হোম > বিশ্লেষণ

সুদানের বিপুল তেল, সোনা ও কৃষিসম্পদ কার নিয়ন্ত্রণে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

সুদান আফ্রিকার শীর্ষ সোনা উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। ছবি: সংগৃহীত

আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশ সুদান, আয়তন ১৯ লাখ বর্গকিলোমিটার। তৃতীয় বছরে গড়ানো সুদানের বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধ দেশটির সেনাবাহিনী (এসএএফ) ও আধা সামরিক র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে ক্ষমতার দখল যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। এই সংঘাত বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতি সংকট সৃষ্টি করেছে। সুদানের ১৮টি অঙ্গরাজ্যজুড়ে ৯৫ লাখের বেশি মানুষ এখন গৃহহীন এবং লাখো মানুষ অনাহারে।

তেল, সোনা ও বিস্তীর্ণ কৃষিজমিসহ বিপুল সম্পদের অধিকারী সুদান। কিন্তু যুদ্ধ ও নিয়ন্ত্রণের পালাবদল এসব সম্পদকে দেশের মানুষের কাছে কার্যত অপ্রাপ্য করে তুলেছে।

সুদানের কোন সম্পদ কোথায় আছে এবং বর্তমানে কার দখলে—তার পূর্ণ চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো।

সুদানে কে কোথায় নিয়ন্ত্রণ করে

সুদানের উত্তরের বৃহৎ অংশ, পূর্বাঞ্চল, রাজধানী খার্তুম এবং নীল নদের তীরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোসহ লোহিত সাগরের বন্দর নগরী পোর্ট সুদান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে, আরএসএফ পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুরকে শক্তভাবে দখলে নিয়েছে। গত ২৬ অক্টোবর তারা উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করে নেয়, যা তারা প্রায় ১৮ মাস ধরে অবরোধ করে রেখেছিল।

সুদানের প্রধান রপ্তানি পণ্য কী

তেল, সোনা এবং কৃষিজ পণ্য—এই তিন সেক্টর রপ্তানিতে শীর্ষে। ২০২৩ সালে সুদানের রপ্তানি আয় ছিল ৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে—অপরিশোধিত তেল ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার, সোনা ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, প্রাণিজ পণ্য ৯০২ মিলিয়ন ডলার, তেলবীজ ৭০৯ মিলিয়ন ডলার (এর মধ্যে ৬১৩ মিলিয়ন ডলার ছিল তিল) ও গাম অ্যারাবিক (আকাশিয়া নামে একধরনের গাছের আঠা) ১৪১ মিলিয়ন ডলার।

সুদান বিশ্বের সবচেয়ে বড় তিল রপ্তানিকারক এবং সবচেয়ে বড় গাম অ্যারাবিক সরবরাহকারী। প্রসঙ্গত, গাম অ্যারাবিক একধরনের গাছের আঠা, যা খাদ্য-পানীয়, ওষুধ, সাপ্লিমেন্ট ও কসমেটিক শিল্পে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়।

সুদানের কৃষিসম্পদ কার দখলে

সুদানের ভৌগোলিক অবস্থান নীল নদকে কেন্দ্র করে। প্রতিবছর নদীর প্লাবনে বিস্তীর্ণ এলাকা উর্বর হয়। খার্তুমে সাদা নীল ও নীল নদের মিলনস্থল থেকে উত্তর দিকে বিস্তৃত হয়ে নীল নদ মিসরের দিকে প্রবাহিত হয়েছে।

দেশের মোট ভূমির প্রায় ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ চরাঞ্চল (রেঞ্জল্যান্ড)। এই অঞ্চলটি গবাদিপশু ও পশুসম্পদে সমৃদ্ধ। বর্তমানে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে প্রায় সমান ভাগে বিভক্ত।

উত্তরের চরাঞ্চলেই রয়েছে বিখ্যাত গাম অ্যারাবিক বেল্ট, যেখানে আকাশিয়াগাছ থেকে মূল্যবান গাম অ্যারাবিক সংগ্রহ করা হয়। অন্যদিকে, চাষযোগ্য জমির বড় অংশ নীল নদের দুটি প্রধান উপনদীর ব্লু নাইল ও হোয়াইট নাইলের মাঝামাঝি গেজিরা অঞ্চলে—যা সুদানের সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে।

সুদানের তেল কার দখলে

সুদানের আয়ের প্রধান উৎস অপরিশোধিত তেল। ২০০১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দৈনিক উৎপাদন দুই লাখ ব্যারেল থেকে বেড়ে পাঁচ লাখ ব্যারেলের কাছাকাছি পৌঁছে। ২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান স্বাধীন হওয়ার পর সুদানের ৭৫ শতাংশ তেলক্ষেত্র দক্ষিণে চলে যাওয়ায় উৎপাদন ভেঙে পড়ে। ২০২৩ সালে তেল উৎপাদন কমে দাঁড়ায় দৈনিক মাত্র ৭০ হাজার ব্যারেল।

২০২৪ সালের হিসাবে সুদানের কাছে—১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ব্যারেল তেল রিজার্ভ আছে। তিন ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস রিজার্ভ আছে। তবে দেশটি গ্যাস উৎপাদন বা ব্যবহার করে না।

বেশির ভাগ তেলক্ষেত্র দক্ষিণাঞ্চলে দক্ষিণ সুদানের সীমান্তের কাছে এবং বর্তমানে এর বড় অংশই আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে।

সুদানের তেলশিল্পে পাঁচটি শোধনাগার রয়েছে—কেন্দ্রীয় ও উত্তরাঞ্চলে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় খার্তুম শোধনাগার (এক লাখ ব্যারেল/দৈনিক ক্ষমতা) সেনাবাহিনীর দখলে। সেনাবাহিনী পোর্ট সুদান শোধনাগারও নিয়ন্ত্রণ করে।

দক্ষিণাঞ্চল থেকে পোর্ট সুদানের দক্ষিণে বাশায়ের এক্সপোর্ট টার্মিনাল পর্যন্ত তেল পাইপলাইন—যা সুদান ও দক্ষিণ সুদানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটির বেশির ভাগ অংশই সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

সুদানের সোনা কার হাতে

সুদান আফ্রিকার শীর্ষ সোনা উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। সোনা প্রধানত সুদানের উত্তরে, কেন্দ্রে এবং দক্ষিণাঞ্চলে পাওয়া যায়। এর মধ্যে পূর্ব সুদানের বেশির ভাগ সোনার খনি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। আর কেন্দ্র ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সোনা আরএসএফের দখলে।

সুদানের সোনার বড় অংশই ক্ষুদ্র বা কারিগরি খনিতে উৎপাদিত হয়। হাজারো মানুষের জীবিকার উৎস এই খাত, তবে এটি সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সোনা উভয় পক্ষের অন্যতম প্রধান অর্থের উৎসে পরিণত হয়েছে।

২০২৪ সালে সুদানে বৈধ সোনার উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৬৪ টন, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৫৩ শতাংশ বেশি। বৈধ রপ্তানি থেকে আয় হয় ১ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। তবে কালো বাজারে আরও বড় অঙ্কের বেচাকেনা চলছে। ২০২৩ সালে সুদানের সোনার ৯৯ শতাংশের বেশি রপ্তানি গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

সুদানের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার কারা

সুদানের প্রায় ৮০ শতাংশ রপ্তানি এশিয়ায়, তারপর ইউরোপে ১১ শতাংশ এবং আফ্রিকায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে সুদানের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। সুদান সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের (মোট রপ্তানির ২১ শতাংশ) পণ্য রপ্তানি করে, যার বেশির ভাগই ছিল সোনা।

সুদানের কৃষিজ পণ্যের প্রধান ক্রেতা চীন, প্রায় ৮৮২ মিলিয়ন ডলার (মোট রপ্তানির ১৭ শতাংশ)। সৌদি আরবে ৮০২ মিলিয়ন ডলার (মোট রপ্তানির ১৬ শতাংশ), বেশির ভাগই গবাদিপশু। মালয়েশিয়ায় ৪৭০ মিলিয়ন ডলার (মোট রপ্তানির ৯ শতাংশ), মূল পণ্য তেল এবং মিশরে ৩৮৭ মিলিয়ন ডলার (মোট রপ্তানির ৭.৬ শতাংশ)। মূলত এই পাঁচ দেশেই সুদানের মোট রপ্তানির দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি যায়।

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

ইরান ও ইসরায়েলে সমানতালে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি

পাকিস্তানকে এফ-১৬ আধুনিকীকরণের প্যাকেজ, ভারতকে কী বার্তা দিতে চান ট্রাম্প

ডার্ক ফ্লিট: নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেভাবে চলে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পাচার

এআই চাকরি কেড়ে নিচ্ছে আমেরিকায়, কিন্তু নিয়োগ বাড়াচ্ছে ভারতে—কীভাবে

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ না সম্ভাবনা

শত বছর আগে জাপানের কাছে হারের বদলা চান সি চিন পিং!