তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের তোড়জোড় চলছে। যদিও বিগত মাসগুলোতে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করা দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খান এখনো জেলে বন্দী আছেন।
তোশাখানা মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দিলে গত ৫ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় ইমরান খানকে। তোশাখানা মানে সরকারি কোষাগার। বিদেশি নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে পাওয়া যেকোনো উপহার এই কোষাগারে জমা দিতে হয়। কিন্তু এ ধরনের উপহার সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে অবৈধভাবে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ ছিল ইমরান খানের বিরুদ্ধে। মামলাটির রায়ে তিন বছরের সাজার পাশাপাশি পাঁচ বছরের রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখেও পড়েন ইমরান।
তবে পিটিআই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দেওয়া সেই সাজা গত ২৯ আগস্ট স্থগিত করেছে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (আইএইচসি)। সংক্ষিপ্ত রায়ে আইএইচসি সে সময় জানান, কর্তৃপক্ষ পিটিআই প্রধানকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। জামিনের জন্য এক লাখ টাকা জামানত হিসাবে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় ইমরান খানকে।
সাজা স্থগিত হলেও রাষ্ট্রীয় গোপন নথি তথা সাইফার হারানোর মামলা চলমান থাকায় এখনো জেলেই আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সম্প্রতি তাঁকে পাঞ্জাবের কুখ্যাত অ্যাটক কারাগার থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সাজা স্থগিত এবং নির্বাচন ঘনিয়ে আসার জের ধরে প্রশ্ন উঠেছে—পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে ইমরান খানের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
গত শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এই প্রশ্নটি সরাসরি পাকিস্তানের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার-উল-হক কাকারকেই করা হয়েছিল। জবাবে কাকার এটিকে তত্ত্বাবধায়ক নয়, আদালতের ওপর নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেছেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে কাকার বলেন, ‘ইমরান খানের ভাগ্য এখনো নিশ্চিত হয়নি। তার জন্য বিচারিক প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। বিচার বিভাগের সব অপশন ব্যবহার করা হলে আইনগতভাবেই তার নির্বাচনে নিষিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন হলে এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের করার কিছু নেই।’
কাকার জোর দিয়ে বলেন, পিটিআই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক কোনো কঠোরতা প্রদর্শন করা হবে না।
তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে এটাও জানান, যারা রাষ্ট্রবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২৫ কোটি জনসংখ্যার দেশে অভিযুক্ত দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ চিহ্নিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৯ মে ইমরান খান প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হলে পাকিস্তানে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছিল। সে সময় বিভিন্ন সেনা স্থাপনা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ওপর হামলা ও ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ ওঠে ইমরান খানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় শেষ পর্যন্ত ইমরান খানকেও নির্দেশদাতা হিসেবেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।