হোম > বিশ্লেষণ

ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে গাজাকে আবার নতুন করে নির্মাণ কি সম্ভব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে এই ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই ফিরছে গাজার মানুষ। ছবি: দ্য টাইমস

মাঝখানে কয়েক দিনের বিরতি দিয়ে টানা দুই বছরের ভয়াবহ যুদ্ধের পর এখন এক বিশাল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে—গাজা সিটির ৮৩ শতাংশ ভবনই ক্ষতিগ্রস্ত। সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে অন্তত ১৭ হাজার ৭০০টি ভবন।

গাজার দক্ষিণ অংশের খান ইউনিসে তরুণ কম্পিউটার প্রযুক্তিবিদ হামজা আল-শামির বাড়ি ছিল। সেখানে এখন শুধু ইট-পাথরের ধ্বংসাবশেষ। শামি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম যুদ্ধ শেষ হলে হয়তো ঘরটাকে আবার চিনতে পারব। কিন্তু সেখানে এখন শুধু ধুলো আর কিছু নেই।’

গাজা জুড়ে এমন দৃশ্যই এখন বাস্তবতা। যুদ্ধ শেষে ধ্বংসের এই পরিমাণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে আর দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজা পুনর্গঠন করতে সময় লাগবে অন্তত ১০ বছর এবং ব্যয় হবে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে এখন ধ্বংসাবশেষের পরিমাণই প্রায় ৫ কোটি ৪০ লাখ টন, যা ইরাকের মসুল শহরের যুদ্ধোত্তর ধ্বংসের তুলনায় ছয়গুণ বেশি।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই পুনর্গঠন শুরু করা গেলে প্রায় ২০ লাখ বাস্তুচ্যুত গাজার নাগরিকের জীবনে কিছুটা আশার আলো জ্বালানো সম্ভব। তবে সমস্যা হলো, বিপুলসংখ্যক ভবনের নিচে এখনো বিস্ফোরক ও অবিস্ফোরিত গোলা রয়ে গেছে। বোমা নিষ্ক্রিয়করণ না হলে মাটিতে ভারী যন্ত্র নামানোই সম্ভব নয়।

ব্রিটিশ একটি নির্মাণ কোম্পানির সাবেক নির্বাহী ফিলিপ বুভেরাত মত দিয়েছেন, গাজা পুনর্গঠনের জন্য ‘জ্যাক অ্যান্ড জিল’ নামে একটি ধাপে ধাপে কর্মপরিকল্পনা দরকার। প্রথমে নিরাপদ পানি ও অস্থায়ী আশ্রয় নিশ্চিত করা, তারপর বিদ্যুৎ ও রাস্তার নকশা তৈরি, ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার এবং শেষে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ।

ফিলিপ আরও জানান, গাজায় প্রতিটি ধাপই অত্যন্ত জটিল হবে। কারণ এখানে শত শত মাইল জুড়ে হামাসের নির্মিত ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ রয়েছে। এসব সুড়ঙ্গের ওপর নতুন কোনো স্থাপনা তৈরি হলে তা ধসে পড়ার ঝুঁকিতে থাকবে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য টাইমস জানিয়েছে, এই বিপুল পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে এখন কাজ করছে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নির্মাণ জায়ান্ট বেকটেল, কেবিআর, বালফোর বিটি এবং লেইং ও’রোরক—অন্যদিকে তুরস্ক, কাতার ও সৌদি আরবও আগ্রহ দেখিয়েছে গাজায় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে। গাজা পুনর্গঠনে সৌদি বিন লাদেন গ্রুপ, কাতারের রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি তহবিল এবং তুরস্কের নির্মাণ কোম্পানিগুলো বড় ভূমিকা নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী—এই কাজের জন্য অন্তত ৫০ বিলিয়ন ডলার লাগবে। পুনর্গঠনের রূপরেখা নির্ধারণ করতে সম্ভবত মিসরে আসন্ন এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ আরব ও ইউরোপীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় গাজাকে ‘করমুক্ত শিল্পাঞ্চল’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাবও রয়েছে।

কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ হলো দুর্নীতি ও অর্থ পাচার ঠেকানো। অতীতে ইরাক ও সারায়েভোর মতো শহরগুলোতে পুনর্গঠন তহবিলের বড় অংশই দুর্নীতির জালে হারিয়ে গিয়েছিল। তাই এবার গাজাকে নগদহীন অর্থনীতিতে রূপান্তরের প্রস্তাব উঠেছে। ফিলিস্তিনি উদ্যোক্তা আদনান মজালি প্রস্তাব করেছেন ‘গাজাকয়েন’ নামে ব্লক চেইনভিত্তিক ডিজিটাল মুদ্রা চালুর, যেন এর প্রতিটি অর্থপ্রবাহ স্বচ্ছভাবে ট্র্যাক করা যায় এবং এই তহবিল যেন অস্ত্র বা কালোবাজারে না যায়।

আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে এই ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই ফিরছে গাজার মানুষ। ছবি: দ্য টাইমস

বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজার পুনর্গঠন শুধু ভবন নির্মাণের বিষয় নয়—এটি একটি বিশাল সামাজিক পুনর্জাগরণের প্রক্রিয়া। স্থানীয় জনগণকে যুক্ত না করলে আগের মতো বিশৃঙ্খল পরিকল্পনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে, যেমনটি হয়েছিল সারায়েভোতে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিকল্পনায় স্থানীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নির্মাণে সরকারি ভবনের বদলে স্কুল, হাসপাতাল ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে।

গাজার অনেকেই জানেন, এই পুনর্গঠন দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ। খান ইউনিসের রাজনৈতিক বিশ্লেষক থাবেত আল-ওমর অনুমান করেছেন, ধ্বংসাবশেষ সরাতে দুই বছর এবং পুরো পুনর্গঠন সম্পন্ন করতে অন্তত ১০ বছর সময় লাগবে।

তারপরও আশাবাদী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হামজা আল-শামি। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ আমাদের ঘর কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু পুনর্গঠন হয়তো আমাদের ভবিষ্যৎ ফিরিয়ে দেবে। কাজের সুযোগ তৈরি হবে, অর্থনীতি ফিরবে, আর আমরা আবার মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারব।’

গাজার মানুষ এখন সেই নতুন সূচনার অপেক্ষায়—যেখানে ধ্বংসের মাটি থেকেই হয়তো একদিন পুনর্জন্ম নেবে জীবন ও আশার আলো।

ইরান ও ইসরায়েলে সমানতালে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি

পাকিস্তানকে এফ-১৬ আধুনিকীকরণের প্যাকেজ, ভারতকে কী বার্তা দিতে চান ট্রাম্প

ডার্ক ফ্লিট: নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেভাবে চলে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পাচার

এআই চাকরি কেড়ে নিচ্ছে আমেরিকায়, কিন্তু নিয়োগ বাড়াচ্ছে ভারতে—কীভাবে

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ না সম্ভাবনা

শত বছর আগে জাপানের কাছে হারের বদলা চান সি চিন পিং!

কোন দেশে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য সর্বাধিক, বাংলাদেশের চিত্র কেমন

যুদ্ধক্ষেত্রে কতটা দক্ষ ইতালির জঙ্গি বিমান ইউরোফাইটার টাইফুন

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত থামেনি, ট্রাম্প ‘থামিয়েছেন’ দাবি করা অন্য যুদ্ধগুলোর কী অবস্থা

তুরস্কের গোয়েন্দা সহায়তায় যেভাবে ‘দামেস্কের আমির’ হলেন আল–শারা