সত্যজিৎ রায় দেখা করতে চেয়েছিলেন গুলজারের সঙ্গে। কবি, লেখক, গীতিকার, চলচ্চিত্র পরিচালক–কোন পরিচয় বাদ দিয়ে কোনটা দেব? ‘সান অ্যান্ড স্যান্ড’ হোটেলে পৌঁছে রিসিপশন থেকে জানলেন, সত্যজিৎ বসে আছেন লনে। গুলজারকে দেখেই ‘গুলজার’ শব্দটি তিনি উচ্চারণ করলেন তাঁর ডিপ ব্যারিটোন স্বরে, ‘জেড’ উচ্চারণটা করলেন নিখুঁত।
সেটাই সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে গুলজারের প্রথম দেখা। সত্যজিৎ তখন চাইছেন ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবিটি হিন্দিতে করতে। সেই ছবির স্ক্রিপ্ট নিয়েই কথা বলতে চাইছিলেন তিনি। এবং চাইছিলেন হিন্দিতে ছবি করতে গিয়ে যেন ছবির বাঙালি ফ্লেভারটা চলে না যায়। তাই বললেন, ‘আচ্ছা, সাদাসিধা মাটির মানুষ–এই কথাটা কীভাবে অনুবাদ করবে?’
গুলজার বললেন, ‘সাদাসিধাকে খুব পাল্টানোর দরকার নেই। ও রকমই রাখা যেতে পারে।’
স্ক্রিপ্ট নিয়ে কথা হলো ঠিকই; কিন্তু ছবিটা আর হলো না পরে।
দ্বিতীয়বারও প্রফেসর শঙ্কুর কাহিনি নিয়ে হিন্দিতে সিরিয়াল নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন পথের পাঁচালীর সর্বজয়াখ্যাত করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ে। এবারও স্ক্রিপ্ট করার দায়িত্ব গুলজারের। কিন্তু এ সিরিয়ালও আর হলো না। সত্যজিৎ রায় নাকি নিজেই করবেন।
শেষবারের সুযোগটি ছিল ‘শতরঞ্জ কা খিলাড়ি’ ছবির সময়। কলকাতা ফিরবেন সত্যজিৎ, সে কথা শুনে দ্রুত এয়ারপোর্টে দেখা করলেন গুলজার। বললেন, ‘এই ছবির স্ক্রিপ্ট আমি লিখতে চাই।’
কিন্তু সত্যজিৎ সে কাজটা এরই মধ্যে অন্য একজনকে দিয়ে দিয়েছেন।
এরপরও অপেক্ষায় থেকেছেন গুলজার। কিন্তু সত্যজিতের ছবির স্ক্রিপ্ট লেখার সৌভাগ্য আর হয়নি তাঁর। সেই আক্ষেপ কখনো যায়নি গুলজারের।
সত্যজিৎ সম্পর্কে একটা দারুণ কথা বলেছেন গুলজার: ‘এত ভালো ইংরেজি যে কেউ বলতে পারে, না শুনলে বিশ্বাস করা যায় না। ইংরেজি বলার সময় শরীরী ভঙ্গিমাও যেন একজন পাক্কা ইংরেজের মতো। অথচ যেই বাংলায় কথা বলতেন, তখন একেবারে চেনা বাঙালি।’
সূত্র: গুলজার, পান্তা ভাতে
পৃষ্ঠা: ২৯-৩১