শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান প্রথম টেলিভিশন অনুষ্ঠান করেন ১৯৬৫ সালে। টেলিভিশন চালু হলে তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন, এ বাক্সটি মূলত আইয়ুব খানের প্রচারযন্ত্রে পরিণত হবে। সাধারণ মানুষ টেলিভিশন অনুষ্ঠান থেকে কোনো উপকার পাবে না। শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশে এ যন্ত্রটি কি কোনো অবদান রাখতে পারবে, এ রকম প্রশ্নও ছিল তাঁর মনে।
এসব প্রশ্ন মাথায় নিয়েই একটি সাহিত্যবিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন তিনি। হাসান হাফিজুর রহমানের উপস্থাপনায় একটি সাহিত্য অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে তাঁর স্মৃতিতে, যে অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামানের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। সম্ভবত সৈয়দ শামসুল হকও ছিলেন সেটায়। দুটো সিরিজ অনুষ্ঠান করেছিলেন আনিসুজ্জামান। একটি ‘কবি কণ্ঠ’। একেক অনুষ্ঠানে একেকজন কবিকে নিয়ে আসতেন। প্রথমে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলতেন, তারপর কবি তাঁর নিজের পছন্দমতো দুটো কবিতা পড়তেন। অনুষ্ঠান শেষ হতো, কবিতা দুটির টীকা-ভাষ্য করে। সে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন জসীমউদ্দীন, আবদুল কাদির, সুফিয়া কামাল, আহসান হাবীব প্রমুখ।
পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সের যে মানুষেরা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে অবসর নিয়েছেন, তাঁদের কর্মজীবন ও অবসরজীবন নিয়ে ‘কালের সঞ্চয়’ নামে আরেকটি সিরিজ উপস্থাপনা করতেন তিনি।
তবে একটা মজার ব্যাপার ঘটেছিল এক পুস্তক সমালোচনার অনুষ্ঠান করতে গিয়ে। এ অনুষ্ঠানটি মূলত পরিচালনা করতেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি খুব জনপ্রিয় ছিল। একবার মুনীর চৌধুরী বিদেশে গেলেন, তখন তাঁরই পরামর্শে আনিসুজ্জামান পেলেন সেই অনুষ্ঠানের ভার। আনিসুজ্জামান তখন মুনীর চৌধুরীর বইয়ের আলোচনা করেছিলেন। কারণ, মুনীর চৌধুরী যদি উপস্থাপনা করতেন, তাহলে তিনি তো আর নিজের বইয়ের আলোচনা করতেন না! দর্শক-শ্রোতা যেন মুনীর চৌধুরীর বইয়ের আলোচনা থেকে বঞ্চিত না হন, সে জন্যই তাঁর বই বেছে নেওয়া হয়েছিল।
সূত্র: আনিসুজ্জামান, টেলিভিশন অনুষ্ঠান, আমার সংযোগ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২৫ বছর, পৃষ্ঠা ৩৮-৩৯