হোম > বিশ্লেষণ

ইউক্রেন প্রশ্নে ইউরোপের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প এখনো বহুদূর

ইউক্রেনকে এই মুহূর্তে সামরিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের প্রতিশ্রুতি এবং বরাদ্দ নিয়ে নতুন তথ্য দিয়েছে ইউক্রেন সাপোর্ট ট্র্যাকার টিম। তাদের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, ইউক্রেনে পাঠানো সাহায্যের পরিমাণে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে ইউরোপ। আর সেটি কেবল প্রতিশ্রুতির দিক দিয়েই নয়, ইউক্রেনের জন্য সহায়তা বরাদ্দের ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে আছে ইউরোপ। সেই সঙ্গে, ইউক্রেনকে এর বাইরেও আর্থিক সহায়তার নিশ্চয়তা দিয়েছে ইউরোপ। 

কিয়েল ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ বিষয়ে বিস্তারিত পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিশ্রুত অর্থ ও বরাদ্দের মাঝে রয়েছে বিশাল ফারাক। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিসংখ্যান মতে, ১৪ হাজার ৪০০ কোটি ইউরো সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইইউ। তবে বরাদ্দ করেছে এর প্রায় অর্ধেক— ৭ হাজার ৭০০ কোটি ইউরো। 

ইউক্রেন সাপোর্ট ট্র্যাকার টিম দেখিয়েছে, চলতি ২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি সম্পূর্ণরূপে মার্কিন সহায়তাকে প্রতিস্থাপন করতে চায় তবে আর্থিক এবং অস্ত্র সহায়তার পরিমাণ বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ করতে হবে। 

ইউক্রেনে সহায়তা বরাদ্দের ক্ষেত্রে নতুন গবেষণা পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে এসব তথ্য জানিয়েছে ইউক্রেন সাপোর্ট ট্র্যাকার টিম। কিয়েল ইনস্টিটিউটের ইউক্রেন সাপোর্ট ট্র্যাকার এবং রিসার্চ ডিরেক্টরের প্রধান ক্রিস্টোফ ট্রেবেশ বলেন, এখন পর্যন্ত প্রতিশ্রুত অর্থের ব্যাপারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। ইউক্রেন সাপোর্ট ট্র্যাকার তাদের কাজের পরিধি বাড়িয়ে সেই সব নির্দিষ্ট সহায়তা প্যাকেজের ব্যাপারেও তথ্য রাখছে, যেসব ছাড় করা হবে অদূর ভবিষ্যতে।

বন্ধ হয়ে গেছে মার্কিন সাহায্য
সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যানুসারে, ইউক্রেনে মার্কিন সাহায্যের প্রতিশ্রুতি এবং ছাড় দুটোই আপাতত স্থগিত। সম্প্রতি ইউক্রেনের জন্য ৬ হাজার কোটি ডলার তহবিল পাস করেছে মার্কিন কংগ্রেসের সিনেট। যদিও এটি এখনো চূড়ান্ত নয়। অন্যদিকে, প্রতিশ্রুতি এবং সাহায্য বরাদ্দ দুই–ই বাড়িয়ে চলেছে ইউরোপ। 

প্রতিশ্রুত এবং প্রকৃত সাহায্যের মধ্যে যে বড় পার্থক্য রয়ে গেছে তা প্রকাশ করেছে ইউক্রেন সাপোর্ট ট্র্যাকার টিমের নতুন তথ্য। এ বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিসংখ্যান মতে, ১৪ হাজার ৪০০ কোটি ইউরো সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও ৭ হাজার ৭০০ কোটি ইউরো বরাদ্দ করেছে ইইউ। সংস্থাটির মোট বরাদ্দকৃত আর্থিক সহায়তার পরিমাণ (৩ হাজার ৪০০ কোটি ইউরো) অনেকটাই মোট বরাদ্দকৃত সামরিক সহায়তার (৩ হাজার ৫২০ কোটি ইউরো) সমান। এ ছাড়া, ২০২২ সালের শুরু থেকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তার পরিমাণ অনেকটা একই।

ক্রিস্টোফ ট্রেবেশ বলেন, ইউক্রেনের জন্য ইইউ ৫ হাজার কোটি ইউরোর সহায়তা তহবিল চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করেছে। এতে আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে দৃশ্যমানতা অনেক কম এবং গতিও মন্থর। 

নতুন সামরিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি ১ হাজার কোটি ইউরোরও নিচে এবং বড় দাতার সংখ্যাও কম
২০২৩ সালের ১ নভেম্বর থেকে থেকে ২০২৪–এর ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নতুন প্রতিশ্রুত সামরিক সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৯৮০ কোটি ইউরো। গত বছরের প্রায় একই সময়ে প্রতিশ্রুতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭০০ কোটি ইউরো—যার মধ্যে ২ হাজার ১০০ কোটি ইউরো এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। বর্তমানে ইউক্রেনকে যে সামরিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে তার নেতৃত্বে রয়েছে নর্ডিক দেশগুলো এবং জার্মানি বা যুক্তরাজ্যের মতো কয়েকটি বড় দাতা দেশ। অতীতের বেশির ভাগ দাতাই খুব কম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অনেকে নতুন সাহায্যের কোনো প্রতিশ্রুতিও দেয়নি। 

হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, সামরিক, আর্থিক এবং মানবিক খাত মিলিয়ে ঘোষিত মোট সহায়তার পরিমাণ ১ হাজার ৩৮০ কোটি ইউরো। এর মধ্যে ইইউর চূড়ান্ত করা ৫ হাজার কোটি ইউরো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। 

সামরিক খাতে প্রতিশ্রুত এবং প্রকৃত বরাদ্দকৃত সহায়তার মধ্যে বড় আকারের পার্থক্যের কথা প্রকাশ করেছে নতুন পরিসংখ্যান। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মোট ১ হাজার ৭৭০ কোটি ইউরোর সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সর্ববৃহৎ দাতা দেশ হিসেবে রয়েছে জার্মানি। এর মধ্যে ইউক্রেনে পাঠানো নির্দিষ্ট সামরিক প্যাকেজের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৯৪০ কোটি ইউরো। 

যুক্তরাজ্য সম্প্রতি ২৯০ কোটি ইউরোর নতুন সামরিক সহায়তা ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে ইউক্রেনে যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুত মোট সামরিক সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯১০ কোটি ইউরো। তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত এই সহায়তার মধ্যে ৪৮০ কোটি ইউরো বরাদ্দ করা হয়েছে। 

নর্ডিক দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, গত নভেম্বর থেকে ড্যানিশ ইউক্রেন তহবিলে ডেনমার্ক সামরিক প্রতিশ্রুতির পরিমাণ ৩৫০ কোটি ইউরো বাড়িয়েছে। জিডিপি অনুপাতে, ডেনমার্ক এখন সামরিক সহায়তা দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ দাতা। এখন পর্যন্ত ৮৪০ কোটি ইউরোর সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ডেনমার্ক—যার মধ্যে বরাদ্দ করা হয়েছে ৪৫০ কোটি। 

ন্যানসেন প্রোগ্রামের আওতায় আকাশ প্রতিরক্ষা এবং গোলাবারুদের মতো সামরিক উদ্দেশ্যে বহু বছর ধরে ৬৬০ কোটি ইউরোর তহবিল পরিচালনা করে চলেছে নরওয়ে। সামরিক সহায়তায় দেশটির মোট বরাদ্দ এখন প্রায় ১ হাজার কোটি ইউরো।

ইইউর সামরিক সমর্থনে রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রশ্ন
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে আরও সামরিক সহায়তা পাঠাবে কি না তা অনিশ্চিত। সিনেট সবে একটি নতুন সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করলেও এটি প্রতিনিধি পরিষদে এখনো পাস করা হয়নি। মার্কিন সামরিক সহায়তার জন্য শেষ অবশিষ্ট তহবিল ২০২৩ সালের শেষ নাগাদই ফুরিয়ে গেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কোটি ইউরো সামরিক সহায়তা বরাদ্দ করেছে—যা প্রতি মাসে প্রায় ২০০ কোটি ইউরো। 

ক্রিস্টোফ ট্রেবেশ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে যদি কোনো সহায়তা না আসে তবে ইউরোপকে সহায়তার পরিমাণ অন্তত দ্বিগুণ করতে হবে। এটি একটি চ্যালেঞ্জ, আবার একই সঙ্গে এখানে রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রশ্নও জড়িত। ইইউ দেশগুলো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশের তালিকায় থাকলেও এখনো পর্যন্ত তারা তাদের ২০২১ সালের জিডিপির ১ শতাংশও ইউক্রেনের সহায়তায় ব্যয় করেনি।

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

ইরান ও ইসরায়েলে সমানতালে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি

পাকিস্তানকে এফ-১৬ আধুনিকীকরণের প্যাকেজ, ভারতকে কী বার্তা দিতে চান ট্রাম্প

ডার্ক ফ্লিট: নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেভাবে চলে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পাচার

এআই চাকরি কেড়ে নিচ্ছে আমেরিকায়, কিন্তু নিয়োগ বাড়াচ্ছে ভারতে—কীভাবে

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ না সম্ভাবনা

শত বছর আগে জাপানের কাছে হারের বদলা চান সি চিন পিং!