শামসুর রাহমান ছেলেবেলায় সংগীত বা চিত্রকলা সম্পর্কে বাড়ির কারও কোনো আগ্রহ দেখেননি। তবে ঢাকাই সংস্কৃতির কিছুটা ছোঁয়া পেয়েছিলেন তিনি কাওয়ালি আর মেরাসীনের মাধ্যমে। মেরাসীন ছিল একধরনের মেয়েলি গীত। দুই দল কাওয়ালের মধ্যে প্রতিযোগিতার কথা শামসুর রাহমান কখনোই ভোলেননি।
স্কুলের বই, কোরআন শরিফ আর বিষাদসিন্ধু ছাড়া অন্য কোনো বই শিশু বাচ্চুর (শামসুর রাহমানের ডাক নাম) চোখে পড়েনি কখনো। তবে আম্মার কাঠবাক্সে একদিন তিনি দেখেছিলেন নীল রঙের ‘আনোয়ারা’ উপন্যাসটি। বড় হয়ে অনেক খুঁজেছেন, কিন্তু সেটা আর পাননি।
বাবা পড়তেন কোরআন শরিফ, বাংলা পঞ্জিকা আর খবরের কাগজ। শিশুদের জন্য কোনো বই পড়ার সৌভাগ্য হয়নি। তবে একটি মনকাড়া বই তিনি পড়েছিলেন শৈশবে, যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘হাসিখুশি’। সেই বইয়ের লেখা আর ছবিতে পাগল ছিলেন বাচ্চু। তেড়ে আসা অজগরের ছবি কিংবা হারাধনের দশটি ছেলেকে নিয়ে লেখা পদ্য মন কেড়ে নিয়েছিল। পদ্যের ছলে অঙ্ক শিখিয়ে দেওয়ার এ ব্যাপারটি খুব ভালো লেগেছিল।
সিগনেট প্রেস থেকে যে অনবদ্য বইগুলো বের হতো, সেগুলো চোখেও দেখেননি শামসুর রাহমান। উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর ‘টুনটুনির বই’, সুকুমার রায়ের ‘হযবরল’, ‘আবোলতাবোল’, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ক্ষীরের পুতুল’, ‘নালক’ ইত্যাদি বই যদি তখন প্রকাশিত হতো, তাহলেও বাড়ির পরিবেশের কারণে সেসব পড়তে পারতেন না।
বই কেনার নেশা এসেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর। নানা বাহানায় আম্মার কাছে হাত পেতেছেন এবং বই কিনেছেন। এত বই কিনতে দেখে আম্মা একবার শামসুরকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এত বই কি সত্যি সত্যি তোর খুব দরকার?’
শামসুর বলেছিলন, ‘আম্মা, আমার আরও বই চাই।’
জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বইয়ের চাহিদা মেটেনি তাঁর।
আজ ২৩ অক্টোবর এই স্বনামধন্য কবির জন্মদিন।
সূত্র: শামসুর রাহমান, শামসুর রাহমান গদ্য সংগ্রহ, পৃষ্ঠা ২৩-২৪