হোম > বিশ্লেষণ

তেহরানে পুতিন-এরদোয়ান, নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত

ঐতিহাসিক সফরে ইরান সফরে যাচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তেহরানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এই সফর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন জল্পনার জন্ম দিয়েছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া–ইউক্রেন সংকট শুরু হওয়ার পর এই প্রথম উল্লেখযোগ্য কোনো রাষ্ট্রীয় সফরে গেলেন পুতিন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে তুর্কি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই সফরে সিরিয়া এবং ইউক্রেন ইস্যুর পাশাপাশি খাদ্যশস্য রপ্তানির বিষয়েও আলোচনা হবে। তবে, এসব আনুষ্ঠানিক আলোচনার বিষয় মাত্র। 

পুতিনের এই সফরের গুরুত্ব আরও গভীর। তাঁর ইরান সফরের মাত্র দুতিন দিন আগেই মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়েছিলেন বাইডেন। বাইডেন তাঁর সফরে ইরানের দুই ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ইরানের পরমাণু অস্ত্রের সক্ষমতা অর্জন রুখতে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির পরপরই ইসরায়েলের সেনাপ্রধান আভিভ কোহাভি বলেছেন, ইরানে হামলার ‘নৈতিক বাধ্যবাধকতা’ ইসরায়েলের রয়েছে। জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদনে কোহাভিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর বাইরে, ইরান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত। দেশটির অর্থনীতিও ভারাক্রান্ত। 

অপরদিকে, ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর পর থেকেই পশ্চিমা বিশ্বের একগাদা নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি পড়েছে রাশিয়া। ফলে, দেশটি বিশ্ব বাণিজ্য থেকে আপাত বিচ্ছিন্ন। কেবল চীন এবং ভারতের মতো দুই বড় দেশ এবং আরও বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে তুলনামূলক সমঝোতামূলক শর্তে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। কেবল বাণিজ্যিকভাবেই নয়, রাশিয়া কূটনৈতিকভাবেও অনেকটা একঘরে হয়ে পড়েছে। 

এই অবস্থায় রাশিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মিত্র খুঁজে পাওয়া জরুরি। আর এ ক্ষেত্রে আদর্শ বাছাই ইরান। আবার ইরানের জন্যও ভরসাস্থল হয়ে উঠতে পারে রাশিয়া। দুই দেশেরই অবস্থা প্রায় একই। দুটি দেশই পশ্চিমের কুনজরে। এই অবস্থায় রাশিয়ার জন্য ইরানের বন্ধুত্বের কোনো বিকল্প নেই। পুতিনের বৈদেশিক নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘খামেনির সঙ্গে এই সাক্ষাৎ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ 

এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্ক কোন মাত্রায় পৌঁছাবে তা সফর শেষেই বোঝা যাবে। তবে, এই দুই দেশ যে পশ্চিমকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার প্রয়াস পাবে এই সফরের মাধ্যমে তা সহজেই অনুমেয়। 

দুই রাষ্ট্রের সম্পর্কোন্নয়নের বাইরেও এই সফর গুরুত্বপূর্ণ আরও একটি কারণে। এই সফরে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানির বিষয়েও আলোচনা হবে। ইউরি উশাকভ বলেছেন, ‘এই সফরে এরদোয়ানের সঙ্গে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানির বিষয়েও আলোচনা করা হবে।’ যদি এই আলোচনা ফলপ্রসূ হয় তবে খাদ্য সংকটের দ্বারপ্রান্তে থাকা বিশ্বের জন্য তা আশীর্বাদ হতে পারে। যদিও বিষয়টিকে ইউক্রেন ও পশ্চিমাবিশ্ব জবরদখল (অনেকে বলছেন ‘চুরি’) বলেই মনে করে।

এই সফরের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো তুরস্কের প্রেসিডেন্টেরও একই সময়ে তেহরান সফর। বিশ্ব রাজনীতির ‘স্মার্ট প্লেয়ার’ এরদোয়ান এবার ইরানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে মনোনিবেশ করেছেন। ইরানের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক খুব একটা উষ্ণ না হলেও শীতলও নয়। তবে এযাবত বেশ উত্থান–পতনের মধ্য দিয়েই এগিয়েছে এই দুই দেশের সম্পর্ক। এরদোয়ান তাঁর এই সফরে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এবং তুর্কি ব্যবসায়ীর একটি বিশাল বহর সঙ্গে নিয়ে গেছেন। ফলে ধারণা করা যায়, ইরানের জন্যও এই সফর বাণিজ্যিক তো বটেই, রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। 

সব মিলিয়ে পুতিন এবং এরদোয়ানের এই সফর বিশ্ব রাজনীতিতে পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিকূলে আরও নতুন একাধিক সমীকরণের জন্ম দিতে যাচ্ছে—এটা বলা যেতেই পারে। যা আগামী দিনে প্রকাশ্য হবে। এ ক্ষেত্রে সামরিক এবং বাণিজ্যিক খাতে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক নতুন জোটের আবির্ভাব হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। 

তথ্যসূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, জেরুজালেম পোস্ট

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

ইরান ও ইসরায়েলে সমানতালে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি

পাকিস্তানকে এফ-১৬ আধুনিকীকরণের প্যাকেজ, ভারতকে কী বার্তা দিতে চান ট্রাম্প

ডার্ক ফ্লিট: নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেভাবে চলে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পাচার

এআই চাকরি কেড়ে নিচ্ছে আমেরিকায়, কিন্তু নিয়োগ বাড়াচ্ছে ভারতে—কীভাবে

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ না সম্ভাবনা

শত বছর আগে জাপানের কাছে হারের বদলা চান সি চিন পিং!

কোন দেশে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য সর্বাধিক, বাংলাদেশের চিত্র কেমন

যুদ্ধক্ষেত্রে কতটা দক্ষ ইতালির জঙ্গি বিমান ইউরোফাইটার টাইফুন

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত থামেনি, ট্রাম্প ‘থামিয়েছেন’ দাবি করা অন্য যুদ্ধগুলোর কী অবস্থা