এখন তো দেবব্রত বিশ্বাসের কণ্ঠ অনেকেরই পছন্দ। রবীন্দ্রনাথের গানের পৌরুষ অনুভব করা যায় দেবব্রত বিশ্বাসের মধ্যে। কিন্তু রবীন্দ্রসংগীত গাওয়ার পথে তাঁকে অনেকবার অপমানিত হতে হয়েছে, সে কথা তিনি লিখেছেন তাঁর ‘ব্রাত্যজনের রূদ্ধসংগীত’ বইয়ে। তাঁর গাওয়া রবীন্দ্রসংগীতে বারবার ভেটো দিয়েছে বিশ্বভারতী। সে এক কলঙ্কজনক ইতিহাস।
রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে একটা ধারণা ছিল যে, ভালো মানুষের মতো মুখ করে আপনমনে গাইতে হবে সে গান। কিন্তু দেবব্রত বিশ্বাস যখন ঠাকুরের উদ্দীপনামূলক গানগুলো গাইলেন কথা বলার ভঙ্গিতে অথবা ধমক দিয়ে, তখন বোঝা গেল, রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্কারের সব দায়িত্ব বিশ্বভারতীর হতে পারে না। তাঁকে বারবার নানাভাবে আবিষ্কার করা যায়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় একবার দেবব্রত বিশ্বাস ডাকলেন সন্জীদা খাতুন আর রাখী চক্রবর্তীকে। গেরুয়া পোশাকে বসে আছেন শিল্পী। অনেকগুলো ছবি এঁকেছেন, যার মধ্যে আছেন তাঁর গানের বিচারকেরা! বোর্ড থেকে গান পাস হলেই তা রেকর্ড করার অনুমতি মিলবে। তাদের নিয়েই সে ছবিতে ঠাট্টা।
‘তুমি রবে নীরবে’ গানটিতে তিনি গেয়েছিলেন, ‘মম সকল স্বপন তুমি ভরিবে সৌরভে, নিশীথিনীসম’। এই বিচারকেরা দেবব্রতকে দেখিয়ে দিলেন, ‘গীতবিতানে’ আছে ‘মম সফল স্বপন’। দেবব্রত তা মানতে রাজি নন। কিন্তু বোর্ডও মানল না দেবব্রতের কথা।
পরে সন্জীদা খাতুন শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করতে গিয়ে শোভনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপদেশে ‘তুমি রবে নীরবে’ গানটির ইংরেজি অনুবাদ দেখেছিলেন। সেখানে স্পষ্ট লেখা ছিল, ‘অল মাই ড্রিম’। তার মানে ভুল দেবব্রত বিশ্বাস করেননি, ভুল করেছিলেন গীতবিতানের পরবর্তী সংস্করণের সম্পাদক।
তথ্যসূত্র: সন্জীদা খাতুন, স্মৃতিপটে গুণিজন, পৃষ্ঠা: ১৯-২০