হোম > বিশ্লেষণ

জেরুজালেম পোস্ট

যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল মিত্রতার নতুন অধ্যায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

লেবানন সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের সম্মিলিত পতাকা। ছবি: সংগৃহীত

ইরান-ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধে আবারও প্রমাণিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্রতা। ইসরায়েল যখন এক সপ্তাহ ধরে ইরানি বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ওপর হামলা চালায়, তখন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বোমা বর্ষণ করে। ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর প্রধান অস্ত্র এফ-৩৫, এফ-১৫ ও এফ-১৬ যুদ্ধবিমান—সবই যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। তাই বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই যুদ্ধ কেবল সামরিক সংঘর্ষ নয়, বরং ওয়াশিংটন ও জেরুজালেমের মধ্যকার আরও ঘনিষ্ঠ, কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রতীক।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বজায় রাখতে ইসরায়েলকে এখন গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দুই দেশের এই সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি হয়েছে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে, যার পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংযোগ। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়; যখন কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ঐতিহ্যবাহী মিত্রদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রশ্ন উঠেছে, তখন ইসরায়েলকে ঘিরে সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে।

প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিদের সম্পর্ক ছিল সীমিত। ১৯৪৮ সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিলে সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হয়। পরে আইজেনহাওয়ার প্রশাসন ১৯৫৬ সালের সুয়েজ সংকটে ইসরায়েলকে সমর্থন না করে মিসরকে সোভিয়েত প্রভাব থেকে সরিয়ে রাখতে চেয়েছিল। এতে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়।

এরপর ১৯৬০-এর দশকে জন এফ কেনেডি প্রশাসনের অধীনে সম্পর্ক দৃঢ় হয়। ১৯৬৫ সালে ইসরায়েলকে হক মিসাইল বিক্রির মাধ্যমে ওয়াশিংটন-জেরুজালেম সম্পর্কে নতুন মোড় আসে। এরপর ১৯৭৩ সালের ইয়োম কিপুর যুদ্ধে নিক্সন প্রশাসন সরাসরি ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা পাঠায়।

১৯৮১ সালে ইরাকের ওসিরাক পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা, মিসরের সঙ্গে শান্তিচুক্তি ও ইরানে ইসলামি বিপ্লব—এসব বদলে দেয় মধ্যপ্রাচ্যের চিত্র। ১৯৯০-৯১ সালে উপসাগর যুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে ছিল। তবে ৯/১১-এর পর ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ আমেরিকার নীতি বদলে যায়। বিল ক্লিনটন প্রশাসনের সময়ে শান্তি প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকলেও দ্বিতীয় ইনতিফিদা এবং আমেরিকার ইরাক-আফগানিস্তান আগ্রাসন-পরবর্তী সময়ে সম্পর্কের নতুন বাস্তবতা তৈরি করে। একই সঙ্গে ইসরায়েলের ডানপন্থী সরকার ও মার্কিন লিবারেল ইহুদি গোষ্ঠীর মাঝে দূরত্ব বাড়তে থাকে।

কিন্তু এসবের পরেও সম্পর্ক থাকে অটুট। বারাক ওবামা প্রশাসন ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করলেও ইসরায়েলের নিরাপত্তা সহযোগিতা; বিশেষ করে আয়রন ডোম, ডেভিডস স্লিং ও অ্যারো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা চালিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে উত্তেজনা থাকলেও এ দুই দেশের প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব ছিল অটুট।

অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে এই সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছায়। রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি, গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব মেনে নেওয়া এবং আব্রাহাম চুক্তি স্বাক্ষর করানোর মাধ্যমে ইসরায়েলের খুবই ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয় যুক্তরাষ্ট্র।

পরবর্তী সময়ে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুদ্ধ, সমর্থন ও পুনর্বাসন পুরোপুরি বজায় থাকে। গত মাসে ইসরায়েল যখন ইরানের ওপর হামলা চালায়, তখন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে দাঁড়ায়। একে দেখা হয় সফল মিত্রকে সমর্থনের সুযোগ হিসেবে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন চীন ও রাশিয়াকে মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে মনোযোগ সরাতে চেয়েছিল, কিন্তু বাস্তবতা তাকে আবারও ফিরিয়ে আনে।

তবে ট্রাম্পের তুরস্ক ও সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন প্রচেষ্টা ইসরায়েলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। কারণ, তুরস্কের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক এখনো শীতল। একই সঙ্গে সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলা ওয়াশিংটনের সঙ্গে টানাপোড়েন তৈরি করতে পারে।

আজকের দিনে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলকে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে দেখা হয়। আমেরিকান রাষ্ট্রদূতদের প্রকাশ্য সমর্থন, কংগ্রেসে দ্বিদলীয় সুরক্ষা আইন এবং প্রতিবছর বিলিয়ন ডলারের সামরিক অনুদান—সব মিলিয়ে এই সম্পর্ক গভীর। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল ঘনিষ্ঠতা পশ্চিমা সমাজে, বিশেষত বামপন্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে ইসরায়েলের প্রাধান্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। যেখানে ট্র্যাডিশনাল মিত্র যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ততটা গুরুত্ব পাচ্ছে না, সেখানে ইসরায়েল বরাবরই ওয়াশিংটনের কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দুতে রয়ে গেছে। এর ফলে সম্ভাব্য বিপরীত প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে। তবে এত কিছুর পরেও যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক এখন এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে; যেখানে সামরিক, কৌশলগত ও রাজনৈতিক—সব দিক থেকেই এই মিত্রতা গভীর।

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

ইরান ও ইসরায়েলে সমানতালে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি

পাকিস্তানকে এফ-১৬ আধুনিকীকরণের প্যাকেজ, ভারতকে কী বার্তা দিতে চান ট্রাম্প

ডার্ক ফ্লিট: নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেভাবে চলে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পাচার

এআই চাকরি কেড়ে নিচ্ছে আমেরিকায়, কিন্তু নিয়োগ বাড়াচ্ছে ভারতে—কীভাবে

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ না সম্ভাবনা

শত বছর আগে জাপানের কাছে হারের বদলা চান সি চিন পিং!