উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী সবার সঙ্গেই মিষ্টি ব্যবহার করতেন। কাউকে অভদ্রতা করতে দেখলেও তাঁর সঙ্গে ভদ্র আচরণ করেই তাঁর ভুলটা ধরিয়ে দিতেন। একবার তিনি গেছেন এক পোস্ট অফিসে। পোস্টমাস্টার মশাই খুবই ঢিলেঢালা। সেই সঙ্গে তাঁর তিরিক্ষি মেজাজ। পান থেকে চুন খসলেই চেঁচিয়ে উঠছেন। সামান্য কাজে এত দেরি করছেন যে সেবা পেতে আসা মানুষ তাতে খুব বিরক্ত হচ্ছে।
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী অনেকক্ষণ সহ্য করার পর ঠান্ডা মাথায় পোস্টমাস্টারকে অনুরোধ করলেন তাঁর কাজটি করে দেওয়ার জন্য। তাতে খিঁচিয়ে উঠলেন ভদ্রলোক। বললেন, ‘দেখছেন তো মশাই কাজ করছি, আমার কি চারটে হাত?’
উপেন্দ্রকিশোর খুবই শান্ত স্বরে বললেন, ‘কী জানি মশাই, বয়েস তো হয়েছে, অনেক দেশে ঘুরেছিও, কিন্তু চারটে হাতওয়ালা পোস্টমাস্টার তো কখনো কোথাও দেখিনি। তবে দুটো হাত দিয়েই তাঁরা অনেক তাড়াতাড়ি কাজ করেন।’
এ কথা শুনে আশপাশের লোকজন হেসে উঠল আর পোস্টমাস্টার লজ্জা পেয়ে দ্রুত কাজটি করে দিলেন।
আরেকটি ঘটনা। নিমন্ত্রণ বাড়িতে গেছেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। বামুন-ঠাকুরেরা খাবার পরিবেশন করছেন। গণ্যমান্য লোকদের খাতির করে খাওয়ানো হচ্ছে, গরিব ভদ্রলোকদের যত্ন করা হচ্ছে না। বামুন-ঠাকুরেরা ‘গরম লুচি, গরম লুচি’ বলে চিৎকার করায় একজন বললেন, ‘ঠাকুর, আমাকে দুখানা গরম লুচি দাও তো।’
লোকটা তো গণ্যমান্য নয়, তাই ঠাকুর বললেন, ‘তা বলে পাতের ঠান্ডা লুচিগুলো ফেলে দেবেন না যেন!’
কথাটা শুনলেন উপেন্দ্রকিশোর। মনে রাখলেন। বামুন-ঠাকুর খাতির করে উপেন্দ্রকিশোরকে বললেন, ‘আপনাকে দুটো গরম লুচি দিক?’
উপেন্দ্রকিশোর এই অপেক্ষায়ই ছিলেন। তিনি বললেন, ‘কিন্তু আমার পাতের ঠান্ডা লুচি তো ফুরোয়নি!’
গৃহকর্তা খুবই লজ্জা পেলেন। এরপর গণ্যমান্য আর গরিব মানুষ, সবাই একই রকম যত্ন পেতে থাকলেন।
সূত্র: পুণ্যলতা চক্রবর্তী, ছেলেবেলার দিনগুলি, পৃষ্ঠা-৮৪