লেভ তলস্তয় মনে করতেন, প্রতিটি মানুষকেই পরিশ্রম করতে হবে, সাদাসিধে জীবনযাপন করতে হবে। তিনি নিজেও এই নীতি মেনে চলার চেষ্টা করতেন। এক ঘোড়ার গাড়িতে করে এক মহিলা এসে পৌঁছালেন রেলস্টেশনে। কিন্তু এসেই পড়লেন বিপদে। ঘোড়ার গাড়ি থেকে তাঁর মালসামান নামিয়ে ট্রেনে ওঠানোর মতো কোনো কুলি নেই সেখানে। ট্রেন ছেড়ে দেবে এখনই। এদিক-ওদিক তাকিয়ে তিনি দেখলেন, একজন চাষাভুষো দাঁড়িয়ে আছে প্ল্যাটফর্মে। উপায় না দেখে তিনি ওই চাষাকে অনুরোধ করলেন, ‘তুমি কি আমার মালপত্রগুলো একটু ট্রেনে তুলে দেবে? আমি তোমাকে টাকা দেব।’
চাষা রাজি হলেন। মালগুলো নিয়ে ট্রেনে তুলে দিলেন। ভদ্রমহিলা চাষার হাতে তুলে দিলেন বিশ কোপেক। চাষা সেই পয়সা নিয়ে মহিলাকে ধন্যবাদ দিয়ে নিজের ওয়াগনের দিকে চলে গেলেন।
কেটে গেল একটা বছর। মস্কোর এক ইনস্টিটিউটে সমাজকল্যাণমূলক কাজে জড়ো হয়েছেন মস্কোর সব নামীদামি মানুষ। সভাপতি ঘোষণা করলেন, ‘এবার বক্তব্য দেবেন কাউন্ট লেভ নিকোলায়েভিচ তলস্তয়। তলস্তয় কথা বললেন ফরাসি ভাষায়। সভায় ছিলেন এক বছর আগের সেই ভদ্রমহিলা। তিনি একবার লজ্জায় লাল হন, একবার ভয়ে আড়ষ্ট হন। তিনি ঠিক চিনেছেন, এই লোকটাই সেদিন বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সাহায্যের হাত। ইনি যে তলস্তয়!
বিরতিতে সেই নারী এলেন তলস্তয়ের সামনে। অনুনয় করে বললেন, ‘লেভ নিকোলায়েভিচ, ঈশ্বরের দোহাই, ক্ষমা করে দিন আমাকে। আমি সেদিন রেলস্টেশনে আপনাকে অপমান করেছি।’ তলস্তয় চিনলেন সেই নারীকে। বললেন, ‘শান্ত হোন। ভয়ংকর কিছু ঘটেনি। আমি সৎ মানুষের মতোই সেদিন উপার্জন করেছিলাম। আপনি সততার সঙ্গেই আমাকে আমার পাওনা গন্ডা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।’
সূত্র: লাইভলিব. রু