বাবা ছিলেন খুব কড়া। মেয়েরা কেউ সংস্কৃতি জগতে যুক্ত হোক, তা একেবারেই চাইতেন না। মনে করতেন নাটক-থিয়েটারের গানবাজনা শরিয়তবিরোধী কার্যকলাপ। কিন্তু ফেরদৌসী মজুমদার সে পথেই পা বাড়ালেন। অগ্রজ মুনীর চৌধুরী অভয় দিয়ে বলেছিলেন, ‘আব্বাকে আমি সামলাব। তোর চিন্তা করতে হবে না!’
মূলত মুনীর চৌধুরীর প্রশ্রয়েই নাটকের সঙ্গে যুক্ত হলেন তিনি। নাটকটি ছিল শওকত ওসমানের লেখা ‘ডাক্তার আব্দুল্লাহর কারখানা’।
বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনে নাটক করেছেন অনেক। এর মধ্যে মুনীর চৌধুরীর লেখা দুটো একাঙ্কিকা ছিল। ‘দণ্ড’ ও ‘দণ্ডধর’ ছিল নাটক দুটির নাম। ‘দণ্ডধর’ নাটকের সময়কার একটি ঘটনা এখনো মনে পড়ে তাঁর।
ফেরদৌসী মজুমদারের সঙ্গে সংলাপ প্রক্ষেপণের সময় একটি ছেলে সংলাপ ভুলে যেত। তখন সে বিমুগ্ধ নয়নে ফেরদৌসীর দিকে তাকিয়ে থাকত। ছেলেটা যে ফেরদৌসীর প্রেমে পড়েছিল, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ ছিল না।
সে যাক, এরপর দেশে যখন টেলিভিশন এল, তখন সেখানেও অভিনয় শুরু করলেন ফেরদৌসী। ১৯৬৪ সালে ‘একতলা দোতলা’ নামে মুনীর চৌধুরীর লেখা নাটকেই অভিনয় করলেন। সেটা ছিল টেলিভিশনের প্রথম নাটক। টেলিভিশনে অনেক নাটকই করেছেন। তবে ‘তামসী’ নামে নীলিমা ইব্রাহীমের লেখা একটি নাটক জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ফেরদৌসী মজুমদারের। সেই নাটকে অভিনয়ের পর একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন, তখন মা-বাবার ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের কথাবার্তা শুনে রীতিমতো ব্রেক করেন ফেরদৌসী। বাবার হাতে সকালের তাজা খবরের কাগজ।
মায়ের দিকে তাকিয়ে বাবা বলছেন, ‘দ্যাখো দ্যাখো, তোমার মাইয়ার প্রশংসা করি লিখছে, তামসীতে ফেরদৌস আরা বেগম অনবদ্য অভিনয় করিয়াছে।’
বাবার সে কী আনন্দ! নাটক যে জীবনের অঙ্গ হতে পারে, সে কথা তিনি বুঝেছিলেন। সেদিন থেকে অভিনয় নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হয়নি ফেরদৌসী মজুমদারের।
সূত্র: ফেরদৌসী মজুমদার, অভিনয় জীবন আমার, পৃষ্ঠা ১২১-১২৪