হোম > আড্ডা

আমারই মুরগি খায়া

পুরান ঢাকার বাংলাবাজার মোড়ের আগেই হাতের বাঁয়ে ছিল গোবিন্দধাম। নামটি শুনে অনেকেরই মনে হতে পারে, এটা বুঝি মন্দির অথবা খুব বড়লোক কারও বাড়ি। কিন্তু আসলে তা নিতান্তই সাধারণ একটি রেস্তোরাঁ। এই রেস্তোরাঁ যিনি চালাতেন, তার নাম ছিল গোবিন্দ। আর এ কারণেই রেস্তোরাঁর নাম হয়ে গেল গোবিন্দধাম।

সৈয়দ শামসুল হক আসতেন এই রেস্তোরাঁয় চা খেতে। কখনো সঙ্গে থাকতেন শহীদ কাদরী। সেই চা ছিল বৈশিষ্ট্যময়। গরুর দুধ জাল দিয়ে ঘন করে রাখা হতো। তাতে চায়ের পাতা সেদ্ধ দেওয়া হতো। চিনি প্রায় দেওয়াই হতো না, দিলে একেবারে এক চিমটে। মনে হতো স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে এই চা।

গোবিন্দধামে উঠতে হতো রাস্তা থেকে কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভেঙে। গোটা তিনেক টেবিল ছিল শ্রীহীন। হাতলবিহীন চেয়ার। টিমটিমে একটা বাতি জ্বলত মাথার ওপর। আলো-আঁধারিতে ছিল আরেকটি ঘর। এখানে ছিল ছোট্ট একটা টেবিল আর একটা চেয়ার।

এই আয়োজনটা করা হয়েছিল ব্রজেন দাসের জন্য। হ্যাঁ, সাঁতারু ব্রজেন দাস। তিনি তখনো ইংলিশ চ্যানেল পার হননি। সরকারি সুইমিংপুলে তখন সাঁতারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। সাঁতার প্রশিক্ষণ নিয়ে ফরাশগঞ্জ ফিরে যাওয়ার পথে তিনি থামতেন গোবিন্দধামে। হিন্দুর ছেলে, রামপাখি বা মুরগি খাওয়া হতো না তাঁদের বাড়িতে। তাই গোবিন্দ একটা আস্ত বাচ্চা মুরগি রান্না করতেন বেশ ঝাল দিয়ে। সন্ধ্যাবেলা ব্রজেন দাস এসে বসতেন ছোট্ট ঘরটায়। তাঁর সামনে হাজির করা হতো রান্না করা বাচ্চা মুরগি। একটি আস্ত পাউরুটি দিয়ে পুরো মুরগিটা খেয়ে নিতেন ব্রজেন দাস। তাঁর খাওয়া দেখে জিবে জল আসত সৈয়দ হকদের। তাঁরা বুঝতেন, এভাবেই শরীর গঠন করছেন ব্রজেন দাস।
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ব্রজেন দাস যখন মেডেল নিয়ে দেশে ফিরলেন, তখন গোবিন্দধামের মালিকের সে কি আনন্দ! গর্বে তাঁর মাটিতে পা পড়ে না। তিনি শুধু বলে যাচ্ছিলেন; ‘আমারই মুরগি খায়া!’

সূত্র: সৈয়দ শামসুল হক, তিন পয়সার জোছনা, পৃষ্ঠা: ১৪৯-১৫০

কোচির ইহুদি পরিবারের ঐতিহ্য যেভাবে বাঁচিয়ে রাখছেন এক মুসলিম

গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

আমাদের অর্জন অনেক

এবার অক্সফোর্ডের বর্ষসেরা শব্দ ‘রেজ বেইট’—এর অর্থ কী

রাষ্ট্রীয় সংস্কার করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট

জল্লাদখানা বধ্যভূমি

সিদলের স্বাদ

লেখকের সামাজিক অঙ্গীকার