হোম > বিশ্লেষণ

এপির প্রতিবেদন

ক্রিমিয়ার আশা কি একেবারেই ছাড়তে হবে ইউক্রেনকে, রাশিয়া এর দখল ছাড়তে নারাজ কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

ছবি: সংগৃহীত

মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে যুদ্ধের ইতি টানতে পারেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিন্তু কীভাবে? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ক্রিমিয়া ছেড়ে দিলে আর ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আশা ত্যাগ করলেই থেমে যাবে যুদ্ধ!

গতকাল রোববার ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, জেলেনস্কি চাইলে প্রায় এখনই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে পারেন, অথবা তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু এর বিনিময়ে ইউক্রেনকে ক্রিমিয়ার আশা ছাড়তে হবে। তারা কখনো ন্যাটোতেও যোগ দিতে পারবে না।

ট্রাম্পের এ মন্তব্যগুলো ক্রেমলিনের দাবিকেই প্রতিফলিত করে। ক্রেমলিন অনেক আগে থেকে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তির কথা বলে আসছে এবং ইউক্রেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবি করছে। কিন্তু ক্রিমিয়া কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? চলুন, জেনে নিই ক্রিমিয়ার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও কৌশলগত তাৎপর্য—

২০১৪ সালের মার্চে ইউক্রেনের কাছ থেকে রাশিয়ার ক্রিমিয়া উপদ্বীপের অবৈধ দখল ছিল একটি দ্রুত ও রক্তপাতহীন ঘটনা। কিন্তু এর ফলে মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক শীতল যুদ্ধের পর সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এ ঘটনা ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পথ প্রশস্ত করে, যার মাধ্যমে মস্কো তার প্রতিবেশী দেশের আরও কিছু ভূখণ্ড দখল করে নেয়। হীরা আকৃতির কৃষ্ণসাগরের এই উপদ্বীপ নৌঘাঁটি ও মনোরম সৈকতের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেন—উভয়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২০১৪ সালের মার্চ থেকে ক্রিমিয়ান উপদ্বীপের সেভাস্তোপলে দুটি ইউক্রেনীয় নৌযান নোঙর করে রাখা হয়েছে, সেখানে রাশিয়ান সৈন্যরা একটি ঘাট পাহারা দিচ্ছে। ছবি: এপির সৌজন্যে

কীভাবে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করল

২০১৩-১৪ সালে ইউক্রেনে ব্যাপক গণবিক্ষোভ শুরু হলে রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হন। এই রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতীকবিহীন সশস্ত্র সৈন্য পাঠিয়ে ক্রিমিয়া দখল করে নেন। পরে পুতিন ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য একটি গণভোটের আয়োজন করেন, যা ইউক্রেন ও পশ্চিমারা অবৈধ বলে প্রত্যাখ্যান করে। এই অবৈধ দখলের পর যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য দেশ মস্কোর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যদিও উত্তর কোরিয়া, সুদানসহ কয়েকটি দেশ রাশিয়ার এ পদক্ষেপকে স্বীকৃতি দেয়।

ক্রিমিয়া কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

ক্রিমিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান এটিকে একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সম্পদে পরিণত করেছে। শত শত বছর ধরে রাশিয়া এই উপদ্বীপের জন্য লড়াই করেছে। একসময় রুশ সাম্রাজ্যের অংশ থাকা উপদ্বীপটি ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ রাশিয়া থেকে ইউক্রেনের কাছে হস্তান্তর করেন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এটি স্বাধীন ইউক্রেনের অংশ হয়।

রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডকে ক্রিমিয়ান উপদ্বীপের সঙ্গে সংযুক্তকারী কার্চ সেতুটি বন্ধ থাকায় রুশ সামরিক জাহাজের সাহায্যে গাড়ি ও মানুষ পরিবহন করা হয়। ছবি: এপির সৌজন্যে

ক্রিমিয়া দখল করার অন্যতম কারণ হলো এর সামরিক গুরুত্ব। রাশিয়ার ব্ল্যাক সি ফ্লিটের একটি ঘাঁটি ক্রিমিয়ার সেভাস্তোপোল শহরে অবস্থিত। ঘাঁটিটি রাশিয়াকে কৃষ্ণসাগরের ওপর নিয়ন্ত্রণ দেয়, যা বিশ্বের শস্য ও অন্যান্য পণ্য পরিবহনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডর। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারের শপথ নিয়েছেন এবং বলেছেন, রাশিয়া এই উপদ্বীপ চুরি করতে পারবে না।

চলমান যুদ্ধে ক্রিমিয়ার ভূমিকা

২০২২ সালের পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের আগে মস্কো ক্রিমিয়ায় সৈন্য ও অস্ত্র মোতায়েন করেছিল, যা রুশ বাহিনীকে যুদ্ধের শুরুতে দ্রুত ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের বড় অংশ দখল করতে সাহায্য করে। একজন শীর্ষ রুশ সামরিক কর্মকর্তা পরে বলেন, রাশিয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলগুলো দখল করে রাশিয়া থেকে ক্রিমিয়া পর্যন্ত একটি স্থল করিডর সুরক্ষিত করা।

এরপর এই উপদ্বীপ দ্রুতই একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। এখানে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি, গোলাবারুদের ডিপো, বিমানঘাঁটি, এমনকি ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ কার্চ সেতুতেও ড্রোন ও বোমা হামলা চালায় ইউক্রেন।

শান্তি আলোচনায় ক্রিমিয়া

যেকোনো শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে ক্রিমিয়া একটি প্রধান প্রতিবন্ধক। পুতিন শান্তির জন্য যেসব শর্ত দিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে একটি হলো—ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তবে কিয়েভ কোনো অঞ্চল ছেড়ে দিতে রাজি নয়। রাশিয়া বর্তমানে ক্রিমিয়াসহ ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূমি দখল করে রেখেছে। তাই কোনো চুক্তি যদি বর্তমান ফ্রন্টলাইন বরাবর যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করে, তবে সেটি শেষ পর্যন্ত মস্কোর জন্যই লাভজনক হবে।

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নাইজেরিয়ায় কোন আইএসকে আঘাত করল মার্কিন বাহিনী

নাইজেরিয়ায় কেন হামলা চালাল মার্কিন বাহিনী, খ্রিষ্টান নিপীড়নের সঙ্গে এর সম্পর্ক কী

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

ইরান ও ইসরায়েলে সমানতালে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি

পাকিস্তানকে এফ-১৬ আধুনিকীকরণের প্যাকেজ, ভারতকে কী বার্তা দিতে চান ট্রাম্প

ডার্ক ফ্লিট: নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেভাবে চলে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পাচার