হোম > বিশ্লেষণ

জেলেনস্কিকে হত্যার ষড়যন্ত্রে ইউক্রেনের সেনা কর্মকর্তারাও, যুদ্ধের ভবিষ্যৎ কী

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বর্তমানে এমন একজনের নিশানায় রয়েছেন শত্রুদের সমূলে নির্মূল করার জন্য যিনি কুখ্যাত। সেই ব্যক্তিটি আর কেউ নন, স্বয়ং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দেশে হোক কিংবা বিদেশে পুতিনের রোষানল থেকে রক্ষা পাওয়া দুষ্কর! 

বর্তমানে রুশ প্রেসিডেন্টের এক নম্বর শত্রু যে জেলেনস্কি, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। এই মুহূর্তে জেলেনস্কিকে বধ করতে পারলেই এক নিমেষে ইউক্রেন যুদ্ধের মোড় ঘুরে যাবে। যুদ্ধ জয়ের আনন্দে আরও পরাক্রমশালী হয়ে উঠবেন পুতিন। আর এ জন্যই হয়তো একের পর এক হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (৭ মে) জেলেনস্কিকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে ইউক্রেনেরই দুই উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কর্নেল পদমর্যাদার ওই দুই কর্মকর্তা জেলেনস্কির নিরাপত্তায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নিজেদের লোক খুঁজছিলেন, যারা প্রেসিডেন্টকে অপহরণ কিংবা খুন করতে সক্ষম। 

অবশ্য এটিই প্রথম নয়। ইউক্রেনের সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু পর থেকে বেশ কয়েকবারই অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার হাত থেকে বেঁচে গেছেন জেলেনস্কি। রুশ এবং রাশিয়ার এজেন্টরাই এ ধরনের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, যুদ্ধে দ্রুত বিজয় অর্জনের জন্য রাশিয়ার নিযুক্ত একাধিক দল ইউক্রেনে প্রবেশ করে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিসহ দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বকে বিনাশ করার পরিকল্পনা করেছে। 

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক এর আগে বলেছিলেন, রাশিয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হলো—শীর্ষ নেতৃত্বকে সরিয়ে দিয়ে দেশজুড়ে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করা এবং নিজেদের পুতুল সরকার বসিয়ে দেশ পরিচালনা করা। 

ইউক্রেন সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই ইউক্রেনের শীর্ষ নেতৃত্বকে নির্মূল করার জন্য চেচনিয়ার নেতা রমজান কাদিরভকে নির্দেশ দিয়েছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে পরের মাসের শুরুতেই ইউক্রেনের গোয়েন্দারা দাবি করেছিলেন, জেলেনস্কিকে হত্যা করার জন্য পাঠানো চেচেন কমান্ডোদের একটি দলকে ইউক্রেনের প্রতি সহানুভূতিশীল এফএসবি এজেন্টদের সহায়তায় হত্যা করা হয়েছে। 

পাশাপাশি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই ইউক্রেনের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নির্মূল এবং গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কিয়েভে এক গোপন মিশন শুরু করেছিল রাশিয়ার বেসরকারি সামরিক সংস্থা রেডুট–পিএমসি। এই উদ্দেশ্যে তাদের এক হাজারেরও বেশি যোদ্ধা কিয়েভ অঞ্চলে প্রবেশ করে। তবে ইউক্রেন সরকারের দক্ষতায় রেডুটের মিশন ব্যর্থ হয় এবং ওই দলটির ৯০ শতাংশ সদস্যই প্রাণ হারায়। 

দ্য টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলেনস্কিকে হত্যার উদ্দেশে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে ভাড়াটে যোদ্ধার দল ভাগনার গ্রুপের অন্তত ৪০০ সেনা কিয়েভে অবস্থান করছিল। জেলেনস্কিকে হত্যা করে ইউক্রেনের সরকারকে অস্থিতিশীল করে দেওয়ার নির্দেশ ছিল তাদের ওপর। 

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরের বছর ২০২৩ সালের আগস্টে জেলেনস্কিকে হত্যার আরও একটি চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনী। সেই সময় এই বাহিনী এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ইউক্রেনের মিকোলাইভ প্রদেশে জেলেনস্কির সফরের বিষয়ে নানা রকম স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহ করছিলেন তিনি। 

চলতি বছরের এপ্রিলে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয় পোল্যান্ডে। পোলিশ ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধেও জেলেনস্কিকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। কারণ ওই ব্যক্তি পোল্যান্ডের জেসো–জাসিওঙ্কা বিমানবন্দরের খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। কারণ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি মিত্র রাষ্ট্রের ওই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করতেন। ধারণা করা হয়, রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা বিমানবন্দরের তথ্য সংগ্রহের জন্য গ্রেপ্তার হওয়া পোলিশকে দায়িত্ব দিয়েছিল। 

এরই ধারাবাহিকতায় জেলেনস্কিকে সর্বশেষ হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গত ৭ মে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুই কর্নেলকে। 

জেলেনস্কিকে এখন পর্যন্ত কতবার হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বিবরণ পাওয়া যায়। যুদ্ধের শুরুর দিকেই ইউক্রেনের প্রাভদা নিউজের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেছিলেন, ‘আমাদের বিদেশি বন্ধুরা দুই বা তিনটি হত্যা চেষ্টার কথা বলছে। আমার বিশ্বাস, এ ধরনের হত্যা চেষ্টা এক ডজনেরও বেশিবার হয়েছে।’ 

অপরাপর প্রচেষ্টা থেকেই বোঝা যায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে নির্মূল করতে কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের বিগত সরকারগুলোর ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং দুই দেশের সেনাবাহিনীর অতীত ঘনিষ্ঠতা থেকে অনেকেই ধারণা করেন, জেলেনস্কির সম্ভাব্য হত্যাকারী হয়তো তাঁর খুব কাছেই অবস্থান করছে। তাঁকে রক্ষা করার ভান ধরে আছে। 

কিন্তু প্রশ্ন হলো—জেলেনস্কি যদি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তবে এটি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা কিংবা পরিকল্পনা কি ইউক্রেনের আছে? 

এ বিষয়ে ২০২২ সালের ৬ মার্চ সিবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছিলেন, জেলেনস্কির সম্ভাব্য হত্যাকাণ্ড মোকাবিলা করার জন্য ইউক্রেন সরকার আগে থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছে। তবে এর বেশি কিছু আর খোলাসা করেননি ব্লিঙ্কেন।

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

ইরান ও ইসরায়েলে সমানতালে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি

পাকিস্তানকে এফ-১৬ আধুনিকীকরণের প্যাকেজ, ভারতকে কী বার্তা দিতে চান ট্রাম্প

ডার্ক ফ্লিট: নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেভাবে চলে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পাচার

এআই চাকরি কেড়ে নিচ্ছে আমেরিকায়, কিন্তু নিয়োগ বাড়াচ্ছে ভারতে—কীভাবে

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ না সম্ভাবনা

শত বছর আগে জাপানের কাছে হারের বদলা চান সি চিন পিং!

কোন দেশে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য সর্বাধিক, বাংলাদেশের চিত্র কেমন

যুদ্ধক্ষেত্রে কতটা দক্ষ ইতালির জঙ্গি বিমান ইউরোফাইটার টাইফুন

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত থামেনি, ট্রাম্প ‘থামিয়েছেন’ দাবি করা অন্য যুদ্ধগুলোর কী অবস্থা