জার্মানির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখে রনি মিয়া

প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৪, ০৭: ২৩
আপডেট : ০৮ জুন ২০২৪, ০৮: ০০

মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৪.১৭ পেয়ে এসএসসি এবং বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে জিপিএ-৩.৬৭ পেয়ে এইচএসসি সম্পন্ন করেন মো. রনি মিয়া। বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তিনি জার্মানির সেরা টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখে (টিইউএম) পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। পড়াশোনা করছেন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়ে। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম। 

প্রশ্ন: আপনার শৈশব ও বেড়ে ওঠা নিয়ে জানতে চাই। 
উত্তর: শৈশব কেটেছে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার সট্টি নামের একটি গ্রামে। শৈশবটা অনেক দুরন্ত কেটেছে। তবে বড় বোনের সুবাদে কৈশোর কেটেছে মানিকগঞ্জ শহরে। ছোটবেলা থেকে সবার মতো আমারও স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। বাবার ঢাকার ব্যবসায় লোকসান, গ্রামে ফিরে আসা এবং চার ভাই-বোনের লেখাপড়ার খরচ। বাবা, মা ও বড় ভাই-বোনের চোখে-মুখে ছিল দুশ্চিন্তার ছাপ।

প্রশ্ন: টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন? 
উত্তর: অনুভূতি খুবই ভালো! তবে এখানে পড়াশোনা বেশ কঠিন। সম্পূর্ণ নতুন কারিকুলামে খাপ খাওয়াতে একটু সময় লাগবে।জার্মানিতে আসার পেছনে বড় অবদান আমার ভাই ও বোনের। তাঁরা অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে পাশে না থাকলে এটা কখনো আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাঁদের কাছে আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞ। 

প্রশ্ন: আপনি কী ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন? 
উত্তর: স্কুলে থাকতে স্কাউটিং করেছি। পাশাপাশি আন্তস্কুল টুর্নামেন্টে ফুটবল খেলেছি। সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ এবং পাবলিক স্পিকিং ক্লাবের কো-কনভেনর ও ব্লাড ডোনেশেন গ্রুপের সদস্য ছিলাম। 

প্রশ্ন: জার্মানিতে স্নাতক প্রোগ্রামে পড়ার স্বপ্ন দেখলেন কখন থেকে? 
উত্তর: ২০১৮ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশে পড়াশোনা সম্পর্কে আংশিক ধারণা নেই।

প্রশ্ন: টিইউএমে পড়ার সুযোগ পাওয়ার পেছনের গল্প শুনতে চাই। প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছিলেন? 
উত্তর: দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ না পাওয়ায় কাছের মানুষটি ছেড়ে চলে যায়। তখন মনস্থির করি দেশে নয়, জার্মানিতে পড়তে যাব। কিন্তু জার্মানিতে পড়তে গেলে দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৫ শতাংশ ক্রেডিট সম্পন্ন করে যেতে হয়। কিন্তু করোনা মহামারি সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত ও সিজিপিএ আশানুরূপ ছিল না। দীর্ঘ সময় পর সবকিছু স্বাভাবিক হলে ২০২২ সালে সেই লক্ষ্যে নতুন করে যাত্রা শুরু করি। সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে ১ বছর বা ২৫ শতাংশ ক্রেডিট শেষ করতে ভর্তি হই।

প্রচুর পরিশ্রমী হয়ে পড়াশোনা করি এবং ৩.৭৯ সিজিপিএ পেতে সক্ষম হই। পাশাপাশি ইংরেজিতে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ডেইলি স্টার পত্রিকা পড়তাম। নিজে নিজে বাসায় স্পিকিং চর্চা করেছি ও প্রচুর বিবিসি শুনেছি। ভার্সিটিতে আবেদন করি ২০২৩ সালের ১২ মে। ১৫ দিন পর আমি টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখ কলেজ থেকে চান্স পাওয়ার লেটার পাই। মেইলটা পড়ে আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। তখন কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা ও পরিবারের সদস্যদের এই খুশির খবরটা জানাই। সিজিপিএ এবং মোটিভেশন লেটার ভালো থাকায় ভার্সিটির অ্যাপটিউট অ্যাসেসমেন্ট টেস্টের মাধ্যমে সরাসরি চান্স পেয়ে যাই। তাই আর ইন্টারভিউ দিতে হয়নি। 

প্রশ্ন: কোনো বাধা বা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে কি?
উত্তর: বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল পরিবারের সদস্যদের বোঝানো। তাঁদের ধারণা ছিল, জার্মানিতে পড়তে যাওয়া অনেক টাকাপয়সার ব্যাপার। যদি পরে না যাওয়া যায়। এ ছাড়া স্পিকিং চর্চার জন্য বন্ধুদের কাছে হাসির পাত্র হয়েছি। তারা আমার নাম রেখেছিল ‘ইংলিশম্যান’। তবুও লক্ষ্য থেকে আমি পেছনে ফিরে যাইনি। ব্যাংকে স্টুডেন্ট ফাইল খুলতে গিয়ে ডলার-সংকটের কারণে বারবার ফেরত পাঠিয়েছে। সব মিলিয়ে ২৩ মাস অপেক্ষা করে ভিসা হাতে পেয়েছিলাম। এ সময়টা কঠিন ছিল।

প্রশ্ন: স্নাতক পর্যায়ে টিইউএমে আবেদনের জন্য কখন থেকে এবং কীভাবে প্রস্তুতি শুরু করা উচিত? 
উত্তর: জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুইভাবে আবেদন করা যায়। ইউনি অ্যাসিস্টের মাধ্যমে এবং সরাসরি ভার্সিটির পোর্টালের মাধ্যমে। প্রথমত, ইউনি অ্যাসিস্ট নামে ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। এরপর ভিপিডির জন্য আবেদন করতে হবে (সিজিপিএ জার্মান গ্রেডে কনভার্ট করে দেবে)। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পোর্টালের ডকুমেন্টস অপশনে আপলোড করতে হবে।

এরপর পেমেন্ট করতে হবে। যেকোনো ব্যাংকের ভিসা কার্ড দিয়ে একই সেশনে প্রথম পেমেন্টে (একটি ভার্সিটির জন্য) ৭৫ ইউরো ও পরবর্তী কোনো ভার্সিটির জন্য ভিপিডি নিতে হলে ৩০ ইউরো করে পেমেন্ট করতে হবে। ভিপিডি পাওয়ার জন্য ২৫-৪০ দিন সময় নিতে হবে। আর ইউনি অ্যাসিস্ট থেকে সরাসরি আবেদন পোর্টালে ডকুমেন্টস নামে একটি অপশন আছে। সেখানে ভার্সিটির চাহিদা অনুযায়ী সব ডকুমেন্ট আপলোড করতে হবে। আর কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করে দিলেই হয়ে যাবে। 

প্রশ্ন: আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কী কী কাগজপত্র লাগবে? 
উত্তর: আবেদনে এইচএসসি পরীক্ষার জিপিএ এবং দেশে ১ বছর বা ক্রেডিটের সিজিপিএ সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া পাসপোর্ট, এসএসসি সার্টিফিকেট ও মার্কশিট, এইচএসসি সার্টিফিকেট ও মার্কশিট, ১ বছর বা ২৫ শতাংশ ক্রেডিটের মার্কশিট, মিনিমাম পাসিং গ্রেড সার্টিফিকেট (১ বছর বা ২৫ শতাংশ ক্রেডিট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিতে হবে); তবে যদি মার্কশিটে সর্বনিম্ন পাসিং গ্রেড উল্লেখ করা থাকে, তাহলে এটা আলাদা করে নিতে হবে না।পাশাপাশি ইউরোপাস সিভি, মোটিভেশনাল লেটার, আইইএলটিএস স্কোর ৬.৫ অথবা এমওআই, এক্সট্রা কারিকুলাম সার্টিফিকেট (যদি থাকে) থাকলে দিতে হবে। 

প্রশ্ন: টিইউএমে কী কী সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে? 
উত্তর: এখানে গবেষণাকেন্দ্রিক পড়াশোনা ও বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদান করা হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থী সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা বা বছরে ২৪০ দিন ফুল ডে জব করার সুযোগ পাবেন। যেকোনো ধরনের কাজ ম্যানেজ করে করতে পারবেন। যেমন বিভিন্ন অফিস, শপিং মল বা রেস্টুরেন্টে কাজ করতে পারবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত