Ajker Patrika

হোলন আইকিউ ২০২৫: শীর্ষস্থানীয় ১০০ অ্যাডটেকে ৫ বাংলাদেশি স্টার্টআপ

মো. আশিকুর রহমান
হোলন আইকিউ ২০২৫: শীর্ষস্থানীয় ১০০ অ্যাডটেকে ৫ বাংলাদেশি স্টার্টআপ

শিক্ষা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে উদ্ভাবনী কার্যক্রমের স্বীকৃতি হিসেবে বৈশ্বিক প্রভাববিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হোলন আইকিউ। তাদের প্রকাশিত এ বছরের দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ১০০ অ্যাডটেকের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের পাঁচটি স্টার্টআপ। এ বছর বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে বিজ্ঞানপ্রিয়, অ্যাস্ট্রোনমি পাঠশালা, হালকেনস্টাইন, শিখো এবং সায়েন্স বি। শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বাড়াতে ক্রমবর্ধমান অবদানের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছে স্টার্টআপগুলো।

প্রতিবছর দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুত বিকাশমান, উদ্ভাবনী এবং উচ্চ সম্ভাবনাময় শিক্ষা-প্রযুক্তি উদ্যোগগুলো বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে এই তালিকা প্রকাশ করে হোলন আইকিউ। তালিকায় সাধারণত সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে জায়গা দেওয়া হয়, যাদের উদ্ভাবন সরাসরি শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি এবং ডিজিটাল রূপান্তরে বাস্তব প্রভাব ফেলছে।

হোলন আইকিউ জানায়, ২০২৫ সালের তালিকা তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান ও প্রভাবশালী শিক্ষা উদ্যোগগুলো শনাক্ত করা। এ জন্য তথ্যভিত্তিক বুদ্ধিমত্তা, হোলন আইকিউ ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গুণগত বিশ্লেষণ এবং আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়নের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচন করা হয়েছে। তালিকা প্রণয়নে ১০ বছরের বেশি পুরোনো উদ্যোগ এবং অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন স্টার্টআপ বিবেচনা করা হয়নি।

বিজ্ঞানপ্রিয়

২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠাতা শাওন মাহমুদ ও সহপ্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার হিমেল প্রতিষ্ঠা করেন ‘বিজ্ঞানপ্রিয়’। এটি বর্তমানে ইন্টারনেটের অন্যতম জনপ্রিয় বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম। এটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল, শিশু-কিশোরদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক কৌতূহল জাগানো এবং অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে তথ্যভিত্তিক, যুক্তিনির্ভর চিন্তাধারা গড়ে তোলা। একটি ছোট ফেসবুক পেজ হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও বিজ্ঞানপ্রিয় আজ পৌঁছে গেছে ১৬ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর কাছে, যা বাংলাদেশে সপ্তম শ্রেণি থেকে স্নাতকের প্রথম বর্ষ পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। প্ল্যাটফর্মটি এ পর্যন্ত ২৬ হাজারের বেশি গবেষণাধর্মী ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট, ৩৫০টির বেশি বিজ্ঞানভিত্তিক ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেছে এবং তাদের ফেসবুক গ্রুপে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে আড়াই লাখের বেশি আলোচনার আয়োজন হয়েছে।

প্রজেক্ট প্রাচি, ‘নেবুলা’ বিজ্ঞান ই-ম্যাগাজিন এবং হাতেকলমে শেখার নানা আয়োজনের মাধ্যমে বিজ্ঞানপ্রিয় দেশে গবেষণামুখী সংস্কৃতি গড়ে তোলা, এসটিইএম শিক্ষাকে জনপ্রিয় করা এবং বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা সহজ এবং উপভোগ্য করে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

Astronomy-Pathshaala-(1)

অ্যাস্ট্রোনমি পাঠশালা

২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হাসিবুল হোসেন রিফাত এবং সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিওও মো. ফাহিম আহমেদ শুরু করেন ‘অ্যাস্ট্রোনমি পাঠশালা’র যাত্রা। এটি বাংলাদেশের প্রথম এবং বৃহত্তম মহাকাশবিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম। বাংলা ভাষায় অনলাইন-অফলাইন কোর্স, কর্মশালা, ওয়েবিনার এবং মেন্টরশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে তারা স্পেস সায়েন্সকে আরও সহজ, আকর্ষণীয় এবং সবার জন্য সহজলভ্য করে তুলেছে। বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ স্পেস সায়েন্স কারিকুলাম তৈরি এবং অল বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রয়েড সার্চ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা তাদের উল্লেখযোগ্য অবদান।

Astronomy-Pathshala

যেখানে স্কুলশিক্ষার্থীরা নিজ হাতে আকাশে গ্রহাণু শনাক্ত করার সুযোগ পাচ্ছে। ধারাবাহিক উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে অ্যাস্ট্রোনমি পাঠশালা প্রমাণ করছে, মহাকাশবিজ্ঞান শুধু গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ নয়, এটি বাংলাদেশের প্রত্যেক কৌতূহলী শিক্ষার্থীর জন্য উন্মুক্ত এবং সম্ভাবনাময় এক দিক।

idWO3YJOQh_logos

হালকেনস্টাইন

হালকেনস্টাইনের সহপ্রতিষ্ঠাতা এ এস এম আনাস ফেরদৌস এবং এস কে শামিউর রহমান। দুজনেই বুয়েটের শিক্ষার্থী। তাঁদের যৌথ উদ্যোগে ২০১৯ সালে গড়ে ওঠে হালকেনস্টাইন, যা আজ দেশের অন্যতম শীর্ষ মাধ্যমিক স্তরের অ্যাডটেক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এর সেবার আওতায় ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। দিনাজপুরের গ্রামাঞ্চলে সীমিত শিক্ষাসামগ্রী নিয়ে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা থেকে শুরু হয় এই উদ্যোগ। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ইউটিউবে ফ্রি কনটেন্ট দিয়ে যাত্রা শুরু করে হালকেনস্টাইন।

hulkenstein

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ‘ইনফিনিটি স্কুলের’ মাধ্যমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সমন্বিত এবং সাশ্রয়ী শিক্ষা মডেল গড়ে তুলেছে। এনসিটিবি পাঠ্যবইয়ের সংক্ষিপ্ত ও পরিবেশবান্ধব মাস্টারবুক, অফলাইন অ্যাপ, এআইভিত্তিক টিউটর, অ্যানিমেটেড ভিডিও ক্লাস, মক টেস্ট—সব মিলিয়ে এটি একটি হাইব্রিড শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষার বাইরেও মানসিক স্বাস্থ্য, পাবলিক স্পিকিং ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে জোর দিচ্ছে হালকেনস্টাইন।

Shikho

শিখো

২০১৯ সালের ১ এপ্রিল শাহির চৌধুরী ও জিশান জাকারিয়া প্রতিষ্ঠা করেন ‘শিখো’। এটি বর্তমানে দেশের অন্যতম বড় অ্যাডটেক প্ল্যাটফর্ম। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ৩০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। বাংলা ভাষায় লাইভ ক্লাস, অ্যানিমেটেড ভিডিও, সমৃদ্ধ প্রশ্নব্যাংক এবং এআইনির্ভর পারফরম্যান্স অ্যানালিটিকসের মাধ্যমে শিখো শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাযাত্রা নিশ্চিত করছে। পাশাপাশি শিখো এআই ও স্থানীয়ভাবে তৈরি ‘এডুট্যাব’ ডিভাইসের মাধ্যমে দেশে হাইব্রিড লার্নিংয়ের নতুন দিক উন্মোচন করেছে। স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যাটফর্ম বহুব্রীহি অধিগ্রহণ এবং সাজিদা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে শিখো দেশের দূরবর্তী অঞ্চলে শিক্ষার সুযোগ আরও বিস্তৃত করছে। এখন পর্যন্ত ৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন পেয়ে শিখো বাংলাদেশের সর্বাধিক বিনিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাডটেক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

cropped-New-Bee-Logo-Black-01

সায়েন্স বি

২০১৮ সালে মবিন সিকদার, সাদিয়া বিনতে চৌধুরী ও অন্বয় দেবনাথ প্রতিষ্ঠা করেন ‘সায়েন্স বি’। এটি এখন দেশের অন্যতম বৃহত্তম সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং গণিত কিংবা এসটিইএমভিত্তিক অ্যাডটেক প্ল্যাটফর্ম। আজ প্ল্যাটফর্মটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গণিতভিত্তিক কনটেন্টের বড় ভান্ডার হিসেবে সায়েন্স বি নিয়মিত আয়োজন করছে অনলাইন কোর্স, কুইজ প্রতিযোগিতা, ই-বুক, বিজ্ঞান সংবাদ আপডেট এবং প্রশ্নোত্তর ফোরাম। পাশাপাশি আয়োজন করছে বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, ক্যাম্পাসভিত্তিক কর্মশালা এবং জনপ্রিয় শিক্ষামূলক টক শো ‘দ্য বি শো’, যা অফলাইন কার্যক্রমকে করেছে আরও শক্তিশালী।

২০২৩ সালে প্রথমবার হোলন আইকিউর দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ১০০ অ্যাডটেক তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল সায়েন্স বি। চলতি বছর দ্বিতীয়বার একই মর্যাদা অর্জন করার মধ্য দিয়ে প্ল্যাটফর্মটি তার ধারাবাহিক প্রভাব ও উন্নয়ন আরও একবার প্রমাণ করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...