রুশ সৈন্য ও মিত্র যোদ্ধারা গত শনিবার লিসিশানস্ক দখলে নেয়। বিশ্লেষকেরা লুহানস্কের যুদ্ধকে ইউরোপের যুদ্ধের ইতিহাসে অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ বলছেন। এর মধ্য দিয়ে ইউক্রেন থেকে একাংশের বিচ্ছিন্ন হতে চাওয়া লুহানস্ক সম্পূর্ণভাবে রাশিয়া এবং তার মিত্র বিদ্রোহীদের দখলে চলে গেছে।
রুশ সৈন্যদের এই অর্জনে উচ্ছ্বসিত ভ্লাদিমির পুতিন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর সঙ্গে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বৈঠকে পুতিন রুশ সৈন্যদের এই অর্জনে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পুতিন বলেছেন, ‘যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে তাদের এখন বিশ্রাম নিয়ে পরবর্তী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত। এখন অন্য ইউনিটগুলো লড়াই চালিয়ে যাবে।’
সমর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার এই অগ্রগতি রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক–বদল। কেবল কৌশলগত গুরুত্বের জন্যই নয় বরং এই যুদ্ধে যেসব শহর ধ্বংস হয়েছে, দুই পক্ষেরই সক্ষমতার যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার কারণেও এই যুদ্ধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নীল মেলভিন আরও বলেন, ‘এই জয়ের জন্য ৬০ দিন সময় লেগেছে যা খুবই ধীর অগ্রগতি নির্দেশ করে। আমি মনে করি, রাশিয়া এ ক্ষেত্রে হয়তো নিজেদের বিজয়ী বলে ঘোষণা করতে পারে কিন্তু মূল যুদ্ধ এখনো আসেনি।’ তবে মস্কোর আশা, এই জয় রাশিয়ার সৈন্যদের যুদ্ধক্ষেত্রে আরও বেশি মনোবল জোগাবে। দোনেৎস্ক জয়ে আরও বেশি উৎসাহী করবে।
লুহানস্কের ইউক্রেনীয় গভর্নর সেরহি গাইদাইও স্বীকার করছেন, এই জয় রাশিয়াকে সমগ্র দনবাসের নিয়ন্ত্রণ দখলে আরও অনেকখানি এগিয়ে নেবে। তিনি বলেন, ‘এই জয়ের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ কার্যকরভাবে রাশিয়ার হাতে চলে গেছে।’ তবে ইউক্রেন লুহানস্কের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েও হতাশ নয় জানিয়ে গাইদাই বলেছেন, ‘কেবল লিসিশানস্ক জয় করাই নয়, আমাদের পুরো যুদ্ধটাই জিততে হবে। আমাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হলেও আমরা এখনো হেরে যাইনি।’
তবে রাশিয়া এই জয়কে বড় অর্জন হিসেবে বিবেচনা করলেও ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা সেরহি গাইদাইয়ের সুরেই কথা বলছে। তাঁরাও বলছেন, রাশিয়া লুহানস্কের যুদ্ধ জিতলেও আগামী দিনে আরও কঠিন পরিস্থিতি পাড়ি দিতে হবে। চূড়ান্ত বিজয় আরও বহুদূর।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক রব লি বলছেন, ‘এই জয়ের ফলে পুতিন হয়তো দাবি করতে পারেন তিনি একটা কিছু অর্জন করেছেন। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, ইউক্রেন খুব দ্রুত হার মানবে।’
তবে রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপপ্রধান ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ ইউক্রেন যুদ্ধে রক্তপাতের জন্য পশ্চিমাদের দায়ী করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে মেদভেদেভ বলেছেন, ইউক্রেন ‘মাথা খারাপ’ পশ্চিমা নেতাদের—যাদের চোখে অন্যের রক্তপাত ধরা পড়ে না—কথায় উৎসাহিত হয়ে যুদ্ধ চালিয়ে নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের নেতারা ‘কোকেনের নেশায় বুঁদ’ হয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন!
তবে রাশিয়ার দখলে থাক, বা ইউক্রেন নিয়ন্ত্রণ পুনর্দখল করুক—এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হবে। লুহানস্ক জয়ে যেমন রাশিয়ার সময় লেগেছে, পুনরুদ্ধার করতে গেলে ইউক্রেনেরও সময় লাগবে এবং তা মোটেও সহজ হবে না। অপরদিকে, রাশিয়া দোনেৎস্ক দখলে অগ্রসর হলে সেখানেও শক্ত বাধা পেতে হবে। ফলে, রাশিয়ার জন্য লুহানস্ক ধরে রাখা ও ইউক্রেনের জন্য ফিরে পাওয়া দুটোর বিনিময়েই প্রচুর মূল্য চুকাতে হবে। একই কথা প্রযোজ্য দোনেৎস্কের ক্ষেত্রেও।