ছয় ডিনের পদত্যাগের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ সব দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সভা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে তালাবদ্ধের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ এ সভায় বসেন।
তবে রাতে আরও একটি সভা হবে বলে জানিয়েছেন জনসংযোগ দপ্তর প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেছি, তারা তাদের কথা জানিয়েছে। কিন্তু সেখানে সকলের সম্মতিতে এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বিষয়ে ৭টার দিকে আরেকটা সভা ডাকা হয়েছে।’
সূত্রে জানা গেছে, সময়সীমা অনুযায়ী ১৭ ডিসেম্বর ডিনদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ড. ইফতেখারুল আলম মাসুদ ও উপাচার্য ড. সালেহ হাসান নকীবের সিদ্ধান্তে তাঁদের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে তাঁদের পদত্যাগের দাবি তোলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার।
সকাল ১০টার দিকে এই দাবিতে ডিনস কমপ্লেক্সে যায় শিক্ষার্থীদের একাংশ। পরে ডিনস কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ভবনে অবস্থিত ওই ডিনদের চেম্বারে তালা দেন তাঁরা। যদিও এ দিন ডিনদের কেউ বিভাগের ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন না।
বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার দপ্তরে এসে তাঁদের দাবি জানান। এ সময় শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল দাবি আদায়ের আগে রেজিস্ট্রার ভবন ত্যাগ না করার ঘোষণা দেন। পরে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দেন।
একপর্যায়ে উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) সঙ্গে শিক্ষার্থীরা বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান এবং তালা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় উপ-উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘এটা কি নতুন বাংলাদেশ! আমরা কি আন্দোলন করিনি, শুধু তোমরাই করেছ? কী পেয়েছ?’
প্রায় আধা ঘণ্টা তালাবদ্ধ থাকার পর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে খুলে দেওয়া হয়। পরে উপাচার্য কনফারেন্স কক্ষে এক সভায় বসেন তাঁরা।
সভায় রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আপনারা আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। আমরা প্রতিদিন তালা দিতে আসতে পারব না। আপনারা যেটাকে মব বলেন, অবশ্যই এটা আমাদের কাছে আন্দোলন। ডিনদের তো অপসারণ করতেই হবে। এই ১৭ তারিখের পর দায়িত্বে বহাল থাকার সাহস তারা প্রশাসন থেকেই পেয়েছে।’
উপ-উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন (শিক্ষা) বলেন, ‘তাদের এখনো দায়িত্বে রাখা হয়েছে, কারণ, সমাবর্তনের কারণে আমরা নির্বাচন করতে পারি নাই। আবার একই সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষাও শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে বিষয়টা এত দূর না নিয়ে আসলেও পারত। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আগেই ডেকেছি, সুতরাং, সিদ্ধান্ত হয়েই আছে তাদের বিষয়ে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপ-উপাচার্য বলেন, ‘তোমরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সুতরাং, দেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিক। তোমাদের শব্দ চয়ন ও কার্যক্রমও তেমন হওয়া উচিত।’
উপ-উপাচার্য মাঈন উদ্দিন (প্রশাসন) বলেন, ‘বিপ্লবীদের ঐক্য জাতির জন্য সুফল বয়ে নিয়ে আসবে, একইভাবে বিপ্লবীদের বিভাজন জাতিকে অনিরাপদ করে তুলবে। আমাদের ক্যাম্পাসের বিপ্লবীরাও নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আগেও আমরা দেখেছি, নির্বাচন না হওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা সময় শেষের পরেও দায়িত্বে পূর্ণ বহাল ছিল। এটা অনেক আগে থেকেই ঘটে আসছে। আমাদেরও ব্যর্থতা আছে।’