আমরা অনেক নীতিনৈতিকতার বকবকানির সমাজ, রিয়্যাকশনারি সমাজ। আর গুরুত্বপূর্ণ কথা এই যে, আমি শ্লীলতার রাজনীতির বাইরে মাঠের লড়াই নিয়ে বলতে চাইছি। এখানে গল্পে-কাহিনিতে ক্ষমতাহীন ও ক্ষমতাশালী মানুষের মধ্যেকার লড়াইটা পুরো অস্তিত্ববাদী। সেটা এই অর্থে যে, এখানে ক্ষমতাহীন মানুষ তার অস্তিত্বের ফিলোসফিক্যাল তল খুঁজে পাচ্ছে না, ব্যাপারটা এমন না। এখানে বায়োলজিক্যাল অস্তিত্ব হারানোর অর্থেই গরিব মানুষের সমস্যা এক এগজিসটেনশিয়াল সমস্যা। সেই সমস্যাকে বুঝে, মোকাবিলা বুঝে, মোকাবিলা করতে গিয়ে সাহিত্যিককে হঠাৎ আক্ট্রিভিস্ট সাজলে চলবে না। মরমি জায়গা থেকে সমস্যাতে আলো ফেললে তা-ও কিছু হতে পারে।
আলটিমেটলি ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থাগুলোকে নিয়ে কথা বলার জন্যই আমাদের কলম ধরা। সেই দুরবিনের মধ্যে গণতন্ত্র পড়ে, বাক্স্বাধীনতা পড়ে, ক্ষুধা থেকে মুক্তি, ধর্মপালনের নিরাপত্তা, আদালতে-সচিবালয়ে-হাসপাতালে-ট্রাফিক সিগন্যালে ব্যুরোক্রেসির দশ দুর্গা হাতে দশ হাতির নাচন কমানো পড়ে। মানবাধিকারও পড়ে। আমি বলছি, সাহিত্যিক তার এসব এথিক্যালি রেসপনসিবল পজিশনের জয়গান গাওয়া বন্ধ করে ভাষার বিমূর্ততা ও রহস্যময়তাকে ধারণ করুন, তাহলেও এগুলোর জন্য লড়াই আরও জোরদার হবে। পুরোনো গদ্যে, বাক্যে, শব্দে, ভাষায় আমাদের সত্যি আর চলছে না।
শ্রেণিসংগ্রামের বা শ্রেণি বনাম শ্রেণির বাস্তব সমস্যাগুলো নিয়ে বাস্তবভিত্তিক মোকাবিলার পথে সাহিত্যের সেন্ট্রালিটি এ দেশে এমনিতেও নেই। কারণ, এ দেশের ‘সংগ্রামী সাহিত্যের’ ভাষা পুরোনো। ওতে না আছে প্রভোকেশন, না আছে নতুন করে শব্দ ঝলকে ওঠার দ্যুতি। সব পুরোনো। সবই স্থির, ফর্মুলাইক ও মিথ্যা এক শতাব্দী-প্রাচীন প্রতীক-রূপকে ভরা ন্যারেটিভ কনভেনশন। পুরো ন্যারেটিভ ডিভাইসটাই পচা সব মেটাফোর এবং রুগ্ণ সব দর্শন, রটেন (পচা) দর্শন দিয়ে ভরা।
সূত্র: মাসরুর আরেফিনের সঙ্গে ইকতিজা আহসানের আলাপ। মানবতাবাদী সাহিত্যের বিপক্ষে, পৃষ্ঠা-২৮৭।