সাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য চাকরিজীবনের শুরুতে কলকাতার ছোটখাটো এক পত্রিকার খুবই অল্প বেতনের সাংবাদিক ছিলেন। দিল্লিতে ছিল পোস্টিং। ভারত-চীন যুদ্ধের আগে থমথমে পরিবেশ। সেটা ১৯৫৯-৬০ সালের দিকের কথা।
সে সময় আর ‘হিন্দি চীনি ভাই ভাই’ শোনা যাচ্ছে না। একদিন সকালে লোকসভায় নেহরু বললেন, চীনের সঙ্গে কোনো আলোচনাই হতে পারে না। সে কথাই পার্লামেন্ট হাউস পোস্ট অফিস থেকে টেলিগ্রাম করে নিজের পত্রিকা অফিসে পাঠিয়ে দিলেন নিমাই ভট্টাচার্য। সাউথ ব্লকে দেশরক্ষামন্ত্রী কৃষ্ণমেননের কাছে যেতেই তিনি হেসে বললেন, ‘প্রাইম মিনিস্টারের অফিসে যাও, ভালো খবর আছে।’
ফরেন সেক্রেটারি ও সেই মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন তখন নেহরুর ঘরে বারবার যাতায়াত করছেন। নেহরুও বেরিয়ে এলেন হাসিমুখে। জানতে চাইলে নেহরু কিছুই বললেন না। শুধু হাসলেন।
নিমাই ভট্টাচার্য বললেন, ‘নিশ্চয়ই কোনো ভালো খবর পেয়েছেন?’
‘পেয়েছি বৈকি!’ হ্যাঁ, আমার এক বন্ধু আসছেন বলে আমি খুশি।
নিমাই ভট্টাচার্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আন্দাজে ঢিল ছুড়লেন, ‘দাদা, তাহলে চৌ এন লাই আসছেন?’
তিনি অবাক হয়ে বললেন, ‘তুমি কী করে জানলে?’
আর অপেক্ষা করলেন না নিমাই। দ্রুত টেলিগ্রাম করলেন অফিসে, ‘চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ভারতে আসছেন।’
জাপানের কিওদো নিউজ এজেন্সির বিশেষ সংবাদদাতা শিমিজু পাশের টেবিলে কাজ করছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘হোয়াত আর ইউ তাইপিং?’
নিমাই তাঁকে দেখে যেতে বললেন। জাপানি ভদ্রলোক তা বিশ্বাস করলেন না। পরদিন কলকাতায় ছাপা হলো নিমাই ভট্টাচার্যের রিপোর্ট। শিমিজু বললেন, ‘আমি তোমার কাগজকে কোট করে খবর পাঠাই?’
স্বচ্ছন্দে রাজি হলেন নিমাই ভট্টাচার্য।সেটা জাপানি পত্রিকায় ছাপা হওয়ার পর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল। পরদিন লোকসভায় পণ্ডিত নেহরু ঘটনাটি জানালেন। শিমিজু দৌড়ে এসে নিমাই ভট্টাচার্যকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকলেন।
সূত্র: নিমাই ভট্টাচার্য, জার্নালিস্টের জার্নাল, পৃষ্ঠা: ১৯-২০