হোম > বিশ্লেষণ

কেবল মুখ রক্ষার জন্যই কি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু

নানা নাটকীয়তার পর গতকাল রোববার ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিল যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল। আজই ইউরোপের আরও ছয় দেশ স্বীকৃতি দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এত দিন চুপ থাকার পর হঠাৎ এখন কেন এই পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশগুলো?

যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও পর্তুগালের রোববারের ঘোষণা গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। রিসার্চ এজেন্সি ফরেনসিক আর্কিটেকচার অ্যান্ড বেলিঙ্গেট অন প্যালেস্টাইন অ্যান্ড ইসরায়েলের তদন্তে কাজ করা ফ্রিল্যান্স রিসার্চার ক্রিস ওসিয়েক বলেন, ‘যতক্ষণ না নিষেধাজ্ঞা, অস্ত্র না দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক জোটের সেনাবাহিনী মোতায়েন করে ফিলিস্তিনি আকাশসীমায় কোনো ধরনের বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করার মতো শক্ত পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে না, ততক্ষণ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো কূটনৈতিক পদক্ষেপে আমি খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছি না।’

দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিসের অধ্যাপক মোহাম্মাদ ইলমাসরি আল-জাজিরাকে বলেন এ ধরনের পদক্ষেপ মূলত প্রদর্শনমূলক। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা আন্তর্জাতিক মহল তো বটেই দেশগুলোর ভেতরেও চাপ ছিল ফিলিস্তিন ইস্যুতে কিছু করার। বলা যায় এ কারণেই এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে এক প্রকার বাধ্যই হয়েছে তারা।’

তবে, কারণ যা-ই হোক, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া তাত্ত্বিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ইলমাসরি। তিনি বলেন, এখন এই দেশগুলো ফিলিস্তিনি সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য কিংবা অন্য যেকোনো ধরনের চুক্তিতে করতে পারবে। কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরির সুযোগ হবে।

যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনি কূটনৈতিক, একাডেমিক ও অর্থনীতিবিদ হুসাম জমলতকে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে স্বীকৃতি দেবে বলে জানা গেছে। এই স্বীকৃতির প্রতিক্রিয়ায় জমলত এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ, স্বাধীনতা এবং নিজেদের ভূমিতে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার জন্মগত অধিকারকে অস্বীকার করার যে নীতি ব্রিটেনের ছিল, এই স্বীকৃতির মাধ্যমে তার সমাপ্তি ঘটল।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি ন্যায়বিচার, শান্তি এবং ঐতিহাসিক ভুলগুলোর সংশোধনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’ তবে, হুসামও মনে করেন এটি মূলত প্রদর্শনমূলক পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘এই পদক্ষেপ মূলত বাস্তব সম্মত কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ না নিয়ে কিছু একটা করার ভান করা।’

বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ এরই মধ্যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, বেশ কিছু ইউরোপীয় ও বাল্টিক দেশ, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং আরও অল্প কিছু রাষ্ট্র এখনো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। যদিও বিশ্বের বেশির ভাগ রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনকে আলাদা রাষ্ট্র মনে করে তারপরও ফিলিস্তিন জাতিসংঘের সদস্যপদ পায়নি।

ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ রিদা আবু রাস বলেন, ‘এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের কোনো নতুন সুবিধা এনে দেবে না। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া নতুন কোনো আন্তঃসরকারি প্রতিষ্ঠানের সদস্যও হতে পারবে না ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিন বর্তমানে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে আছে। পূর্ণ সদস্য হতে হলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ এবং তারপর সাধারণ পরিষদে ভোট প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতার কারণে যা এক প্রকার অসম্ভবই। তবুও, ফিলিস্তিনিদের পরিস্থিতি উন্নয়নের পথে একে প্রথম পদক্ষেপ বলা যেতে পারে।

গাজা যুদ্ধ বন্ধ করতে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে ইউরোপের চাপ বাড়ছে। বয়কট আন্দোলন এখন গতি পাচ্ছে, যার ফলে ইউরোভিশন প্রতিযোগিতা থেকে ইসরায়েলকে বহিষ্কার করা কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসরে তাদের অংশগ্রহণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নেও কিছু ইসরায়েলি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো এবং দেশটির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আলাপও উঠেছে। আবু রাস বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার এই পদক্ষেপের গাজায় ইসরায়েলের কার্যকলাপের ওপর সরাসরি কোনো প্রভাব নেই। তবে এটি এই দেশগুলোর পক্ষ থেকে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার ইচ্ছার ইঙ্গিত দিতে পারে, যা গাজায় ইসরায়েলের কার্যকলাপকে সরাসরি প্রভাবিত করবে। যেমন—দ্বিমুখী অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা অর্থাৎ ইসরায়েল থেকে অস্ত্র না কেনা এবং ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি না করার মতো বিষয়গুলো এখন কার্যকর হতে পারে।’

আবু রাসের মতে, মতাদর্শগত তেমন কোনো পরিবর্তন আসলে হয়নি। মূলত নিজেদের মুখ রক্ষার্থে এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে নেতারা। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো মৌলিক পরিবর্তন নয়, বরং ধীরে ধীরে জমতে থাকা ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া। কেন্দ্র-বামপন্থী সরকারগুলো নিজেদের জনগণকে খুশি করতে কম খরচের এক উপায় খুঁজে পেয়েছে। মূলত মুখ রক্ষার কৌশল।’

গত জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ঘোষণা করেছিলেন, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ থামাতে উদ্যোগ না নিলে তিনি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবেন। রবিবার তিনি আবারও বলেন, এই সিদ্ধান্ত বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন। তাঁর ভাষায়, “দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ধারণা এখন আরও দূরে সরে যাচ্ছে। তাই এই পদক্ষেপ সেই লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে নেওয়া হয়েছে।”

অস্ট্রেলিয়ার অবস্থানও একই রকম। দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ জানান, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সংস্কারে আরও অগ্রগতি করলে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও দূতাবাস খোলার মতো পদক্ষেপ বিবেচনা করা হবে।

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নাইজেরিয়ায় কোন আইএসকে আঘাত করল মার্কিন বাহিনী

নাইজেরিয়ায় কেন হামলা চালাল মার্কিন বাহিনী, খ্রিষ্টান নিপীড়নের সঙ্গে এর সম্পর্ক কী

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

ইরান ও ইসরায়েলে সমানতালে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি

পাকিস্তানকে এফ-১৬ আধুনিকীকরণের প্যাকেজ, ভারতকে কী বার্তা দিতে চান ট্রাম্প

ডার্ক ফ্লিট: নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেভাবে চলে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পাচার