ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে যে হামলা শুরু করেছে, তা যেন শুধু স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে নয়, বরং সেই কর্মসূচির মাথা হিসেবে পরিচিত বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধেও। এই হামলার তালিকায় ছিল ইরানের পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক প্রধান ফেরেইদুন আব্বাসির নাম। আব্বাসি সম্প্রতি এক টেলিভিশন আলোচনায় জানিয়েছিলেন, তিনি তাঁর দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়েছেন, আর নিজে ‘স্বাভাবিক জীবন’ যাপন করছেন। তবুও কেন তিনি ইসরায়েলের শিকারে পরিণত হলেন—তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আব্বাসি ছিলেন ইরানের পরমাণু প্রকল্পের প্রধান স্থপতিদের একজন। তাঁর নেতৃত্বেই নাটাঞ্জ, ফোর্ডো, আরাক এবং ইশফাহানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো নির্মিত হয়। ভূগর্ভস্থ ও শুষ্ক অঞ্চলে এসব স্থাপনা নির্মাণ ছিল নিরাপত্তার কৌশলগত চিন্তা থেকে।
২০১১ সালে এক মোটরসাইকেল আরোহী তাঁর গাড়িতে বোমা সংযুক্ত করে আব্বাসিকে হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। তবে পরবর্তীতে আরেক বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে স্যাটেলাইট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নিয়ন্ত্রিত অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়।
ইসরায়েলের মোসাদের এই হত্যাকাণ্ডগুলো মূলত ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে থামাতে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি বরং বিপরীত প্রভাব ফেলছে। ২০১৫ সালে পারমাণবিক বিশেষজ্ঞ সিগফ্রিড হ্যাকার ও আব্বাস মিলানি জানিয়েছিলেন, বিজ্ঞানীদের হত্যা আন্তর্জাতিক পরমাণু সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি হ্রাসের বদলে তা বাড়িয়ে তোলে।
আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬–এর সাবেক প্রধান অ্যালেক্স ইয়াংগার জানিয়েছেন, ইরান এখনো পারমাণবিক অস্ত্রায়নের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। দেশটি পরমাণু সমৃদ্ধিকরণকে একটি রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি এতটাই প্রসারিত যে, এখন একটি বা দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে সরিয়ে দিলে প্রকল্প থেমে যাবে না। এটি এখন বহু জনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল।
সব মিলিয়ে, ইসরায়েল হয়তো কিছু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে বার্তা দিতে পেরেছে। কিন্তু ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এখন এতটাই বিস্তৃত ও ঘনীভূত যে, শুধুমাত্র মানুষ হত্যা করে সেটিকে রুখে দেওয়া সহজ হবে না। তা এখনো এক অনিশ্চিত প্রশ্ন।