হোম > বিশ্লেষণ

বিবিসির প্রতিবেদন

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে নেতৃত্ব দেবে কে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলো ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে সমর্থন বাড়ালেও একটি নতুন ও জটিল প্রশ্ন সামনে এনেছে। আর তা হলো—কে এই রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেবে?

এর আগে ১৫০টিরও বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল, তবে যুক্তরাজ্য এবং অন্য দেশগুলোর এই স্বীকৃতিকে অনেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে দেখছেন। ফিলিস্তিনের একজন সাবেক কর্মকর্তা জাভিয়ের আবু ইদ বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিন এখনকার চেয়ে বেশি শক্তিশালী আর কখনো ছিল না। বিশ্ব এখন ফিলিস্তিনের পক্ষে একত্র হয়েছে।’

তবে এর ফলে কিছু জটিল প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো—ফিলিস্তিন আসলে কী? ১৯৩৩ সালের মন্টেভিডিও কনভেনশনে রাষ্ট্রের জন্য চারটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি শর্ত ফিলিস্তিন পূরণ করে বলে দাবি করতে পারে। একটি স্থায়ী জনগোষ্ঠী (যদিও গাজার যুদ্ধ এটিকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলেছে) এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতা।

কিন্তু এটি এখনো ‘সুনির্দিষ্ট ভূখণ্ড’র শর্ত পূরণ করে না। চূড়ান্ত সীমানা নিয়ে কোনো চুক্তি না থাকায় (এবং কোনো প্রকৃত শান্তিপ্রক্রিয়া না থাকায়), ফিলিস্তিন বলতে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে, তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। ফিলিস্তিনিদের কাছে তাদের আকাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত—পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা। এই সব অঞ্চল ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল দখল করে নেয়। একটি মানচিত্রে চোখ বুলালেই বোঝা যায় সমস্যাগুলো কোথায় শুরু হয়েছে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের স্বাধীনতার পর থেকে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা ভৌগোলিকভাবে ইসরায়েল দ্বারা বিচ্ছিন্ন।

২০০৭ সালের পর থেকে গাজায় হামাস এবং পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) পৃথক শাসনব্যবস্থা চলছে, যা রাজনৈতিক বিভাজনকে আরও গভীর করেছে।

বর্তমানে ফিলিস্তিনিদের কোনো নির্বাচিত নেতৃত্ব নেই। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছে ২০০৬ সালে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস (বয়স প্রায় ৯০) বয়সের কারণে দুর্বল। অন্যদিকে, জনপ্রিয় সম্ভাব্য নেতা মারওয়ান বারগুতি ২২ বছর ধরে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী। আর হামাসকে আন্তর্জাতিক মহল গ্রহণযোগ্য মনে করে না।

এই সময়ের মধ্যে ফিলিস্তিনি রাজনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে, যার ফলে বেশির ভাগ ফিলিস্তিনি তাদের নেতৃত্বের প্রতি হতাশ এবং যেকোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ পুনর্মিলন, এমনকি রাষ্ট্র গঠনের অগ্রগতির বিষয়েও হতাশ। ২০০৬ সালে সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ও সংসদীয় নির্বাচনের পর ৩৬ বছরের কম বয়সী কোনো ফিলিস্তিনি পশ্চিম তীর বা গাজায় কখনো ভোট দেননি।

ফিলিস্তিনি আইনজীবী দিয়ানা ভুট্ট বলেন, ‘এত দীর্ঘ সময় নির্বাচন না হওয়াটা সত্যিই আশ্চর্যজনক। আমাদের একটি নতুন নেতৃত্ব দরকার।’

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিষয়টি আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। হাজার হাজার নাগরিকের মৃত্যুর মুখে, আব্বাসের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীরের সদর দপ্তর থেকে অসহায় দর্শকের ভূমিকায় পর্যবসিত হয়েছে।

ফিলিস্তিনি ইতিহাসবিদ এজিদ সায়িগ বলেন, ‘সাধারণ পরিস্থিতিতে নতুন নতুন ব্যক্তিত্ব, নতুন প্রজন্ম উঠে আসত। কিন্তু এটি অসম্ভব ছিল...অধিকৃত অঞ্চলের ফিলিস্তিনিরা অসংখ্য ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন অংশে বিভক্ত, যা নতুন ব্যক্তিত্বদের জন্য উঠে আসা এবং একত্র হওয়া প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে।’

তবু যখন ফিলিস্তিনিরা সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নেতাদের কথা বলেন, তখন তারা এমন একজন ব্যক্তির কথা বলেন যিনি প্রায় সিকি শতাব্দী ধরে কারাগারে আছেন। পশ্চিম তীরভিত্তিক ফিলিস্তিনি সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের সাম্প্রতিক এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী মারওয়ান বারগুতিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিতে চান, যা ২০০৫ সাল থেকে এই পদে থাকা আব্বাসের চেয়ে অনেক বেশি।

এদিকে, গাজা যুদ্ধের আগেও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি বলেছিলেন, ‘সবাই জানে যে আমিই সেই ব্যক্তি, যিনি কয়েক দশক ধরে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আটকে রেখেছি, কারণ এটি আমাদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করবে।’

তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, যদি একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত হয়, তবে হামাস সেটির নেতৃত্ব দেবে না। জুলাইয়ে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় তিন দিনের সম্মেলন শেষে একটি ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল, ‘হামাসকে গাজায় তাদের শাসন শেষ করতে হবে এবং তাদের অস্ত্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।’ এই ঘোষণাপত্রকে সব আরব রাষ্ট্র সমর্থন করেছে এবং পরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ১৪২ সদস্য গ্রহণ করেছে। হামাসও জানিয়েছে, তারা গাজায় একটি স্বাধীন টেকনোক্র্যাট প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত।

কিন্তু এই প্রতীকী স্বীকৃতি কি যথেষ্ট? বারগুতি জেলে, আব্বাসের বয়স ৯০-এর কাছাকাছি, হামাস প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং পশ্চিম তীর খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ায় এটি স্পষ্ট যে ফিলিস্তিনের নেতৃত্ব ও সংহতির অভাব রয়েছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্থহীন।

ফিলিস্তিনি আইনজীবী দিয়ানা ভুট্ট বলেন, ‘এটি খুবই মূল্যবান হতে পারে।’ তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এটি নির্ভর করবে এই দেশগুলো কেন এটি করছে এবং তাদের উদ্দেশ্য কী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্রিটিশ সরকারি কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, শুধু স্বীকৃতির প্রতীকী তাৎপর্য যথেষ্ট নয়।’ অর্থাৎ এই প্রতীকী স্বীকৃতির বাস্তবায়ন নির্ভর করছে গাজা ও পশ্চিম তীরের একত্রীকরণ এবং একটি কার্যকর নেতৃত্বের ওপর, যা এখনো সুদূরপরাহত।

কিন্তু ফিলিস্তিনিদের জন্য, আরও জরুরি একটি বিষয় রয়েছে। দিয়ানা ভুট্ট বলেন, ‘আমি চাই এই দেশগুলো যেন হত্যাকাণ্ড বন্ধ করে। রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে, তারা গাজায় চলমান হত্যাকাণ্ড বন্ধের জন্য কিছু করুক।’

দোনেৎস্ক: শান্তি-আলোচনার টেবিলে পুতিন-জেলেনস্কির অন্তিম বাধা, এর গুরুত্ব কতটা

কী হবে, যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়

জাপানের ‘লৌহমানবী’ কি দেশকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন

পুতিন-মোদির আসন্ন বৈঠকের মূলে কী আছে

শাহেনশাহ-ই-পাকিস্তান: আসিম মুনিরের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠার স্বপ্ন কি তাসের ঘর

যে ইমরান খানকে আমি চিনতাম—শশী থারুরের স্মৃতিকথায় আশঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলার উত্তেজনায় রাশিয়া ও চীন কেন নীরব

দুবাইয়ে তেজস দুর্ঘটনা: সামনে আসছে ভারতের যুদ্ধবিমান কর্মসূচির পুরোনো দুর্বলতা

হাসিনার ভাগ্যে কী আছে

ইমরানকে সরানোর খেসারত: পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর নীরব অভ্যুত্থান, দেশ শাসনের নয়া মডেল