পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননায় অভিযুক্ত চিকিৎসক পুলিশের গুলিতে নিহত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০: ০৮
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০: ২৭

পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় সিন্ধু প্রদেশে ধর্ম অবমাননায় অভিযুক্ত এক চিকিৎসককে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিবিসি জানিয়েছে, নিহত শাহনওয়াজ কানভার পাকিস্তানে গত এক সপ্তাহে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পুলিশের গুলি খাওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো নিন্দা জানিয়েছে। 

সিন্ধু প্রদেশের স্থানীয় পুলিশ প্রধান নিয়াজ খোসো দাবি করেছেন, শাহনওয়াজ কানভার দুর্ঘটনাক্রমে নিহত হয়েছেন। গুলি করার সময় পুলিশ তাঁকে চিনতে পারেনি। 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামের নবী মুহাম্মদকে (সা.) অবমাননা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মের নিন্দা করে পোস্ট শেয়ারের অভিযোগে গত মঙ্গলবার আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন চিকিৎসক কানভার। পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী—সিন্ধু প্রদেশের মিরপুর খাস শহরের কর্মকর্তারা বুধবার একটি মোটরসাইকেলে আরোহী দুই ব্যক্তিকে তল্লাশির জন্য থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নির্দেশ না মেনে ওই দুই ব্যক্তির একজন গুলি চালান। পরে তাঁদের সঙ্গে একটি বন্ধুকযুদ্ধ হয়। এ সময় গুলি খেয়ে মারা যান কানভার। 

স্থানীয় পুলিশ প্রধান খোসো জানান, গোলাগুলির পরই কর্মকর্তারা জানতে পারেন, যে ব্যক্তিকে গুলি করা হয়েছে তিনি চিকিৎসক কানভার। মোটরসাইকেলে থাকা অপর ব্যক্তি এ সময় পালিয়ে যান। 

এদিকে খাস আসাদ চৌধুরী নামে পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বিবিসি উর্দুর কাছে দাবি করেছেন, মোটরসাইকেলে থাকা নিজের সঙ্গীর গুলিতেই দুর্ঘটনাক্রমে নিহত হয়েছেন চিকিৎসক। 

নিহত কানভারের এক স্বজন বিবিসি উর্দুর কাছে দাবি করেছেন, ওই চিকিৎসককে এনকাউন্টারের নাটক সাজিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে এই অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছে পুলিশ। 

সিন্ধু প্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিয়া-উল-হাসান লিঞ্জার কানভারের মৃত্যুর বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এক সপ্তাহ আগেই পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কোয়েটা শহরে একটি পুলিশ স্টেশনের ভেতরেই ধর্ম অবমাননায় অভিযুক্ত আরেক ব্যক্তিকে গুলি করেছিল পুলিশ। 

এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন (এইচআরসিপি)। শুক্রবার এই বিষয়ে এক বিবৃতিতে এইচআরসিপি বলেছে, ‘ব্লাসফেমির ক্ষেত্রে এই ধরনের সহিংসতায় আইন প্রয়োগকারী কর্মীরা জড়িত থাকার অভিযোগ একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা।’ 

চিকিৎসক কানভারকে গুলি করে হত্যার একদিন আগেই তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি করে সিন্ধুর উমেরকোট শহরে বিক্ষোভ করে ইসলামপন্থীরা। এ সময় তাঁরা কানভারের ক্লিনিকও পুড়িয়ে দেয়। 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সাধারণ মানুষের হাতে সন্দেহভাজনদের হত্যা করা পাকিস্তানে একটি সাধারণ ঘটনা। তবে দেশটিতে এ ধরনের সন্দেহভাজনদের ওপর পুলিশের গুলির ঘটনা এবারই প্রথম ঘটেছে। 

পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননা আইন অনুযায়ী, ইসলাম বা ইসলাম ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের অবমাননার জন্য কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। তবে দেশটিতে এই অভিযোগে এখন পর্যন্ত কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননায় সন্দেহভাজনদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েছে। গত জুনেও কোরআন অবমাননার অভিযোগে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় মাদিয়ান শহরের একটি থানায় প্রবেশ করে এক পর্যটককে ছিনিয়ে নিয়ে যায় সাধারণ মানুষ। পরে তারা ওই ব্যক্তিকে হত্যা করে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত