বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ছাত্র সংসদের নাম বাকসু রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে। কেননা বিএম কলেজ ছাত্র সংসদ বাকসু নামে প্রতিষ্ঠিত ১৯৫২ সালে। তাই বাকসু রক্ষার দাবি জানিয়েছেন বিএম কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা। শনিবার সংবাদ সম্মেলন ও অধ্যক্ষের সঙ্গে সভা করেছেন বাকসুর সাবেক ছাত্রনেতারা।
সভায় বাকসুর নাম কেবল বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের উল্লেখ করে তা বজায় রাখার জন্য ববি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ‘বাকসু’ নাম বিএম কলেজের ঐতিহ্য উল্লেখ করেছেন বাকসুর সাবেক জিএস আলী আজগর ফকির।
আলী আজগর ফকির বলেন, ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ছাত্র সংসদ দক্ষিণ বাংলার গণ-আন্দোলনের অন্যতম পথপ্রদর্শক ছিল। বরিশাল বিভাগ ঘোষণা, পদ্মা সেতু নির্মাণের দাবি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ বহু গণমুখী আন্দোলনের সূচনা হয়েছে বাকসুর হাত ধরে।
আলী আজগর ফকির আরও বলেন, বাকসু নামটি এখন শুধু একটি সংগঠনের নাম নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক পরিচয়, রাজনৈতিক ধারা ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। অথচ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ছাত্র সংসদের জন্য একই নাম প্রস্তাব করে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনার সৃষ্টি করছে।
আলী আজগর ফকির উদাহরণ টেনে বলেন, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সংক্ষিপ্ত নাম জাকসু, আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জকসু রাখা হয়েছে, যাতে কোনো বিভ্রান্তি না থাকে। একইভাবে ব্রজমোহন কলেজের ‘বাকসু’ নামের স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়েরও আলাদা নাম নির্ধারণ করা উচিত।
আলী আজগর ফকির আইনি দিক তুলে ধরে বলেন, কোনো নাম যদি দীর্ঘকাল ধরে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকে সমাজে স্বীকৃতি পায়, তবে তা প্রথাগত অধিকারের আওতাভুক্ত হয়। ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক স্বীকৃতি ও দীর্ঘদিনের ব্যবহার—এই চারটি মানদণ্ডে ‘বাকসু’ নামের আইনি ও নৈতিক অধিকার বিএম কলেজের।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাকসুর সাবেক এজিএস মনজুরুল হক জিসান, আবু জফর বাদল, সাবেক ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিল্টন, সাবেক ম্যাগাজিন সম্পাদক নাজমুল হাসান ছগির প্রমুখ।
সাবেক বাকসু নেতা ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ববির ছাত্র সংসদে বাকসু ব্যবহার হলে কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ববির খসড়া গঠনতন্ত্রে বাংলায় ‘বাকসু’ শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। তাঁরা উল্লেখ করেছেন, বরিশাল ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। তবে আলোচনা করলে যে কেউ করতে পারেন।
উল্লেখ্য, ‘বাকসু নিয়ে টানাটানিতে ববি ও বিএম কলেজ’ শিরোনামে গত ২৬ অক্টোবর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।