শহীদজননী জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ পড়ার পর থেকেই শেখ হাসিনার মনে হতো, তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন। দুরারোগ্য ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন তখন জাহানারা ইমাম। বিদেশে চিকিৎসা করিয়ে ফিরেছেন তখন। এক সন্তানহারা মায়ের কাছে গেছেন এক মা-বাবা-ভাইহারা নারী। কে কাকে সান্ত্বনা দেবেন? চোখের পানিতেই বুঝি অনেক কথা বলা হয়ে গেল। দুজন দুজনকে ধরে কাঁদলেন অনেকক্ষণ।
শহীদজননী বললেন, ‘তোমার মনকে অনেক শক্ত করতে হবে। অনেক কঠিন দায়িত্ব তোমার ওপর।’ শেখ হাসিনা তাঁর দোয়া চাইলেন।
এরপর অনেকবার তাঁদের দেখা হয়েছে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, গণ-আদালতের কার্যক্রমে তাঁদের দেখা হয়েছে। শেখ হাসিনা চেষ্টা করেছেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভায় যেন জনসমাগম হয়, তা নিশ্চিত করতে। জাহানারা ইমাম বলেছেন শেখ হাসিনাকে, ‘আমি জানি, তুমি এ আন্দোলনে আমার সঙ্গে আছ।
গণ-আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত অনেক হেনস্তা করা হয়েছিল শহীদজননীকে। গণ-আদালত যাতে না বসতে পারে, সে জন্যও নানা মহলের চাপ ছিল।
১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার হয়। অভিযোগকারী হন আনিসুজ্জামান, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও সৈয়দ শামসুল হক। ২৬ মার্চ ১৪৪ ধারা জারি করল সরকার। ২৫ মার্চ রাতে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে মিলিত হন তাঁরা। সেখান থেকে হেঁটে রেসকোর্স ময়দানে আসা হবে বলে ঠিক হয়। আদালতে রায় হয় গোলাম আযমের যে অপরাধ, তা প্রমাণিত হয়েছে, এই অপরাধ সব গণতান্ত্রিক দেশে মৃত্যুদণ্ডতুল্য অপরাধ।
এই আন্দোলনে শহীদজননী জাহানারা ইমামের পাশে শেখ হাসিনা ছিলেন সব সময়। এর অনেক পরে শেখ হাসিনা একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের পথ উন্মুক্ত করেন এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার হতে থাকে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন।
সূত্র: শেখ হাসিনা, শেখ মুজিব আমার পিতা, পৃষ্ঠা ৮৩-৮৮