ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সংসদ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক উৎসব করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মন কেড়ে নিয়েছিল। নানা কাজের মধ্যে ১৯৬৯ সালে সংসদ ঠিক করেছিল রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ নাটকটি মঞ্চস্থ করবে। সৈয়দ হাসান ইমাম হবেন এর নির্দেশক। এর আগে কলকাতার বহুরূপীর হয়ে শম্ভুমিত্র নাটকটি মঞ্চে এনে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। সেটা জানা ছিল হাসান ইমামের। সেই নাটকের কথা ভেবেই এই নাটকে হাত দেওয়া ঠিক হবে কি না, সে ব্যাপারে হাসান ইমাম সংশয়ী হয়ে উঠেছিলেন। পরে অবশ্য রাজি হন।
নানা কারণেই সে সময় নাটকটি মঞ্চস্থ হতে পারেনি। বোঝাই তো যাচ্ছে, উনসত্তর সাল মানেই আমাদের ইতিহাসের উত্তাল সময়। পরে ১৯৭০ সালের ৫ ও ৬ জানুয়ারি নবাগত সংবর্ধনা উপলক্ষে বাংলা একাডেমির উন্মুক্ত স্থানে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। এ নাটকে রাজা ও নন্দিনী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন যথাক্রমে গোলাম মুস্তাফা ও কাজী তামান্না। জাতীয় দৈনিক সংবাদে ৮ জানুয়ারি এ নাটক নিয়ে একটি রিভিউ বেরিয়েছিল। সেটি লিখেছিলেন জামিল শরাফী। সে লেখার কয়েকটি বাক্য ছিল এমন:
‘শোষণ ও বন্ধন থেকে মানুষের মুক্তির ব্যাকুলতা এবং সংগ্রামকে ভিত্তি করে প্রায় ৪৫ বছর আগে লেখা রবীন্দ্রনাথের এই নাটকটির অভিনয় দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, আমাদের বিশেষ সমসাময়িক জীবনের পটভূমিতে ‘রক্তকরবী’ যেন আগের চেয়েও বেশি অর্থময় হয়ে উঠেছে। মনে হচ্ছিল, সংগ্রামী সাধারণ মানুষ এই নাটকের মর্মোদ্ধার যতখানি করতে পারে, আর কেউ ততখানি পারে না। পাক-ভারত স্বাধীনতাসংগ্রামের একপর্যায়ে বিরাট গণ-অভ্যুদয় ঘটে যাওয়ার পরে নতুনতর প্রস্তুতির মুখে এই নাটকটি রচিত হয়েছিল। এই সংগ্রামী উপাদানটিকে বাদ দিয়ে একে আলগাভাবে বিশ্লেষণ করতে গিয়েই তাত্ত্বিকরা একে মরমিবাদী রহস্যময়তায় নিয়ে ফেলেছেন।’
এবার বলার সময় এসেছে। জামিল শরাফী ছদ্মনামটি ছিল প্রখ্যাত রণেশ দাশগুপ্তের।
সূত্র: আবুল হাসনাত, হারানো সিঁড়ির চাবির খোঁজে, পৃষ্ঠা: ১৯৬-২০১