ঢাকা থেকে কিছু দূরের এক শহরে গেছেন সৈয়দ শামসুল হক। শখে পড়ে একটি প্রাচীন বাড়ি দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় উঠেছেন। খুব ঠান্ডা পড়েছে। চৌকিদারকে অনেক ডাকাডাকি করে এক পেয়ালা চা আনালেন। লেখার চেষ্টা করলেন চাদরমুড়ি দিয়ে। চা খেতে গিয়ে দেখেন ঠান্ডায় জল হয়ে গেছে। ব্যাগ খুলে পড়ার জন্য বই বের করলেন। কিন্তু কপাল খারাপ। যে দুটো বই আছে ব্যাগে, বই দুটো আগেই পড়া হয়ে গেছে। অগত্যা ভাবলেন, পথে নেমে এক কাপ গরম চা খাবেন আর খুঁজবেন বইয়ের দোকান।
শীতের সন্ধ্যায় শহর কোলাহলহীন। একটিই মাত্র প্রধান সড়ক। তাতে টিমটিমে বাতি। একটা বইয়ের দোকান চোখে পড়তেই উৎসাহী হয়ে উঠলেন তিনি। সবুজ আলোয়ানে নিজেকে ঢেকে রেখে বসে আছেন বইয়ের দোকানের মালিক। সৈয়দ হককে দেখে তিনি চিনতে পারলেন। যেভাবে বিলিতি কায়দায় টুপি খোলে, তেমনি আলোয়ানের ঢাকা খুলে তিনি সৈয়দ হককে অভ্যর্থনা জানালেন। খুব খুশি হয়ে যান তিনি।
একটা বই বাছার জন্য বইয়ের আলমারিগুলোর দিকে গিয়ে হতাশ হন সৈয়দ হক। স্কুলের বইপত্র আছে কিছু, আর আছে ধর্মবিষয়ক বই। এর বাইরে কিছুই নেই। সেই বইগুলোর দিকে চোখ যেতেই তাঁর মনে পড়ে, এই বইগুলো থেকেও কখনো কখনো নিজের লেখায় অনেক কিছু ব্যবহার করেছেন সৈয়দ হক। বইয়ের নামগুলো দেখতে থাকেন—কোরআনের তাফসির, নবীদের জীবনী, দোজখের ওম।
চমকে ওঠেন সৈয়দ হক। ‘দোজখের ওম’ তো কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পের বই। সে বই এখানে কী করে এল! একটু পরই বুঝতে পারলেন, বইয়ের নাম ‘দোজখের ওম’ দেখে দোকানদার ধরে নিয়েছিলেন এটা অবশ্যই ধর্মবিষয়ক বই। এ কারণেই ধর্মপুস্তকের সারিতে সাজিয়ে রেখেছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখা বইটি।
সূত্র: সৈয়দ শামসুল হক, হৃৎকলমের টানে, পৃষ্ঠা ১৮৪-১৮৫