‘বড় তিন’-এর টেনিস এখন সিনার-আলকারাসের দখলে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫: ৩৯
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫: ৫৩

গত বছর উইম্বলডনে নোভাক জোকোভিচকে হারিয়ে দেওয়ার পর টেনিস পণ্ডিতেরা বিশ্ব টেনিসে ‘আলকা-রাজ’-এর শুরুর কথা বলেছিলেন। এবারের ইউএস ওপেনে যদিও দ্বিতীয় রাউন্ডে বিদায় নিয়েছেন, তবু কার্লোস আলকারাস বোদ্ধাদের পূর্বানুমানের যথার্থতা প্রমাণ করেছেন বছরের ফ্রেঞ্চ ওপেন ও উইম্বলডন জিতে।

স্প্যানিয়ার্ড আলকারাসের পর এবার বিশ্ব টেনিসে দিনবদলের গান শোনালেন ইয়ানিক সিনারও। গত পরশু ইউএস ওপেনের পুরুষ এককের একপেশে ফাইনালে ৬-৩, ৬-৪, ৭-৫ গেমে টেলর ফ্রিটজকে হারিয়ে জিতলেন শিরোপা। চলতি বছর ইতালিয়ান এই টেনিস তারকার এই দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্লাম জয়ে পরোক্ষে যেন দিলেন এই ঘোষণাটাও—বিশ্ব টেনিস এখন আলকারাস আর সিনারের পদানত!

বছর দুয়েক আগেই টেনিসকে বিদায় জানিয়েছেন রজার ফেদেরার। আগামী মাসেই লেভারকাপ খেলে পাকাপোক্তভাবে কোর্টের বাইরে চলে যাবেন রাফায়েল নাদালও। আর বড় তিনের তৃতীয়জন ৩৭ বছর বয়সী নোভাক জোকোভিচও তাঁর ‘ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ রূপটি হারিয়ে ফেলেছেন। এবার ফ্ল্যাশিং মিডোয় বিদায় নেওয়ার পর যদিও সার্বিয়ান তারকার দাবি, অলিম্পিকের সোনার পেছনে ছুটতে গিয়ে তিনি নিঃশেষিত, নিজের সেরাটা দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না। জোকোর যুক্তি মেনে নেওয়ার পরও সত্যিটা এই—‘বিগ থ্রি’র যুগ শেষ! ২০০২ সালের পর এই প্রথম বছরের চারটি গ্র্যান্ড স্লামের একটিও জিততে পারেননি বড় তিনের কেউ।

একটা বছর জোকোভিচের গ্র্যান্ড স্লাম না জেতাটাকে তাঁর শেষের শুরু ধরা যেতে পারে, কিন্তু কোনোভাবেই ‘শেষ’-এর বার্তা হতে পারে না। এটা যেমন ঠিক, তেমনি এটাও ঠিক—বড় তিনের বলয় ভেঙেই বিশ্ব টেনিসে ধূমকেতুর মতো উত্থান আলকারাস ও সিনারের। নাদাল-জোকোভিচ টেনিসে থাকার পরও ২০২২ সালে ইউএস ওপেন জিতে ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ‘নাম্বার ওয়ান’ হিসেবে আত্মবিশ্বাস আলকারাসের। তাঁর এই কীর্তির মতো গত পরশুও অনন্য এক কীর্তি গড়লেন সিনার। সেটি কী? একই বছরে ক্যারিয়ারের প্রথম দুটি গ্র্যান্ড স্লাম—অস্ট্রেলিয়ান ও ইউএস ওপেন জয়।

আপাতদৃষ্টে মনে হতে পারে, এ আর কী এমন অর্জন! কিন্তু বাস্তবতা হলো, আন্দ্রে আগাসি কিংবা পিট সাম্প্রাসের তো নয়ই, একই বছরে প্রথম দুটি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ড নেই ফেদেরার, নাদাল কিংবা জোকোভিচেরও। ইয়ানিক সিনারের আগে সবশেষ এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন গিলের্মো ভিলাস, ১৯৭৭ সালে।

চলতি বছর দুটি গ্র্যান্ড স্লামসহ মোট ৬টি শিরোপা জিতেছেন সিনার। আলকারাস ২টি গ্র্যান্ড স্লামসহ জিতেছেন ৩টি শিরোপা। সিনারের বয়স ২৩, আলকারাসের ২১। এই বয়সেই দুজনের নামের পাশে ১৫ কিংবা তার চেয়ে বেশি শিরোপা।

শুধু গ্র্যান্ড স্লামের হিসাবেই আসি, আলকারাসের শিরোপা ৪টি। ২২ তম জন্মদিনের আগে বড় তিনের কেউই চারটি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জিততে পারেননি। চব্বিশতম জন্মদিন উদ্যাপনের পরই গ্র্যান্ড স্লাম ৪ শিরোপার নাগাল পেয়েছিলেন জোকো। ২০০৫ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনে বিজয় নিশান ওড়ানোর পর টানা জিতে গেলেও ৪টি শিরোপা জিততে ২২ পেরিয়েছিল নাদালের। আর কিংবদন্তি ফেদেরারের লেগেছিল ২৩ বছর।

এ হিসাবে গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের দ্রুততায় বড় তিনের সবাইকে ছাড়িয়ে আলকারাস। কোর্টে তাঁর কৈশোরীয় চাঞ্চল্য আর শট খেলায় সৃজনশীলতা টেনিস অ্যাথলেটিসিজমে নিয়ে এসেছে নতুন মাত্রা। আর নিখুঁত টেনিস এবং ধারাবাহিকতার সঙ্গে শক্তির সুষম সমন্বয়ে দিন দিন অন্যদের চেয়ে আলাদা হয়ে উঠছেন সিনার। বিশ্ব টেনিসকে শাসনের কী নেই তাঁদের কাছে? একটা পার্থক্য কি সিনারও অনুভব করতে পারছেন না? এ-সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রথম ইতালিয়ান পুরুষ হিসেবে ইউএস ওপেনজয়ী সিনারের উত্তর, ‘নিশ্চিত, এটা কিছুটা হলেও অন্য রকম।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত