১৯৭৯ সালের ২৯ মে ছিল দ্বিজেন শর্মার জন্মদিন। তিনি তখন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রগতি প্রকাশনের বাংলা বিভাগের অনুবাদ শাখায় কাজ করছেন। অফিস থেকে জানানো হলো, দ্বিজেন শর্মার পঞ্চাশ বছরে পা দেওয়ার দিনটি উদ্যাপনের যাবতীয় আয়োজন তারাই করবে। কিন্তু বাঙালিদের পক্ষ থেকে কিছু আয়োজন না করলে কি চলে। দ্বিজেন শর্মার স্ত্রী দেবী শর্মা দেশীয় রান্নাবান্না আর মিষ্টান্ন তৈরির দায়িত্ব নিলেন। রান্না করলেন মোরগ পোলাও, লুচি, আলুর চপ আর খাসির মাংস। থাকল কালোজাম।
দুপুর ১২টা নাগাদ দ্বিজেন শর্মারা পৌঁছে গেলেন অফিসে। বাংলা বিভাগের প্রধান রাইসা ভাসিলিয়েভ্না আড়ম্বরে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রথম টোস্ট করলেন। বড় টেবিলে সাজানো ছিল অপূর্ব সব ফুলের তোড়া। মাছ, মাংস আর সবজি দিয়ে বিভিন্ন রকমের সালাদ তৈরি করেছিল রাশানরা। সসেজ আর পনির ছিল অনেক। ছিল নানা রকম রুচিসম্মত পানীয়। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দ্বিজেন শর্মাকে নিয়ে টোস্ট চলতে থাকল। এরই মধ্যে নতুন করে এল গরম খাবার—ধূমায়িত মাখনে ভাজা আলু, সসেজ, লুচি, বিরিয়ানি।
কেক কাটার সময় হলো। এবার দ্বিজেন শর্মাকে বলতে বলা হলো। দ্বিজেন শর্মা দাঁড়ালেন। বললেন, ‘পঞ্চাশ বছরের জীবন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল স্বপ্নের দেশ। এখানে এসে প্রগতি প্রকাশনে কাজ করে আমার একধরনের পূর্ণতার উপলব্ধি হচ্ছে। ধন্যবাদ সকলকে। এমন আন্তরিকতা, আতিথেয়তা, ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে, সমৃদ্ধ করেছে। প্রগতি প্রকাশনের আরও সমৃদ্ধি এবং সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করি।’
অনুষ্ঠান তো শেষ হলো। কিন্তু তাতে কি বাঙালিদের মন ভরে। দ্বিজেন শর্মার বাড়িতে বসল ‘সান্ধ্য অধিবেশন’। মাছ ছিল, চট করে ভাত, আলুভর্তা আর ডাল রান্না হলো। চলল গান। সে রাতে ঈষৎ মত্ত অরুণ সোম বাঁ হাত কোমরে আর ডান হাত মাথার ওপরে তুলে কোমর বাঁকা করে যে নাচ নেচেছিলেন, তা উপস্থিত কেউই আর ভোলেনি কখনো।
সূত্র: দেবী শর্মা, আমার মুক্তিযুদ্ধ, রাশিয়ায় ঘরগেরস্থি ইত্যাদি, পৃষ্ঠা ৬৯-৭০