাগরিক হতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত। যদিও দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমি এখনো দেখতে পারিনি, হাসপাতালের চার দেয়ালের কারণে। আমি চাই দেশটা ভালো চলুক। দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক।

তেঁতুলিয়ার ইউএনও ফজলে রাব্বি বলেন, গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত আব্দুর রশিদের পরিচয়হীনতা, স্বামীর চিকিৎসার জন্য তাঁর স্ত্রীর সন্তান বিক্রির মতো মর্মান্তিক ঘটনা জানার পর আমি এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর শরীরে এখনো গুলি রয়েছে। এ ছাড়া আগের অপারেশন থেকে তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন। শারীরিকভাবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তিনি উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবেন। যদি প্রয়োজন হয়, তবে ঊর্ধ্বতন নির্দেশনা অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বলেন, আব্দুর রশিদের স্থানীয় আইডেনটিটি আছে তাই তাঁকে জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ চলছে। আন্দোলনে যারা শহীদ এবং আহত হয়েছেন তাঁদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। আমরা আব্দুর রশিদের নামও ওই তালিকায় পাঠিয়েছি। তাঁর সার্বিক তত্ত্বাবধান করছে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন।

দিনাজপুর জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

সেতুর দাবি: চাষির ফসলের ন্যায্যমূল্য আটকা ইছামতীতে

জৌলুশ হারিয়ে ক্রেতাশূন্য মন্ত্রী মার্কেট, দোকান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

হাদির ওপর হামলা: জড়িতদের দেশত্যাগ ঠেকাতে ফুলবাড়ী সীমান্তে নজরদারি জোরদার

হাদিকে গুলি: জড়িতদের দেশত্যাগ ঠেকাতে হিলি সীমান্তে সতর্কতা জারি

নিজ ঘরে রক্তাক্ত লাশ

দিনাজপুরে তিন অবৈধ ইটভাটায় অভিযান

নির্বাচনকে সামনে রেখে হিলি সীমান্তে টহল জোরদার বিজিবির

কৃষকের ঘরে ১২ ফুট লম্বা গাঁজার গাছ, আটক