আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে আলোচিত আসন বরিশাল-৫ (নগর ও সদর)। এ আসনে বিএনপির প্রাথমিকভাবে মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। তাই দীর্ঘ বছরের দূরত্ব থাকা নেতা-কর্মীদের কাছে টানতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন তিনি। ২০২১ সাল থেকে নগরের পদ হারিয়ে স্থানীয় বিএনপিতে কোণঠাসা ছিলেন সরোয়ার। ভোটের মাঠে এখন ঘর গোছানোর চিন্তার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সামলানো সরোয়ারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ আসনে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম দলীয় প্রার্থী। অপর দিকে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল বরিশাল-৫ আসনের প্রার্থী। আসনভিত্তিক সমঝোতা হলে ফয়জুল ও হেলালের মধ্যে কোনো একজন হবে সরোয়ারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী; এমনটাই গুঞ্জন সর্বত্র।
শ্রমিক দলের নেতা থেকে আব্দুর রহমান বিশ্বাসের হাত ধরে রাজনীতিতে উঠে আসেন মজিবর রহমান সরোয়ার। এরপর একে একে বরিশাল-৫ আসনের এমপি, হুইপ, এমনকি সিটি মেয়রের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। জানা গেছে, সরোয়ার গত চার বছর কোণঠাসা ছিলেন। স্থানীয় বিএনপি এই চার বছরে কোনো কর্মসূচিতে ডাকত না তাঁকে। দলের মনোনয়ন পেয়ে এবার ঘুরে দাঁড়াতে চান সরোয়ার। বিরোধ থাকা নেতাদের ডেকে দফায় দফায় বৈঠক করছেন।
সরোয়ার অনুসারী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক হোসেন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সব গ্রুপকে ডেকে সমন্বয় সভা করেছেন সরোয়ার ভাই। অতীতের ক্ষত তুললে সমাধান হয় না। নগর সভাপতি ফারুক ভাই তুলেছিলেন, আমরা বলেছি পেছনে আর নয়।’ তিনি বলেন, ‘এটা শুধু বিএনপির ঘাঁটি নয়, এটা অ্যান্টি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। ১০ দল জোট করলেও বরিশাল-৫ আসনে সরোয়ারকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।’ দলের মধ্যে চার বছরের অবিশ্বাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিছু লোকজন মোনাফেকি করতে পারে। তবে বিএনপির নেতা-কর্মীর মধ্যে সরোয়ার ভাইয়ের প্রতি আস্থার ঘাটতি নেই।’
এদিকে গোটা নগরী ও সদর উপজেলায় ব্যাপক ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন হাতপাখা ও দাঁড়িপাল্লার অনুসারীরা। চরমোনাই পীরের বাড়ি হওয়ায় অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
দলটির মিডিয়া উপকমিটির আহ্বায়ক ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে বরিশাল-৫ আসনে হাতপাখার প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। তা ছাড়া এই বরিশালে পীরের বাড়ি। তিনি দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা। যে কারণে জোটে ঝামেলা হবে না। আমরা মনে করি, এটা ইসলামী আন্দোলনের রাজধানী। বর্তমান প্রেক্ষাপটে হাতপাখার সদর ও নগরে ভোট বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ফয়জুল করীমের জাতীয় ও সিটি নির্বাচনে অভিজ্ঞতা থাকায় আমরা প্রতিপক্ষকে ছেড়ে দেব না।’
বরিশাল মহানগর জামায়াতের আমির জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক বছর আগে আমাদের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা নির্বাচনের জন্য অ্যাডভোকেট হেলালকে নিয়ে কাজ করছি। তবে কেন্দ্র ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিলে সেভাবে এগিয়ে যাব। দেশের স্বার্থে আসন সমঝোতা হবে।’ চারবারের এমপি সরোয়ারের সঙ্গে ভোটে মোকাবিলা কীভাবে করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক বাবর বলেন, ‘মানুষ নতুন কিছু চায়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশাবাদী। কারণ সারা দেশে তেমনটাই সাড়া পাচ্ছি। আমরা বহুদিন নির্বাচনে ছিলাম না। তারপরও ডোর টু ডোর যাচ্ছি। হেলাল ভাইয়ের সমর্থনে সাড়াও পাচ্ছি।’
তবে নগর বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘দলের আহ্বানে ধানের শীষের প্রার্থী সরোয়ারের সঙ্গে আমরা মাঠে নেমেছি। কোন কোন দল এক হয়ে জোট করল, সেটা দেখার বিষয় না। বরিশাল বিএনপির ঘাঁটি। ফেয়ার নির্বাচন হলে ধানের শীষ জিতবে।’
এ প্রসঙ্গে বরিশাল-৫ আসনের এমপি প্রার্থী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ইসলামী দলগুলো একটা বাক্সে ভোট দেব। সে অনুযায়ী আসনভিত্তিক সমঝোতা প্রক্রিয়াধীন।’ তিনি বলেন, ‘এটা ইসলামী আন্দোলনের আমিরের বাড়ি। যে কারণে বরিশালে হাতপাখার অনেক ভোট।’ সরোয়ার প্রসঙ্গে বলেন, ‘তিনি শক্ত প্রার্থী না হলে কেমনে হবে। আমরাও তো শক্ত প্রার্থীই চাই। আমি ২০০৮, ২০১৮, ২০২১ সালে এ আসনে প্রার্থী ছিলাম। জনগণের মোটিভ ঘুরে গেছে, চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। যদি জনগণ চায়, তাহলে এ আসন থেকেই নির্বাচনে অংশ নেব।’
বরিশাল-৫ আসনের এমপি প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুয়াযযম হোসাইন হেলাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। রাজনীতির ময়দানে কী কথা হচ্ছে, তা সবাই জানে। নির্বাচন এলে অনেক কিছু জানা যাবে। আসনভিত্তিক জোট হয় কি না, তাও দেখবে জনগণ।’ তিনি সরোয়ার প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরোয়ার ভাই কিংবা যে কেউ প্রার্থী হলে আমরা তাঁকে অভিনন্দন জানাই। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে দেখা যাবে ফল কী হবে।’
এ ব্যাপারে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেস্টা ও বরিশাল-৫ আসনের এমপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবেই। হাতপাখা আর দাঁড়িপাল্লা হয়তো জোট করবে। এ আসনে মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণ করেছি আমি। জনগণ তাই ধানের শীষে ভোট দিতে উন্মুখ।’ তিনি বলেন, মহানগরে ধানের শীষের ভোট বেশি। সদর উপজেলায় চরমোনাই পীরের বাড়ি হলেও সব সময় ধানের শীষ বেশি ভোট পেয়েছে।