হোম > বিশ্লেষণ

যুদ্ধের ময়দান থেকে ইউক্রেনের নতুন সেনাপ্রধান, কে এই সিরস্কি

ইউক্রেনের নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে ৮ ফেব্রুয়ারি ওলেকসন্দার সিরস্কিকে নিয়োগ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। এর আগে প্রায় দুই বছর ধরে ইউক্রেনের সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করা জেনারেল ভ্যালরি জালুঝনিকে অব্যাহতি দেন তিনি। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝখানে হঠাৎ করে সেনাপ্রধান বদলের ঘটনাটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

জানা গেছে, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় বিগত পুরোটা সময় জালুঝনি যখন ইউক্রেনের সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন, সিরস্কি তখন সম্মুখ সমরে দেশটির স্থলবাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। 

গত বছরের জুনে সিরস্কির বিষয়ে দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, জালুঝনি সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও ইউক্রেনের ভাগ্য যার কাঁধে ছিল তিনিই সিরস্কি। 

জেনারেল সিরস্কির জন্ম ১৯৬৫ সালে ভ্লাদিমিরে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের এই অঞ্চলটি বর্তমানে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত। ১৯৮০-এর দশকে ইউক্রেনে বসবাস শুরু করেছিলেন সিরস্কি। তাঁর বয়সী সশস্ত্র বাহিনীর অন্যদের ক্ষেত্রে যেমনটি ঘটেছিল—রাশিয়ার মস্কোতে অবস্থিত হাইয়ার মিলিটারি কমান্ড স্কুলে তিনিও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেওয়া অনেকেই এখন রুশ বাহিনীতে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০১৯ সালে ইউক্রেনের স্থলবাহিনীর নেতৃত্ব নেওয়ার আগে দেশটির পূর্বাঞ্চলে নিয়োজিত স্থলবাহিনীর অপারেশন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সিরস্কি। ওই দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালে রুশ বাহিনী ক্রিমিয়া আগ্রাসন প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। সে সময় রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য প্রতিরক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে ‘অর্ডার অব বোদান খমেলনিটস্কি’ সামরিক খেতাবে ভূষিত করা হয়েছিল। 

সহকর্মীরা জেনারেল সিরস্কিকে প্রায় সময়ই একজন কঠোর অধ্যবসায়ী এবং জিমপাগল ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন। আর সারাক্ষণই সামরিক পরিকল্পনায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকেন তিনি। 

পশ্চিমা বিশেষজ্ঞেরা বলে থাকেন—একসময় সোভিয়েত প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রতিফলন দেখা যায় সিরস্কির যুদ্ধ কৌশলে। তবে তাঁর অপারেশন প্রক্রিয়া রাশিয়ার জেনারেলদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। তিনি ‘হাইব্রিড যুদ্ধের’ গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং নিজের সেনাদের মনোবলকে অগ্রাধিকার দেন। এ জন্য তিনি প্রতিদিনই শত শত সৈন্যের বার্তা পড়েন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়মিত তাঁদের পরিদর্শন করেন। সেনাবাহিনীর আত্মাকে অনুভব করার জন্য প্রায় সময়ই সেনাদের পরামর্শ দেন তিনি।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া হামলা শুরু করার পর ইউক্রেনের বেশ কিছু সাফল্যের জন্য সিরস্কিকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। যুদ্ধের শুরুতে ভ্লাদিমির পুতিনের সৈন্যরা ইউক্রেন সীমান্তে জড়ো হলে সিরস্কি সীমান্তের কাছাকাছি থাকা ঘাঁটিগুলোর ভারী অস্ত্রপাতি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিষয়টি অনেকের কাছে উল্টো পদক্ষেপ মনে হলেও সিরস্কির যুক্তি ছিল—রুশ বিমান হামলায় এসব যন্ত্রপাতি ধ্বংস হয়ে যাক, তা তিনি চান না।

পরবর্তীকালে রুশ সেনারা অগ্রসর হতে শুরু করলে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যখন রাজধানী কিয়েভে হামলার আশঙ্কা করছিলেন, সেই সময়টিতে একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ছক কষতে শুরু করেছিলেন সিরস্কি। শহরের চারপাশে প্রতিরক্ষার জন্য দুটি বলয় তৈরি করা হয়েছিল এবং এর সীমানাগুলো জেনারেলদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এসব জেনারেল অনুমোদিত ছিলেন। ২০২২ সালের মার্চে রুশ বাহিনী যখন কিয়েভের কাছাকাছি চলে আসে তখনই সিরস্কির পরিকল্পনায় ইরপিন নদীর ওপর একটি বাঁধ উড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে কিয়েভে প্রবেশের জন্য রুশ বাহিনীর শুধু পথই বন্ধ হয়নি, তাদের অবস্থানগুলোও প্লাবিত হয়েছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রুশ বাহিনী শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরের মাসেই দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ‘হিরো অব ইউক্রেন’ উপাধি পেয়েছিলেন সিরস্কি। 

২০২২ সালেরই জুলাই মাসে রুশ সেনাদের খারকিভ শহর থেকে অনেক দূরে ঠেলে দেওয়ার জন্য আরেকটি সফল অপারেশনের পরিকল্পনা করেছিলেন সিরস্কি। পরে সেপ্টেম্বরে পাল্টা আক্রমণের মধ্য দিয়ে বালাকলিয়া শহর স্বাধীন করে ইউক্রেনের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তিনি বাখমুতের প্রতিরক্ষারও নেতৃত্ব দেন। সে সময় মার্কিন সামরিক কৌশলবিদেরা যুক্তি দিয়েছিলেন, একটি কৌশলগতভাবে নগণ্য শহরকে রক্ষা করার জন্য এত প্রচেষ্টা ব্যয় করা খুবই সামান্য অর্থ বহন করে। কিন্তু এ ধরনের নগণ্য কিছুর জন্য রাশিয়ান সেনাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে যুদ্ধে ব্যস্ত রাখা সিরস্কির গভীর পরিকল্পনার অংশ ছিল বলে অনুমান করা হয়। 

সেনাপ্রধান হিসেবে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে সামনের দিনগুলোতে সিরস্কি আর কী কী প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন—তা-ই এখন দেখার বিষয়।

ডার্ক ফ্লিট: নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেভাবে চলে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পাচার

এআই চাকরি কেড়ে নিচ্ছে আমেরিকায়, কিন্তু নিয়োগ বাড়াচ্ছে ভারতে—কীভাবে

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ না সম্ভাবনা

শত বছর আগে জাপানের কাছে হারের বদলা চান সি চিন পিং!

কোন দেশে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য সর্বাধিক, বাংলাদেশের চিত্র কেমন

যুদ্ধক্ষেত্রে কতটা দক্ষ ইতালির জঙ্গি বিমান ইউরোফাইটার টাইফুন

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত থামেনি, ট্রাম্প ‘থামিয়েছেন’ দাবি করা অন্য যুদ্ধগুলোর কী অবস্থা

তুরস্কের গোয়েন্দা সহায়তায় যেভাবে ‘দামেস্কের আমির’ হলেন আল–শারা

রাশিয়ার জব্দ সম্পদ ইউক্রেনকে দেওয়ার প্রশ্নে যে সংকট সামনে এল

নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে এলেই গ্রেপ্তার করতে চান মামদানি, কিন্তু কীভাবে