হুসাইন আহমদ

এক নতুন সামরিক–রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট ভবনে যেদিন সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস হলো। সিনেটে সামান্য হই হই চই এবং দুজন বিচারকের পদত্যাগ ছাড়া অনেকটা নিরবেই পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোয় ঐতিহাসিক রূপান্তর ঘটে গেল।
যৌথতা, আধুনিকায়ন ও কার্যকারিতার নামে একটি রাষ্ট্রকে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক সামরিক আধিপত্যের দিকে ঠেলে দেওয়ার লিখিত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণের সামনে ‘সামরিক পুনর্গঠন’ হিসেবে তুলে ধরা হলেও পরিবর্তনকে একেবারে ‘সংবিধানপ্রণোদিত সামরিক একনায়কতন্ত্রের সূচনা’ বলছেন বিশ্লেষকেরা।
গত বৃহস্পতিবার আইনে পরিণত হওয়া সংবিধানের এই সংশোধনীর মাধ্যমে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে সর্বময় সামরিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার ও বিচার থেকে আজীবন দায়মুক্তি পেয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, গণতান্ত্রিকভাবে দুর্বল পাকিস্তানের জনগণের জন্য কিছুটা ভরসার জায়গা বিচার বিভাগকেও দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে।
পারমাণবিক ক্ষমতাধর পাকিস্তানে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নতুন নয়। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল এবং পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ার নজির বহু আছে। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ও জেনারেল জিয়া-উল-হক তাঁর উদাহরণ। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সামরিক ক্ষমতাকে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর স্থান দেওয়ার এই ঘটনা নজিরবিহীন ও সুদূরপ্রসারী।
১. সংবিধানের এই সংশোধীর ফলে সেনাপ্রধান আসিম মুনির প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান (সিডিএফ) হলেন। অর্থাৎ তিন বাহিনী, কৌশলগত কমান্ড, এমনকি পারমাণবিক বাহিনী তত্ত্বাবধানকারী কাঠামোর ওপরও তাঁর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। এর ফলে কার্যত তিন বাহিনীর ভেতরের ভারসাম্য ভেঙে গেল। তিন বাহিনীর যৌথ নেতৃত্বের দীর্ঘ ৫ দশকের প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা বাতিল হয়ে সেনাপ্রধানের একনায়ক হওয়ার পথ তৈরি হলো।
এই পরিবর্তনকে ‘আধুনিক যুদ্ধের প্রয়োজনে নেওয়া পদক্ষেপ’ বলে দাবি করছে পাকিস্তান সরকার। কিন্তু বাস্তবে এর মাধ্যমে সর্বময় ক্ষমতা পেয়েছেন সেনাপ্রধান— প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের ভূমিকা, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব অত্যন্ত উন্মুক্ত রাখা হয়েছে; তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর পার্লামেন্টের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখা হয়নি এবং এই পদের দায়িত্ব ও বাহিনীর কাঠামো ঠিক নির্ধারণের দায়িত্ব স্পষ্ট করা হয়নি। এই পরিবর্তন পাকিস্তানের ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ ব্যবস্থা দুর্বল করে সামরিক কাঠামোকে আরও বেশি ব্যক্তিনির্ভর করে তুলেছে।
বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আব্বাস খট্টাক ডনকে বলেছেন, আধুনিক যুদ্ধের বাস্তবতা বলে, বিমান, নৌ ও স্থল বাহিনীর স্বাধীনতা ও সমন্বয়ই শক্তির উৎস। কিন্তু পাকিস্তান উল্টোপথে হাঁটছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি বিশ্বমানের চর্চা থেকে সরে যাই, তাহলে এককেন্দ্রিক ক্ষমতা ভবিষ্যতে কৌশলগত ভুলের ঝুঁকি বাড়াবে।’
বিশেষ করে নতুন ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের অধীনে তিন বাহিনীর পারমাণবিক ডেলিভারি সিস্টেম এক ছাতার নিচে আনা হলে বিমান ও নৌবাহিনীর কৌশলগত স্বাধীনতা আরও কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকিল শাহ খোলাখুলি বলেছেন, ‘এটি মুনিরের ক্ষমতার দখলকে আরও পাকাপোক্ত করেছে। পার্লামেন্ট এমনভাবে একজন সামরিক প্রধানের আধিপত্যকে বৈধতা দিয়েছে, যা আমরা আগে কখনও দেখিনি।’ (দ্য গার্ডিয়ান) শাহের মতে, বিচার বিভাগ ও সংসদ উভয়কেই ঠেলে দেওয়া হয়েছে প্রান্তে—যা গণতন্ত্রের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নয়।
২. পাকিস্তানের পারমাণবিক কাঠামো এখনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকলেও সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে কর্তৃত্বের ভারসাম্য বদলে গেছে। ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি–এনসিএ কাঠামোগতভাবে এখনও বেসামরিক নেতৃত্বাধীন। কিন্তু ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডারের (সিএনএসসি) নিয়োগ, পুনঃনিয়োগ ও মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এখন নির্ভর করবে কেবলমাত্র সিডিএফের সুপারিশের ওপর।
কেবল তাই নয়, কফিনে শেষ পেরেক ঠুকার মতো এই সিদ্ধান্তের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংশোধিত সংবিধানের ধারা ৮ই (২) অনুযায়ী, সিএনএসসির নিয়োগ বা মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এটা পাকিস্তানের সংবিধানের ৪, ৯ ও ১৯৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, রাষ্ট্রের সকল নাগরিক আইনের সামনে সমান এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার সাংবিধানিক অধিকার।
পাকিস্তানের সাবেক সামরিক আইন কর্মকর্তা ইনাম-উর-রহিম বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর যেকোনো সিদ্ধান্ত, যদি তা অনিয়ম বা কর্তৃত্ববহির্ভূত হয়, তা উচ্চ আদালতে বিচারযোগ্য— এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি।’
এটা পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপত্যে সেনাবাহিনীর প্রভাবকে আরও স্থায়ী করে তুলছে, যা আইনের শাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
৩. সামরিক কাঠামোর এই পুনর্গঠনের অন্যতম ফল হলো ক্ষমতার চূড়ান্ত কেন্দ্রে একজন ব্যক্তির দীর্ঘায়িত মেয়াদ। প্রতিরক্ষা বাহিনী তথা সেনাবাহিনীর প্রধানের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তা ২০৩৫ পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ তৈরি করা। অর্থাৎ পাকিস্তানের পুরো প্রতিরক্ষা কাঠামো প্রায় এক দশকজুড়ে এক ব্যক্তির সিদ্ধান্ত, দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল হবে।
সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে দীর্ঘায়িত ও সর্বময় ক্ষমতার পাশাপাশি কোনো অপরাধে গ্রেপ্তর ও বিচার থেকেও আজীবন দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) আসিফ ইয়াসিন মালিক এই বিষয়ে কড়া মন্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এক ব্যক্তির জন্য আইন করা হলো, প্রাতিষ্ঠানিক কল্যাণের জন্য নয়।’ (ডন)
তাঁর মতে, তিন বাহিনীর প্রয়োজনে নয়, একজন ব্যক্তিকে সামনে রেখে এই আইন প্রণীত হলো। পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধির মতে, ‘এই আইনি পুনর্গঠন শুধু সামরিক ক্ষমতা বাড়ায়নি, পাকিস্তানের বিচার কাঠামোকেও দুর্বল করে দিয়েছে।’
৪. নিজ বাহিনীর ভেতরে পদোন্নতি-বদলির বিষয়ে বিমান ও নৌবাহিনী প্রধানের ক্ষমতা খর্ব হলো। এখন এই বাহিনী প্রধানদের হাতে কেবল থ্রি স্টার অর্থাৎ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও নিচের পদমর্যাদার পদোন্নতি-বদলির ওপর ক্ষমতা থাকল। ফোর স্টার সব নিয়োগ ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে ‘আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক পরামর্শে’ হবে। অর্থাৎ বাকি দুই বাহিনী প্রধানদের ভূমিকা ও প্রভাব কমল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পুরনো কাঠামোতে সমস্যা থাকলেও নতুন কাঠামো কোনো সমাধান নয়। সিজেসিএসসি বহু বছর ধরেই আনুষ্ঠানিক পদ হিসেবে ছিল এবং তিন বাহিনী কার্যত সমান্তরাল আমলাতন্ত্রের মতো চলত। কিন্তু যেভাবে পাকিস্তানে সেনাপ্রধানকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হলো, সেই পথটি উল্টো। যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের মতো দেশও তিন বাহিনীতে যৌথতা এনেছে, তবে স্বাধীন যৌথ কমান্ড গড়ে তুলে।
বাস্তবে ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের অধীনে সামরিক কাঠামো এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে— বাহিনীসমূহের ভারসাম্য দুর্বল, বিচার বিভাগের ভূমিকা সংকুচিত, পারমাণবিক স্থাপত্যে সেনাবাহিনীর আধিপত্য সুসংহত, এবং প্রতিরক্ষা নীতি-পরিকল্পনা কার্যত একজন ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দের ওপর নির্ভরশীল।
এমন পরিবর্তনে উদ্বেগ তুলে ধরে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মজিদ নিজামী আল জাজিরাকে বলেন, সিডিএফের নতুন ভূমিকা অস্পষ্ট এবং তিন বাহিনীর কৌশলগত সমন্বয় বিপর্যস্ত হতে পারে। কাঠামোর অস্পষ্টতা ভবিষ্যতের সংঘাতে সিদ্ধান্ত বিভ্রান্তি ডেকে আনতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নিয়োগ–বদলি ও কৌশলগত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হলে রাষ্ট্র প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি হারাবে। সেই মুহূর্তে একনায়কতন্ত্র আর সম্ভাবনার পর্যায়ে থাকে না, তা বাস্তবে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। পাকিস্তান সেই রূপান্তরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে। কারণ, পার্লামেন্ট যে আইন পাস করেছে, তা শুধু প্রশাসনিক কাঠামো পাল্টায়নি, রাষ্ট্রকে কার্যত এক ব্যক্তিনির্ভর সামরিক সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার কি তার কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে? সেনাবাহিনীর তিন শাখার মধ্যে ভারসাম্য কি বজায় থাকবে? বিচার বিভাগ ও সংসদ কি একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হবে? সময় জবাব দেবে এসব প্রশ্নের।

এক নতুন সামরিক–রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট ভবনে যেদিন সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস হলো। সিনেটে সামান্য হই হই চই এবং দুজন বিচারকের পদত্যাগ ছাড়া অনেকটা নিরবেই পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোয় ঐতিহাসিক রূপান্তর ঘটে গেল।
যৌথতা, আধুনিকায়ন ও কার্যকারিতার নামে একটি রাষ্ট্রকে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক সামরিক আধিপত্যের দিকে ঠেলে দেওয়ার লিখিত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণের সামনে ‘সামরিক পুনর্গঠন’ হিসেবে তুলে ধরা হলেও পরিবর্তনকে একেবারে ‘সংবিধানপ্রণোদিত সামরিক একনায়কতন্ত্রের সূচনা’ বলছেন বিশ্লেষকেরা।
গত বৃহস্পতিবার আইনে পরিণত হওয়া সংবিধানের এই সংশোধনীর মাধ্যমে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে সর্বময় সামরিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার ও বিচার থেকে আজীবন দায়মুক্তি পেয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, গণতান্ত্রিকভাবে দুর্বল পাকিস্তানের জনগণের জন্য কিছুটা ভরসার জায়গা বিচার বিভাগকেও দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে।
পারমাণবিক ক্ষমতাধর পাকিস্তানে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নতুন নয়। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল এবং পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ার নজির বহু আছে। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ও জেনারেল জিয়া-উল-হক তাঁর উদাহরণ। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সামরিক ক্ষমতাকে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর স্থান দেওয়ার এই ঘটনা নজিরবিহীন ও সুদূরপ্রসারী।
১. সংবিধানের এই সংশোধীর ফলে সেনাপ্রধান আসিম মুনির প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান (সিডিএফ) হলেন। অর্থাৎ তিন বাহিনী, কৌশলগত কমান্ড, এমনকি পারমাণবিক বাহিনী তত্ত্বাবধানকারী কাঠামোর ওপরও তাঁর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। এর ফলে কার্যত তিন বাহিনীর ভেতরের ভারসাম্য ভেঙে গেল। তিন বাহিনীর যৌথ নেতৃত্বের দীর্ঘ ৫ দশকের প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা বাতিল হয়ে সেনাপ্রধানের একনায়ক হওয়ার পথ তৈরি হলো।
এই পরিবর্তনকে ‘আধুনিক যুদ্ধের প্রয়োজনে নেওয়া পদক্ষেপ’ বলে দাবি করছে পাকিস্তান সরকার। কিন্তু বাস্তবে এর মাধ্যমে সর্বময় ক্ষমতা পেয়েছেন সেনাপ্রধান— প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের ভূমিকা, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব অত্যন্ত উন্মুক্ত রাখা হয়েছে; তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর পার্লামেন্টের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখা হয়নি এবং এই পদের দায়িত্ব ও বাহিনীর কাঠামো ঠিক নির্ধারণের দায়িত্ব স্পষ্ট করা হয়নি। এই পরিবর্তন পাকিস্তানের ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ ব্যবস্থা দুর্বল করে সামরিক কাঠামোকে আরও বেশি ব্যক্তিনির্ভর করে তুলেছে।
বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আব্বাস খট্টাক ডনকে বলেছেন, আধুনিক যুদ্ধের বাস্তবতা বলে, বিমান, নৌ ও স্থল বাহিনীর স্বাধীনতা ও সমন্বয়ই শক্তির উৎস। কিন্তু পাকিস্তান উল্টোপথে হাঁটছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি বিশ্বমানের চর্চা থেকে সরে যাই, তাহলে এককেন্দ্রিক ক্ষমতা ভবিষ্যতে কৌশলগত ভুলের ঝুঁকি বাড়াবে।’
বিশেষ করে নতুন ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের অধীনে তিন বাহিনীর পারমাণবিক ডেলিভারি সিস্টেম এক ছাতার নিচে আনা হলে বিমান ও নৌবাহিনীর কৌশলগত স্বাধীনতা আরও কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকিল শাহ খোলাখুলি বলেছেন, ‘এটি মুনিরের ক্ষমতার দখলকে আরও পাকাপোক্ত করেছে। পার্লামেন্ট এমনভাবে একজন সামরিক প্রধানের আধিপত্যকে বৈধতা দিয়েছে, যা আমরা আগে কখনও দেখিনি।’ (দ্য গার্ডিয়ান) শাহের মতে, বিচার বিভাগ ও সংসদ উভয়কেই ঠেলে দেওয়া হয়েছে প্রান্তে—যা গণতন্ত্রের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নয়।
২. পাকিস্তানের পারমাণবিক কাঠামো এখনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকলেও সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে কর্তৃত্বের ভারসাম্য বদলে গেছে। ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি–এনসিএ কাঠামোগতভাবে এখনও বেসামরিক নেতৃত্বাধীন। কিন্তু ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডারের (সিএনএসসি) নিয়োগ, পুনঃনিয়োগ ও মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এখন নির্ভর করবে কেবলমাত্র সিডিএফের সুপারিশের ওপর।
কেবল তাই নয়, কফিনে শেষ পেরেক ঠুকার মতো এই সিদ্ধান্তের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংশোধিত সংবিধানের ধারা ৮ই (২) অনুযায়ী, সিএনএসসির নিয়োগ বা মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এটা পাকিস্তানের সংবিধানের ৪, ৯ ও ১৯৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, রাষ্ট্রের সকল নাগরিক আইনের সামনে সমান এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার সাংবিধানিক অধিকার।
পাকিস্তানের সাবেক সামরিক আইন কর্মকর্তা ইনাম-উর-রহিম বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর যেকোনো সিদ্ধান্ত, যদি তা অনিয়ম বা কর্তৃত্ববহির্ভূত হয়, তা উচ্চ আদালতে বিচারযোগ্য— এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি।’
এটা পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপত্যে সেনাবাহিনীর প্রভাবকে আরও স্থায়ী করে তুলছে, যা আইনের শাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
৩. সামরিক কাঠামোর এই পুনর্গঠনের অন্যতম ফল হলো ক্ষমতার চূড়ান্ত কেন্দ্রে একজন ব্যক্তির দীর্ঘায়িত মেয়াদ। প্রতিরক্ষা বাহিনী তথা সেনাবাহিনীর প্রধানের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তা ২০৩৫ পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ তৈরি করা। অর্থাৎ পাকিস্তানের পুরো প্রতিরক্ষা কাঠামো প্রায় এক দশকজুড়ে এক ব্যক্তির সিদ্ধান্ত, দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল হবে।
সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে দীর্ঘায়িত ও সর্বময় ক্ষমতার পাশাপাশি কোনো অপরাধে গ্রেপ্তর ও বিচার থেকেও আজীবন দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) আসিফ ইয়াসিন মালিক এই বিষয়ে কড়া মন্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এক ব্যক্তির জন্য আইন করা হলো, প্রাতিষ্ঠানিক কল্যাণের জন্য নয়।’ (ডন)
তাঁর মতে, তিন বাহিনীর প্রয়োজনে নয়, একজন ব্যক্তিকে সামনে রেখে এই আইন প্রণীত হলো। পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধির মতে, ‘এই আইনি পুনর্গঠন শুধু সামরিক ক্ষমতা বাড়ায়নি, পাকিস্তানের বিচার কাঠামোকেও দুর্বল করে দিয়েছে।’
৪. নিজ বাহিনীর ভেতরে পদোন্নতি-বদলির বিষয়ে বিমান ও নৌবাহিনী প্রধানের ক্ষমতা খর্ব হলো। এখন এই বাহিনী প্রধানদের হাতে কেবল থ্রি স্টার অর্থাৎ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও নিচের পদমর্যাদার পদোন্নতি-বদলির ওপর ক্ষমতা থাকল। ফোর স্টার সব নিয়োগ ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে ‘আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক পরামর্শে’ হবে। অর্থাৎ বাকি দুই বাহিনী প্রধানদের ভূমিকা ও প্রভাব কমল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পুরনো কাঠামোতে সমস্যা থাকলেও নতুন কাঠামো কোনো সমাধান নয়। সিজেসিএসসি বহু বছর ধরেই আনুষ্ঠানিক পদ হিসেবে ছিল এবং তিন বাহিনী কার্যত সমান্তরাল আমলাতন্ত্রের মতো চলত। কিন্তু যেভাবে পাকিস্তানে সেনাপ্রধানকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হলো, সেই পথটি উল্টো। যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের মতো দেশও তিন বাহিনীতে যৌথতা এনেছে, তবে স্বাধীন যৌথ কমান্ড গড়ে তুলে।
বাস্তবে ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের অধীনে সামরিক কাঠামো এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে— বাহিনীসমূহের ভারসাম্য দুর্বল, বিচার বিভাগের ভূমিকা সংকুচিত, পারমাণবিক স্থাপত্যে সেনাবাহিনীর আধিপত্য সুসংহত, এবং প্রতিরক্ষা নীতি-পরিকল্পনা কার্যত একজন ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দের ওপর নির্ভরশীল।
এমন পরিবর্তনে উদ্বেগ তুলে ধরে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মজিদ নিজামী আল জাজিরাকে বলেন, সিডিএফের নতুন ভূমিকা অস্পষ্ট এবং তিন বাহিনীর কৌশলগত সমন্বয় বিপর্যস্ত হতে পারে। কাঠামোর অস্পষ্টতা ভবিষ্যতের সংঘাতে সিদ্ধান্ত বিভ্রান্তি ডেকে আনতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নিয়োগ–বদলি ও কৌশলগত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হলে রাষ্ট্র প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি হারাবে। সেই মুহূর্তে একনায়কতন্ত্র আর সম্ভাবনার পর্যায়ে থাকে না, তা বাস্তবে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। পাকিস্তান সেই রূপান্তরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে। কারণ, পার্লামেন্ট যে আইন পাস করেছে, তা শুধু প্রশাসনিক কাঠামো পাল্টায়নি, রাষ্ট্রকে কার্যত এক ব্যক্তিনির্ভর সামরিক সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার কি তার কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে? সেনাবাহিনীর তিন শাখার মধ্যে ভারসাম্য কি বজায় থাকবে? বিচার বিভাগ ও সংসদ কি একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হবে? সময় জবাব দেবে এসব প্রশ্নের।
হুসাইন আহমদ

এক নতুন সামরিক–রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট ভবনে যেদিন সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস হলো। সিনেটে সামান্য হই হই চই এবং দুজন বিচারকের পদত্যাগ ছাড়া অনেকটা নিরবেই পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোয় ঐতিহাসিক রূপান্তর ঘটে গেল।
যৌথতা, আধুনিকায়ন ও কার্যকারিতার নামে একটি রাষ্ট্রকে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক সামরিক আধিপত্যের দিকে ঠেলে দেওয়ার লিখিত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণের সামনে ‘সামরিক পুনর্গঠন’ হিসেবে তুলে ধরা হলেও পরিবর্তনকে একেবারে ‘সংবিধানপ্রণোদিত সামরিক একনায়কতন্ত্রের সূচনা’ বলছেন বিশ্লেষকেরা।
গত বৃহস্পতিবার আইনে পরিণত হওয়া সংবিধানের এই সংশোধনীর মাধ্যমে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে সর্বময় সামরিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার ও বিচার থেকে আজীবন দায়মুক্তি পেয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, গণতান্ত্রিকভাবে দুর্বল পাকিস্তানের জনগণের জন্য কিছুটা ভরসার জায়গা বিচার বিভাগকেও দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে।
পারমাণবিক ক্ষমতাধর পাকিস্তানে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নতুন নয়। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল এবং পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ার নজির বহু আছে। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ও জেনারেল জিয়া-উল-হক তাঁর উদাহরণ। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সামরিক ক্ষমতাকে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর স্থান দেওয়ার এই ঘটনা নজিরবিহীন ও সুদূরপ্রসারী।
১. সংবিধানের এই সংশোধীর ফলে সেনাপ্রধান আসিম মুনির প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান (সিডিএফ) হলেন। অর্থাৎ তিন বাহিনী, কৌশলগত কমান্ড, এমনকি পারমাণবিক বাহিনী তত্ত্বাবধানকারী কাঠামোর ওপরও তাঁর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। এর ফলে কার্যত তিন বাহিনীর ভেতরের ভারসাম্য ভেঙে গেল। তিন বাহিনীর যৌথ নেতৃত্বের দীর্ঘ ৫ দশকের প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা বাতিল হয়ে সেনাপ্রধানের একনায়ক হওয়ার পথ তৈরি হলো।
এই পরিবর্তনকে ‘আধুনিক যুদ্ধের প্রয়োজনে নেওয়া পদক্ষেপ’ বলে দাবি করছে পাকিস্তান সরকার। কিন্তু বাস্তবে এর মাধ্যমে সর্বময় ক্ষমতা পেয়েছেন সেনাপ্রধান— প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের ভূমিকা, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব অত্যন্ত উন্মুক্ত রাখা হয়েছে; তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর পার্লামেন্টের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখা হয়নি এবং এই পদের দায়িত্ব ও বাহিনীর কাঠামো ঠিক নির্ধারণের দায়িত্ব স্পষ্ট করা হয়নি। এই পরিবর্তন পাকিস্তানের ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ ব্যবস্থা দুর্বল করে সামরিক কাঠামোকে আরও বেশি ব্যক্তিনির্ভর করে তুলেছে।
বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আব্বাস খট্টাক ডনকে বলেছেন, আধুনিক যুদ্ধের বাস্তবতা বলে, বিমান, নৌ ও স্থল বাহিনীর স্বাধীনতা ও সমন্বয়ই শক্তির উৎস। কিন্তু পাকিস্তান উল্টোপথে হাঁটছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি বিশ্বমানের চর্চা থেকে সরে যাই, তাহলে এককেন্দ্রিক ক্ষমতা ভবিষ্যতে কৌশলগত ভুলের ঝুঁকি বাড়াবে।’
বিশেষ করে নতুন ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের অধীনে তিন বাহিনীর পারমাণবিক ডেলিভারি সিস্টেম এক ছাতার নিচে আনা হলে বিমান ও নৌবাহিনীর কৌশলগত স্বাধীনতা আরও কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকিল শাহ খোলাখুলি বলেছেন, ‘এটি মুনিরের ক্ষমতার দখলকে আরও পাকাপোক্ত করেছে। পার্লামেন্ট এমনভাবে একজন সামরিক প্রধানের আধিপত্যকে বৈধতা দিয়েছে, যা আমরা আগে কখনও দেখিনি।’ (দ্য গার্ডিয়ান) শাহের মতে, বিচার বিভাগ ও সংসদ উভয়কেই ঠেলে দেওয়া হয়েছে প্রান্তে—যা গণতন্ত্রের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নয়।
২. পাকিস্তানের পারমাণবিক কাঠামো এখনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকলেও সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে কর্তৃত্বের ভারসাম্য বদলে গেছে। ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি–এনসিএ কাঠামোগতভাবে এখনও বেসামরিক নেতৃত্বাধীন। কিন্তু ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডারের (সিএনএসসি) নিয়োগ, পুনঃনিয়োগ ও মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এখন নির্ভর করবে কেবলমাত্র সিডিএফের সুপারিশের ওপর।
কেবল তাই নয়, কফিনে শেষ পেরেক ঠুকার মতো এই সিদ্ধান্তের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংশোধিত সংবিধানের ধারা ৮ই (২) অনুযায়ী, সিএনএসসির নিয়োগ বা মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এটা পাকিস্তানের সংবিধানের ৪, ৯ ও ১৯৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, রাষ্ট্রের সকল নাগরিক আইনের সামনে সমান এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার সাংবিধানিক অধিকার।
পাকিস্তানের সাবেক সামরিক আইন কর্মকর্তা ইনাম-উর-রহিম বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর যেকোনো সিদ্ধান্ত, যদি তা অনিয়ম বা কর্তৃত্ববহির্ভূত হয়, তা উচ্চ আদালতে বিচারযোগ্য— এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি।’
এটা পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপত্যে সেনাবাহিনীর প্রভাবকে আরও স্থায়ী করে তুলছে, যা আইনের শাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
৩. সামরিক কাঠামোর এই পুনর্গঠনের অন্যতম ফল হলো ক্ষমতার চূড়ান্ত কেন্দ্রে একজন ব্যক্তির দীর্ঘায়িত মেয়াদ। প্রতিরক্ষা বাহিনী তথা সেনাবাহিনীর প্রধানের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তা ২০৩৫ পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ তৈরি করা। অর্থাৎ পাকিস্তানের পুরো প্রতিরক্ষা কাঠামো প্রায় এক দশকজুড়ে এক ব্যক্তির সিদ্ধান্ত, দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল হবে।
সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে দীর্ঘায়িত ও সর্বময় ক্ষমতার পাশাপাশি কোনো অপরাধে গ্রেপ্তর ও বিচার থেকেও আজীবন দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) আসিফ ইয়াসিন মালিক এই বিষয়ে কড়া মন্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এক ব্যক্তির জন্য আইন করা হলো, প্রাতিষ্ঠানিক কল্যাণের জন্য নয়।’ (ডন)
তাঁর মতে, তিন বাহিনীর প্রয়োজনে নয়, একজন ব্যক্তিকে সামনে রেখে এই আইন প্রণীত হলো। পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধির মতে, ‘এই আইনি পুনর্গঠন শুধু সামরিক ক্ষমতা বাড়ায়নি, পাকিস্তানের বিচার কাঠামোকেও দুর্বল করে দিয়েছে।’
৪. নিজ বাহিনীর ভেতরে পদোন্নতি-বদলির বিষয়ে বিমান ও নৌবাহিনী প্রধানের ক্ষমতা খর্ব হলো। এখন এই বাহিনী প্রধানদের হাতে কেবল থ্রি স্টার অর্থাৎ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও নিচের পদমর্যাদার পদোন্নতি-বদলির ওপর ক্ষমতা থাকল। ফোর স্টার সব নিয়োগ ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে ‘আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক পরামর্শে’ হবে। অর্থাৎ বাকি দুই বাহিনী প্রধানদের ভূমিকা ও প্রভাব কমল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পুরনো কাঠামোতে সমস্যা থাকলেও নতুন কাঠামো কোনো সমাধান নয়। সিজেসিএসসি বহু বছর ধরেই আনুষ্ঠানিক পদ হিসেবে ছিল এবং তিন বাহিনী কার্যত সমান্তরাল আমলাতন্ত্রের মতো চলত। কিন্তু যেভাবে পাকিস্তানে সেনাপ্রধানকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হলো, সেই পথটি উল্টো। যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের মতো দেশও তিন বাহিনীতে যৌথতা এনেছে, তবে স্বাধীন যৌথ কমান্ড গড়ে তুলে।
বাস্তবে ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের অধীনে সামরিক কাঠামো এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে— বাহিনীসমূহের ভারসাম্য দুর্বল, বিচার বিভাগের ভূমিকা সংকুচিত, পারমাণবিক স্থাপত্যে সেনাবাহিনীর আধিপত্য সুসংহত, এবং প্রতিরক্ষা নীতি-পরিকল্পনা কার্যত একজন ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দের ওপর নির্ভরশীল।
এমন পরিবর্তনে উদ্বেগ তুলে ধরে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মজিদ নিজামী আল জাজিরাকে বলেন, সিডিএফের নতুন ভূমিকা অস্পষ্ট এবং তিন বাহিনীর কৌশলগত সমন্বয় বিপর্যস্ত হতে পারে। কাঠামোর অস্পষ্টতা ভবিষ্যতের সংঘাতে সিদ্ধান্ত বিভ্রান্তি ডেকে আনতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নিয়োগ–বদলি ও কৌশলগত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হলে রাষ্ট্র প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি হারাবে। সেই মুহূর্তে একনায়কতন্ত্র আর সম্ভাবনার পর্যায়ে থাকে না, তা বাস্তবে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। পাকিস্তান সেই রূপান্তরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে। কারণ, পার্লামেন্ট যে আইন পাস করেছে, তা শুধু প্রশাসনিক কাঠামো পাল্টায়নি, রাষ্ট্রকে কার্যত এক ব্যক্তিনির্ভর সামরিক সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার কি তার কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে? সেনাবাহিনীর তিন শাখার মধ্যে ভারসাম্য কি বজায় থাকবে? বিচার বিভাগ ও সংসদ কি একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হবে? সময় জবাব দেবে এসব প্রশ্নের।

এক নতুন সামরিক–রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট ভবনে যেদিন সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস হলো। সিনেটে সামান্য হই হই চই এবং দুজন বিচারকের পদত্যাগ ছাড়া অনেকটা নিরবেই পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোয় ঐতিহাসিক রূপান্তর ঘটে গেল।
যৌথতা, আধুনিকায়ন ও কার্যকারিতার নামে একটি রাষ্ট্রকে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক সামরিক আধিপত্যের দিকে ঠেলে দেওয়ার লিখিত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণের সামনে ‘সামরিক পুনর্গঠন’ হিসেবে তুলে ধরা হলেও পরিবর্তনকে একেবারে ‘সংবিধানপ্রণোদিত সামরিক একনায়কতন্ত্রের সূচনা’ বলছেন বিশ্লেষকেরা।
গত বৃহস্পতিবার আইনে পরিণত হওয়া সংবিধানের এই সংশোধনীর মাধ্যমে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে সর্বময় সামরিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার ও বিচার থেকে আজীবন দায়মুক্তি পেয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, গণতান্ত্রিকভাবে দুর্বল পাকিস্তানের জনগণের জন্য কিছুটা ভরসার জায়গা বিচার বিভাগকেও দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে।
পারমাণবিক ক্ষমতাধর পাকিস্তানে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নতুন নয়। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল এবং পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ার নজির বহু আছে। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ও জেনারেল জিয়া-উল-হক তাঁর উদাহরণ। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সামরিক ক্ষমতাকে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর স্থান দেওয়ার এই ঘটনা নজিরবিহীন ও সুদূরপ্রসারী।
১. সংবিধানের এই সংশোধীর ফলে সেনাপ্রধান আসিম মুনির প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান (সিডিএফ) হলেন। অর্থাৎ তিন বাহিনী, কৌশলগত কমান্ড, এমনকি পারমাণবিক বাহিনী তত্ত্বাবধানকারী কাঠামোর ওপরও তাঁর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। এর ফলে কার্যত তিন বাহিনীর ভেতরের ভারসাম্য ভেঙে গেল। তিন বাহিনীর যৌথ নেতৃত্বের দীর্ঘ ৫ দশকের প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা বাতিল হয়ে সেনাপ্রধানের একনায়ক হওয়ার পথ তৈরি হলো।
এই পরিবর্তনকে ‘আধুনিক যুদ্ধের প্রয়োজনে নেওয়া পদক্ষেপ’ বলে দাবি করছে পাকিস্তান সরকার। কিন্তু বাস্তবে এর মাধ্যমে সর্বময় ক্ষমতা পেয়েছেন সেনাপ্রধান— প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের ভূমিকা, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব অত্যন্ত উন্মুক্ত রাখা হয়েছে; তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর পার্লামেন্টের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখা হয়নি এবং এই পদের দায়িত্ব ও বাহিনীর কাঠামো ঠিক নির্ধারণের দায়িত্ব স্পষ্ট করা হয়নি। এই পরিবর্তন পাকিস্তানের ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ ব্যবস্থা দুর্বল করে সামরিক কাঠামোকে আরও বেশি ব্যক্তিনির্ভর করে তুলেছে।
বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আব্বাস খট্টাক ডনকে বলেছেন, আধুনিক যুদ্ধের বাস্তবতা বলে, বিমান, নৌ ও স্থল বাহিনীর স্বাধীনতা ও সমন্বয়ই শক্তির উৎস। কিন্তু পাকিস্তান উল্টোপথে হাঁটছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি বিশ্বমানের চর্চা থেকে সরে যাই, তাহলে এককেন্দ্রিক ক্ষমতা ভবিষ্যতে কৌশলগত ভুলের ঝুঁকি বাড়াবে।’
বিশেষ করে নতুন ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের অধীনে তিন বাহিনীর পারমাণবিক ডেলিভারি সিস্টেম এক ছাতার নিচে আনা হলে বিমান ও নৌবাহিনীর কৌশলগত স্বাধীনতা আরও কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকিল শাহ খোলাখুলি বলেছেন, ‘এটি মুনিরের ক্ষমতার দখলকে আরও পাকাপোক্ত করেছে। পার্লামেন্ট এমনভাবে একজন সামরিক প্রধানের আধিপত্যকে বৈধতা দিয়েছে, যা আমরা আগে কখনও দেখিনি।’ (দ্য গার্ডিয়ান) শাহের মতে, বিচার বিভাগ ও সংসদ উভয়কেই ঠেলে দেওয়া হয়েছে প্রান্তে—যা গণতন্ত্রের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নয়।
২. পাকিস্তানের পারমাণবিক কাঠামো এখনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকলেও সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে কর্তৃত্বের ভারসাম্য বদলে গেছে। ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি–এনসিএ কাঠামোগতভাবে এখনও বেসামরিক নেতৃত্বাধীন। কিন্তু ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডারের (সিএনএসসি) নিয়োগ, পুনঃনিয়োগ ও মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এখন নির্ভর করবে কেবলমাত্র সিডিএফের সুপারিশের ওপর।
কেবল তাই নয়, কফিনে শেষ পেরেক ঠুকার মতো এই সিদ্ধান্তের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংশোধিত সংবিধানের ধারা ৮ই (২) অনুযায়ী, সিএনএসসির নিয়োগ বা মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এটা পাকিস্তানের সংবিধানের ৪, ৯ ও ১৯৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, রাষ্ট্রের সকল নাগরিক আইনের সামনে সমান এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার সাংবিধানিক অধিকার।
পাকিস্তানের সাবেক সামরিক আইন কর্মকর্তা ইনাম-উর-রহিম বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর যেকোনো সিদ্ধান্ত, যদি তা অনিয়ম বা কর্তৃত্ববহির্ভূত হয়, তা উচ্চ আদালতে বিচারযোগ্য— এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি।’
এটা পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপত্যে সেনাবাহিনীর প্রভাবকে আরও স্থায়ী করে তুলছে, যা আইনের শাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
৩. সামরিক কাঠামোর এই পুনর্গঠনের অন্যতম ফল হলো ক্ষমতার চূড়ান্ত কেন্দ্রে একজন ব্যক্তির দীর্ঘায়িত মেয়াদ। প্রতিরক্ষা বাহিনী তথা সেনাবাহিনীর প্রধানের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তা ২০৩৫ পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ তৈরি করা। অর্থাৎ পাকিস্তানের পুরো প্রতিরক্ষা কাঠামো প্রায় এক দশকজুড়ে এক ব্যক্তির সিদ্ধান্ত, দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল হবে।
সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে দীর্ঘায়িত ও সর্বময় ক্ষমতার পাশাপাশি কোনো অপরাধে গ্রেপ্তর ও বিচার থেকেও আজীবন দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) আসিফ ইয়াসিন মালিক এই বিষয়ে কড়া মন্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এক ব্যক্তির জন্য আইন করা হলো, প্রাতিষ্ঠানিক কল্যাণের জন্য নয়।’ (ডন)
তাঁর মতে, তিন বাহিনীর প্রয়োজনে নয়, একজন ব্যক্তিকে সামনে রেখে এই আইন প্রণীত হলো। পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধির মতে, ‘এই আইনি পুনর্গঠন শুধু সামরিক ক্ষমতা বাড়ায়নি, পাকিস্তানের বিচার কাঠামোকেও দুর্বল করে দিয়েছে।’
৪. নিজ বাহিনীর ভেতরে পদোন্নতি-বদলির বিষয়ে বিমান ও নৌবাহিনী প্রধানের ক্ষমতা খর্ব হলো। এখন এই বাহিনী প্রধানদের হাতে কেবল থ্রি স্টার অর্থাৎ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও নিচের পদমর্যাদার পদোন্নতি-বদলির ওপর ক্ষমতা থাকল। ফোর স্টার সব নিয়োগ ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে ‘আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক পরামর্শে’ হবে। অর্থাৎ বাকি দুই বাহিনী প্রধানদের ভূমিকা ও প্রভাব কমল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পুরনো কাঠামোতে সমস্যা থাকলেও নতুন কাঠামো কোনো সমাধান নয়। সিজেসিএসসি বহু বছর ধরেই আনুষ্ঠানিক পদ হিসেবে ছিল এবং তিন বাহিনী কার্যত সমান্তরাল আমলাতন্ত্রের মতো চলত। কিন্তু যেভাবে পাকিস্তানে সেনাপ্রধানকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হলো, সেই পথটি উল্টো। যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের মতো দেশও তিন বাহিনীতে যৌথতা এনেছে, তবে স্বাধীন যৌথ কমান্ড গড়ে তুলে।
বাস্তবে ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের অধীনে সামরিক কাঠামো এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে— বাহিনীসমূহের ভারসাম্য দুর্বল, বিচার বিভাগের ভূমিকা সংকুচিত, পারমাণবিক স্থাপত্যে সেনাবাহিনীর আধিপত্য সুসংহত, এবং প্রতিরক্ষা নীতি-পরিকল্পনা কার্যত একজন ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দের ওপর নির্ভরশীল।
এমন পরিবর্তনে উদ্বেগ তুলে ধরে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মজিদ নিজামী আল জাজিরাকে বলেন, সিডিএফের নতুন ভূমিকা অস্পষ্ট এবং তিন বাহিনীর কৌশলগত সমন্বয় বিপর্যস্ত হতে পারে। কাঠামোর অস্পষ্টতা ভবিষ্যতের সংঘাতে সিদ্ধান্ত বিভ্রান্তি ডেকে আনতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নিয়োগ–বদলি ও কৌশলগত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হলে রাষ্ট্র প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি হারাবে। সেই মুহূর্তে একনায়কতন্ত্র আর সম্ভাবনার পর্যায়ে থাকে না, তা বাস্তবে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। পাকিস্তান সেই রূপান্তরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে। কারণ, পার্লামেন্ট যে আইন পাস করেছে, তা শুধু প্রশাসনিক কাঠামো পাল্টায়নি, রাষ্ট্রকে কার্যত এক ব্যক্তিনির্ভর সামরিক সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার কি তার কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে? সেনাবাহিনীর তিন শাখার মধ্যে ভারসাম্য কি বজায় থাকবে? বিচার বিভাগ ও সংসদ কি একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হবে? সময় জবাব দেবে এসব প্রশ্নের।

কাজী মারুফুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও নীতিবিষয়ক কেন্দ্রের সিনিয়র ফেলো।
৮ ঘণ্টা আগে
ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে।
৮ ঘণ্টা আগে
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। ১৪ বছর বয়সী সেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ধর্ষণের আট দিন পরে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে এলাকাবাসী আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন।
৮ ঘণ্টা আগে
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগে
কাজী মারুফুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও নীতিবিষয়ক কেন্দ্রের সিনিয়র ফেলো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। তিনি ইউনিভার্সিটি অব বার্গেন, নরওয়ে থেকে এমফিল, ডিএএডি স্কলারশিপসহ জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক জার্নালের পর্যালোচনাকারী। সম্প্রতি দেশের নানা বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কেন পথ হারাল?
গণ-অভ্যুত্থানের প্রাথমিক অর্জন একটা স্বৈরতান্ত্রিক সরকার ও শাসনব্যবস্থার পতন, সেই পতনের পূর্ণ লক্ষ্য কিন্তু অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেষ হয়নি। একটা শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রে যে বা যাঁরা ছিলেন, শুধু তাঁর বা তাঁদেরই পতন হয়েছে।
কিন্তু এটা তো শুধু একজন ব্যক্তির ব্যাপার ছিল না। এই ব্যক্তিকে সমর্থন করেছে সিভিল প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী, সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, ব্যবসায়ী শ্রেণি এবং বুদ্ধিজীবী শ্রেণি। যারা এই ব্যবস্থাটাকে টিকিয়ে রেখেছিল তাদের সবকিছু ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। ফলে এই শক্তিগুলো আপাতত একটু পেছনে সরে গেছে, কিন্তু তারা তো নিশ্চিহ্ন হয়নি। তাদের যে বড় রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে, তাও কিন্তু না। ফলে তারা চোখের সামনে থেকে খানিকটা সরেছে, কিন্তু এই শক্তিগুলো এখনো সক্রিয় আছে। যদি ব্যবসায়ীদের কথা ধরা যায়, যে ব্যবসায়ীরা বিগত রেজিমকে সমর্থন করতেন, সেই ব্যবসায়ীদের তো পতন হয়নি। তাঁরা যে অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দখল করতেন, সেগুলো তো এখনো বলবৎ আছে।
সিভিল প্রশাসন বা আমলাতন্ত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। একজন ‘ক’ সচিবের জায়গায় ‘জ’ সচিব এসেছেন। কিন্তু ‘জ’ সচিব আসার মধ্য দিয়ে আমলাতান্ত্রিকতার নিয়মতান্ত্রিকতা, ন্যায্যতা, গণমুখিতা ও দায়বদ্ধতা—এই চারটিকে উল্লেখযোগ্য মনে করি, সেগুলো তো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে আমলাতন্ত্রের মধ্যে বস্তুত কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এটা না হওয়ার কারণ কী?
এটা না হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে। তার মধ্যে একটা প্রধান কারণ হচ্ছে, গণ-অভ্যুত্থানের যে শক্তিগুলো ছিল, সেই শক্তিগুলোর এই নতুন পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। অর্থাৎ আমরা আমলাতন্ত্রের বদল চাই, সেই বদলের পদ্ধতিটা কী হবে, সেটার কোনো পূর্ব প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ছিল না। আবার রাতারাতি যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে, সেই পরিবর্তনগুলোকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে এবং গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে রাখতে হবে, সেটার বিকল্প পদ্ধতি কোনো পক্ষই অফার করতে পারেনি। ফলে যারা সংগঠিত ছিল, অচিরেই তারা সেটাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। মানে ‘ক’-এর জায়গায় ‘ঙ’ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এটা তো আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল না। আকাঙ্ক্ষা ছিল ব্যবস্থাটার বদল। সেটা তো হয়নি।
কেউ কেউ বলছেন, নতুন স্বৈরতন্ত্রের পদধ্বনি শোনা বা অনুমান করা যাচ্ছে। আপনার কী মতামত?
নতুন স্বৈরতন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, এটা আমার কাছে অতি সরলীকরণ মনে হয়। তবে আমার বিশ্বাস, এই বাংলাদেশ আর ২০২৪-এর আগের বাংলাদেশ—এটার মধ্যে গুণগত পার্থক্য আছে। নতুন বাংলাদেশে কারও পক্ষে, কোনো দলের পক্ষে এবং কোনো শক্তির পক্ষে আগের মতো আর স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালানো সম্ভব হবে না। নতুন স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা আবার যে আসবে, সেটা নিয়ে আমি ভাবছিও না।
একটা উদাহরণ দিই, এখনকার মাঠটা দুর্বল। ধরেন, আমি একটা সুন্দর শার্ট পরে আছি, তখন অনেকে বলবেন, আমি তো ধনী। কিন্তু সত্যিকারভাবে দীর্ঘদিন ধরে সুন্দর শার্ট পরে থাকব কি না, সেটার নিশ্চয়তা তৈরি হয়নি। ফলে এখন যে শক্তিগুলোর উত্থান এবং যে শক্তিগুলোর পতন দেখা যাচ্ছে—এটাই কিন্তু শেষ কথা নয়। আসলে আমাদের অভ্যুত্থান পর্বটা এখনো শেষ হয়নি। ফলে এটা থিতু হওয়া এবং শক্তিগুলোর মধ্যে বোঝাপড়াও ঠিক হয়নি। সেটার জন্য আরও সময় লাগবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বছর পর ডাকসু নির্বাচন হলো। নতুন একটি ছাত্রসংগঠন এখন এর পরিচালনার দায়িত্বে। তাদের কার্যক্রমকে কীভাবে দেখছেন?
প্রথমত একটা নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনে একটা ছাত্রসংগঠন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। খেয়াল করার বিষয় যে, ডাকসুর ভূমিকা কী? ডাকসু আসলে কী করতে পারে? ডাকসুর কাজের পরিধি কতটুকু? সে বিষয়ে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত এবং যারা নতুন করে ডাকসু পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে—তাদের কারোরই ডাকসু কার্যপ্রণালি নিয়ে কোনো ধারণা নেই। ধারণা করার দরকার নেই। কারণ, আমাদের কাছে তো পুরো ডকুমেন্টস আছে। ডকুমেন্টসটা হলো ডাকসুর গঠনতন্ত্র। সেই গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট করে লেখা আছে, কে, কী ভূমিকা পালন করতে পারে এবং কতটুকু করতে পারে। সেখানে কী লেখা আছে—আমার ধারণা, সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অর্থাৎ ভিসি থেকে শুরু করে বাকি যাঁরা আছেন এবং ডাকসুর ভিপি, জিএসসহ কেউ-ই ডাকসুর গঠনতন্ত্র ভালোভাবে আত্মস্থ করতে পারেননি।
তবে একটা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের এ রকম একটা সংস্থা থাকা দরকার। কারণ, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং এর একটা অন্যতম কো-কারিকুলাম অ্যাকটিভিজমও। এটা অবশ্যই থাকতে হবে। ফলে সেটা আছে। কিন্তু ডাকসুকে কার্যকরভাবে গড়ে তোলার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও সচেতনতা থাকা দরকার, সেসবের কিছুই নতুন নেতৃত্বের মধ্যে নেই। তাঁদের কার্যকলাপের মধ্যে এখনো তা প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে না।
আমার কাছে মনে হয়, এখনো দায়িত্ব পালনের জন্য সামনে যে কয়েক মাস আছে, এই সময়ের মধ্যে তাদের আগে সেটা আত্মস্থ করা দরকার। এরপর একটা উদাহরণ তৈরি করা দরকার, পরবর্তী সময়ে যাঁরা ডাকসুর নেতৃত্ব নির্বাচিত হবেন, তাঁরা যেন নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্য দিয়ে তাঁদের যতটুকু করার কথা, সেই কাজের মধ্যে তাঁরা সীমাবদ্ধ থাকতে পারেন—সেই শিক্ষাটা নেওয়া খুব জরুরি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কি আমরা কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে পাব বলে মনে করেন?
প্রথম কথা হলো, বাংলাদেশের যে পরিবর্তন সেটার জন্য নির্বাচন করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। নির্বাচন দুটি কাজ করবে। প্রথমত, নির্বাচন হলে নির্বাচিত সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার বৈধ শক্তির বৈধতা পাবে জনগণের কাছ থেকে। ফলে তাদের আইনগত শক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তি যুক্ত হলে সেটা আরও বড় শক্তি আকারে হাজির হবে। ওই শক্তিটা প্রয়োগ করে স্থিতিশীলতা অর্জনে কাজ করতে পারবে।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচন এমন একটা প্রক্রিয়া—যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হবে এবং সেটাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করবে।
মাজার-দরগা ভাঙা, বাউলদের প্রতি নিগ্রহ—এ ঘটনাগুলোকে আপনি কীভাবে দেখেন। এসব ঘটনায় আমাদের সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ কি সংকটের মধ্যে পড়ছে না।
আমাদের যে সংবিধান এখনো কার্যকর আছে এবং এর বাইরেও আমরা জাতিগোষ্ঠী হিসেবে আছি, সে জায়গায় বহুত্ববাদ মানে বহু চিন্তা, বহু ধারণা, বহু মত আমাদের জীবন-যাত্রার অংশ। এখন আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি, সেটা বহুত্ববাদী এবং ভিন্নতার প্রতি পরিষ্কারভাবে একটা আক্রমণ। সম্প্রতি বাউলদের প্রতি আক্রমণের ঘটনা, সেটা কিন্তু শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকে। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পরে সেটা একটা কনক্রিট আকার ধারণ করেছে।
এটা পরিষ্কারভাবে মানুষের চিন্তা, তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, জীবনযাত্রা, সংস্কৃতির অধিকারের পরিচিতির ওপর বিশাল একটা আক্রমণ। তবে আক্রমণগুলো ঠেকানো এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রের। আশ্চর্যজনকভাবে রাষ্ট্র এখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যত ধরনের ঘটনা ঘটছে—অমুকের বাড়ি ভাঙা হোক, তমুককে ঘেরাও করে দাবি আদায় করা হোক, মাজার ভাঙা হোক—সব ঘটনায় মানুষ তার নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছে, যেটা কোনো সভ্য দেশের নিয়ম হতে পারে না। এখানে অন্তর্বর্তী সরকার এসব নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ।
বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধাগুলো কী?
অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অবশ্যই আমাদের কাছে স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটা এক দিনে অর্জন করা যাবে না। কিন্তু প্রথম কথা হচ্ছে, আমরা যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে আছি, এখানে যারা আইন ভঙ্গ করে এবং নাগরিকদের অধিকার ভঙ্গ করে—এ রকম প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হলো রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম রাস্তা হলো সংবিধান। সংবিধানের মধ্য দিয়ে সেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দায়বদ্ধ করতে হবে। যেমন পুলিশ, বিচার বিভাগ, আমলাতন্ত্র, স্থানীয় সরকার—এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এই নিয়ন্ত্রণ করার রুলস বা সূত্র হলো, অবশ্যই মানতে হবে মানে অলঙ্ঘনীয় আইন হলো আমাদের সংবিধান।
বর্তমান সংবিধানের অনেক বিষয় আছে, যেটা এই সুবিধাগুলো দিতে পারে না। তাই এই সংবিধান সংস্কারে যে প্রস্তাবগুলো উত্থাপিত হয়েছে, সেগুলোর যদি পূর্ণ বাস্তবায়ন নতুন সরকার এসে করে, তাহলে আমাদের একটা অগ্রগতি হতে পারে।
তবে মোটের ওপর একটা সাংস্কৃতিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আবহ তৈরি করা দরকার বহু মতের, বহু পথের। সেই পরিসর তৈরি করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল, বিশ্ববিদ্যালয়, সিভিল সোসাইটির একটা কনসার্টেন্ট এফোর্ট লাগবে। সবার জায়গা থেকে বহুত্ববাদ, ভিন্নতার প্রতি শ্রদ্ধা, প্রান্তিক মানুষ যেমন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ, ভিন্ন মত-পথ ও সংস্কৃতির এবং ভিন্ন পরিচয়ের মানুষকে যদি আমরা আমাদের পরিসরের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, তাহলে ক্রমেই তারা তাদের কণ্ঠগুলোকে রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারবে। এভাবে আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পৌঁছাতে পারব।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কেন পথ হারাল?
গণ-অভ্যুত্থানের প্রাথমিক অর্জন একটা স্বৈরতান্ত্রিক সরকার ও শাসনব্যবস্থার পতন, সেই পতনের পূর্ণ লক্ষ্য কিন্তু অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেষ হয়নি। একটা শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রে যে বা যাঁরা ছিলেন, শুধু তাঁর বা তাঁদেরই পতন হয়েছে।
কিন্তু এটা তো শুধু একজন ব্যক্তির ব্যাপার ছিল না। এই ব্যক্তিকে সমর্থন করেছে সিভিল প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী, সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, ব্যবসায়ী শ্রেণি এবং বুদ্ধিজীবী শ্রেণি। যারা এই ব্যবস্থাটাকে টিকিয়ে রেখেছিল তাদের সবকিছু ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। ফলে এই শক্তিগুলো আপাতত একটু পেছনে সরে গেছে, কিন্তু তারা তো নিশ্চিহ্ন হয়নি। তাদের যে বড় রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে, তাও কিন্তু না। ফলে তারা চোখের সামনে থেকে খানিকটা সরেছে, কিন্তু এই শক্তিগুলো এখনো সক্রিয় আছে। যদি ব্যবসায়ীদের কথা ধরা যায়, যে ব্যবসায়ীরা বিগত রেজিমকে সমর্থন করতেন, সেই ব্যবসায়ীদের তো পতন হয়নি। তাঁরা যে অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দখল করতেন, সেগুলো তো এখনো বলবৎ আছে।
সিভিল প্রশাসন বা আমলাতন্ত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। একজন ‘ক’ সচিবের জায়গায় ‘জ’ সচিব এসেছেন। কিন্তু ‘জ’ সচিব আসার মধ্য দিয়ে আমলাতান্ত্রিকতার নিয়মতান্ত্রিকতা, ন্যায্যতা, গণমুখিতা ও দায়বদ্ধতা—এই চারটিকে উল্লেখযোগ্য মনে করি, সেগুলো তো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে আমলাতন্ত্রের মধ্যে বস্তুত কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এটা না হওয়ার কারণ কী?
এটা না হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে। তার মধ্যে একটা প্রধান কারণ হচ্ছে, গণ-অভ্যুত্থানের যে শক্তিগুলো ছিল, সেই শক্তিগুলোর এই নতুন পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। অর্থাৎ আমরা আমলাতন্ত্রের বদল চাই, সেই বদলের পদ্ধতিটা কী হবে, সেটার কোনো পূর্ব প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ছিল না। আবার রাতারাতি যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে, সেই পরিবর্তনগুলোকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে এবং গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে রাখতে হবে, সেটার বিকল্প পদ্ধতি কোনো পক্ষই অফার করতে পারেনি। ফলে যারা সংগঠিত ছিল, অচিরেই তারা সেটাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। মানে ‘ক’-এর জায়গায় ‘ঙ’ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এটা তো আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল না। আকাঙ্ক্ষা ছিল ব্যবস্থাটার বদল। সেটা তো হয়নি।
কেউ কেউ বলছেন, নতুন স্বৈরতন্ত্রের পদধ্বনি শোনা বা অনুমান করা যাচ্ছে। আপনার কী মতামত?
নতুন স্বৈরতন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, এটা আমার কাছে অতি সরলীকরণ মনে হয়। তবে আমার বিশ্বাস, এই বাংলাদেশ আর ২০২৪-এর আগের বাংলাদেশ—এটার মধ্যে গুণগত পার্থক্য আছে। নতুন বাংলাদেশে কারও পক্ষে, কোনো দলের পক্ষে এবং কোনো শক্তির পক্ষে আগের মতো আর স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালানো সম্ভব হবে না। নতুন স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা আবার যে আসবে, সেটা নিয়ে আমি ভাবছিও না।
একটা উদাহরণ দিই, এখনকার মাঠটা দুর্বল। ধরেন, আমি একটা সুন্দর শার্ট পরে আছি, তখন অনেকে বলবেন, আমি তো ধনী। কিন্তু সত্যিকারভাবে দীর্ঘদিন ধরে সুন্দর শার্ট পরে থাকব কি না, সেটার নিশ্চয়তা তৈরি হয়নি। ফলে এখন যে শক্তিগুলোর উত্থান এবং যে শক্তিগুলোর পতন দেখা যাচ্ছে—এটাই কিন্তু শেষ কথা নয়। আসলে আমাদের অভ্যুত্থান পর্বটা এখনো শেষ হয়নি। ফলে এটা থিতু হওয়া এবং শক্তিগুলোর মধ্যে বোঝাপড়াও ঠিক হয়নি। সেটার জন্য আরও সময় লাগবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বছর পর ডাকসু নির্বাচন হলো। নতুন একটি ছাত্রসংগঠন এখন এর পরিচালনার দায়িত্বে। তাদের কার্যক্রমকে কীভাবে দেখছেন?
প্রথমত একটা নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনে একটা ছাত্রসংগঠন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। খেয়াল করার বিষয় যে, ডাকসুর ভূমিকা কী? ডাকসু আসলে কী করতে পারে? ডাকসুর কাজের পরিধি কতটুকু? সে বিষয়ে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত এবং যারা নতুন করে ডাকসু পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে—তাদের কারোরই ডাকসু কার্যপ্রণালি নিয়ে কোনো ধারণা নেই। ধারণা করার দরকার নেই। কারণ, আমাদের কাছে তো পুরো ডকুমেন্টস আছে। ডকুমেন্টসটা হলো ডাকসুর গঠনতন্ত্র। সেই গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট করে লেখা আছে, কে, কী ভূমিকা পালন করতে পারে এবং কতটুকু করতে পারে। সেখানে কী লেখা আছে—আমার ধারণা, সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অর্থাৎ ভিসি থেকে শুরু করে বাকি যাঁরা আছেন এবং ডাকসুর ভিপি, জিএসসহ কেউ-ই ডাকসুর গঠনতন্ত্র ভালোভাবে আত্মস্থ করতে পারেননি।
তবে একটা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের এ রকম একটা সংস্থা থাকা দরকার। কারণ, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং এর একটা অন্যতম কো-কারিকুলাম অ্যাকটিভিজমও। এটা অবশ্যই থাকতে হবে। ফলে সেটা আছে। কিন্তু ডাকসুকে কার্যকরভাবে গড়ে তোলার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও সচেতনতা থাকা দরকার, সেসবের কিছুই নতুন নেতৃত্বের মধ্যে নেই। তাঁদের কার্যকলাপের মধ্যে এখনো তা প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে না।
আমার কাছে মনে হয়, এখনো দায়িত্ব পালনের জন্য সামনে যে কয়েক মাস আছে, এই সময়ের মধ্যে তাদের আগে সেটা আত্মস্থ করা দরকার। এরপর একটা উদাহরণ তৈরি করা দরকার, পরবর্তী সময়ে যাঁরা ডাকসুর নেতৃত্ব নির্বাচিত হবেন, তাঁরা যেন নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্য দিয়ে তাঁদের যতটুকু করার কথা, সেই কাজের মধ্যে তাঁরা সীমাবদ্ধ থাকতে পারেন—সেই শিক্ষাটা নেওয়া খুব জরুরি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কি আমরা কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে পাব বলে মনে করেন?
প্রথম কথা হলো, বাংলাদেশের যে পরিবর্তন সেটার জন্য নির্বাচন করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। নির্বাচন দুটি কাজ করবে। প্রথমত, নির্বাচন হলে নির্বাচিত সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার বৈধ শক্তির বৈধতা পাবে জনগণের কাছ থেকে। ফলে তাদের আইনগত শক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তি যুক্ত হলে সেটা আরও বড় শক্তি আকারে হাজির হবে। ওই শক্তিটা প্রয়োগ করে স্থিতিশীলতা অর্জনে কাজ করতে পারবে।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচন এমন একটা প্রক্রিয়া—যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হবে এবং সেটাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করবে।
মাজার-দরগা ভাঙা, বাউলদের প্রতি নিগ্রহ—এ ঘটনাগুলোকে আপনি কীভাবে দেখেন। এসব ঘটনায় আমাদের সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ কি সংকটের মধ্যে পড়ছে না।
আমাদের যে সংবিধান এখনো কার্যকর আছে এবং এর বাইরেও আমরা জাতিগোষ্ঠী হিসেবে আছি, সে জায়গায় বহুত্ববাদ মানে বহু চিন্তা, বহু ধারণা, বহু মত আমাদের জীবন-যাত্রার অংশ। এখন আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি, সেটা বহুত্ববাদী এবং ভিন্নতার প্রতি পরিষ্কারভাবে একটা আক্রমণ। সম্প্রতি বাউলদের প্রতি আক্রমণের ঘটনা, সেটা কিন্তু শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকে। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পরে সেটা একটা কনক্রিট আকার ধারণ করেছে।
এটা পরিষ্কারভাবে মানুষের চিন্তা, তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, জীবনযাত্রা, সংস্কৃতির অধিকারের পরিচিতির ওপর বিশাল একটা আক্রমণ। তবে আক্রমণগুলো ঠেকানো এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রের। আশ্চর্যজনকভাবে রাষ্ট্র এখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যত ধরনের ঘটনা ঘটছে—অমুকের বাড়ি ভাঙা হোক, তমুককে ঘেরাও করে দাবি আদায় করা হোক, মাজার ভাঙা হোক—সব ঘটনায় মানুষ তার নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছে, যেটা কোনো সভ্য দেশের নিয়ম হতে পারে না। এখানে অন্তর্বর্তী সরকার এসব নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ।
বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধাগুলো কী?
অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অবশ্যই আমাদের কাছে স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটা এক দিনে অর্জন করা যাবে না। কিন্তু প্রথম কথা হচ্ছে, আমরা যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে আছি, এখানে যারা আইন ভঙ্গ করে এবং নাগরিকদের অধিকার ভঙ্গ করে—এ রকম প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হলো রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম রাস্তা হলো সংবিধান। সংবিধানের মধ্য দিয়ে সেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দায়বদ্ধ করতে হবে। যেমন পুলিশ, বিচার বিভাগ, আমলাতন্ত্র, স্থানীয় সরকার—এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এই নিয়ন্ত্রণ করার রুলস বা সূত্র হলো, অবশ্যই মানতে হবে মানে অলঙ্ঘনীয় আইন হলো আমাদের সংবিধান।
বর্তমান সংবিধানের অনেক বিষয় আছে, যেটা এই সুবিধাগুলো দিতে পারে না। তাই এই সংবিধান সংস্কারে যে প্রস্তাবগুলো উত্থাপিত হয়েছে, সেগুলোর যদি পূর্ণ বাস্তবায়ন নতুন সরকার এসে করে, তাহলে আমাদের একটা অগ্রগতি হতে পারে।
তবে মোটের ওপর একটা সাংস্কৃতিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আবহ তৈরি করা দরকার বহু মতের, বহু পথের। সেই পরিসর তৈরি করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল, বিশ্ববিদ্যালয়, সিভিল সোসাইটির একটা কনসার্টেন্ট এফোর্ট লাগবে। সবার জায়গা থেকে বহুত্ববাদ, ভিন্নতার প্রতি শ্রদ্ধা, প্রান্তিক মানুষ যেমন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ, ভিন্ন মত-পথ ও সংস্কৃতির এবং ভিন্ন পরিচয়ের মানুষকে যদি আমরা আমাদের পরিসরের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, তাহলে ক্রমেই তারা তাদের কণ্ঠগুলোকে রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারবে। এভাবে আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পৌঁছাতে পারব।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

এক নতুন সামরিক–রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট ভবনে যেদিন সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস হলো। সিনেটে সামান্য হই হই চই এবং দুজন বিচারকের পদত্যাগ ছাড়া অনেকটা নিরবেই পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোয় ঐতিহাসিক রূপান্তর ঘটে গেল।
২২ দিন আগে
ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে।
৮ ঘণ্টা আগে
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। ১৪ বছর বয়সী সেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ধর্ষণের আট দিন পরে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে এলাকাবাসী আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন।
৮ ঘণ্টা আগে
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগেমৃত্যুঞ্জয় রায়

ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তায় নামলে যদি সেগুলো ভেঙে পড়ে! ভেঙে না পড়লেও যদি একটা ছাদের রেলিং ভেঙে মাথায় পড়ে! রাস্তায় থাকা তো সেই ঝুঁকিরই ব্যাপার। মুহূর্তের মধ্যে চিন্তা করলাম, আশপাশে ফাঁকা বড় মাঠ কোথায়? কাছাকাছি তার একটিও নেই। তার চেয়ে ঘরে কোনো মজবুত বিমের নিচে থাকাটাই নিরাপদ ভেবে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম একটি কলাম ধরে। কাঁপাকাঁপি করে ফ্রিজ সরল, আলমারি নড়ল। আর একটু জোরে হলে রক্ষে ছিল না। ঢাকা শহর থেকে লাশ উদ্ধারের মানুষ পাওয়া যেত না। এই হলো আমাদের প্রিয় ঢাকা শহর।
একটু খালি জায়গাও আমরা আমাদের রক্ষার জন্য ছেড়ে দিইনি। নিজেদের জন্য যখন ছাড়িনি, তখন গাছপালার জন্য কেন আর ছাড়ব? মহল্লায় মহল্লায় কোনো বড় মাঠ নেই। যে রাস্তা দিয়েই হেঁটে যাই, সে রাস্তাতেই কেবল দালানকোঠার জঞ্জাল, পাকা রাস্তা আর ফুটপাত। যেসব রাস্তার ধারেও যে গাছপালা আছে, সেগুলোরও গোড়া পর্যন্ত পাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ যেন একটি গাছকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলে তার গলা টিপে হত্যার সব আয়োজন আমরা সেরে রেখেছি। গাছটা যে আকাশের দিকে বাড়বে তারও জো নেই। রাস্তার ধারে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার গাছপালার সে সাধকেও খুন করেছে। বৃষ্টি হলে সে বৃষ্টির পানিতে যে মাটি ভিজবে, চারদিকে কংক্রিটে চাপা পড়া মাটির সে সুযোগও নেই। গাছগুলো তো দিনের পর দিন পানির পিপাসায় ধুঁকছে। রাস্তায় বা সরকারি জায়গাগুলোয় লাগানো গাছগুলোতে কেউ পানি দেয় না, খাবার দেয় না। মানুষ গাছকে না দেখলেও গাছ তো মানুষকে না দেখে পারে না। তাই সে তার সব শক্তি দিয়ে পৃথিবীকে সবুজ ও বাসযোগ্য রাখতে সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছে। অথচ সেই উপকারী বন্ধুদেরই আমরা জায়গা না দিয়ে জায়গা করে দিচ্ছি দালানকোঠাদের। দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে ঢাকাসহ সব শহরের সবুজ এলাকা। কেবল কংক্রিট আর কঠিন মমতাহীনতার গল্পই যেন রোজ আমরা লিখে যাচ্ছি। অথচ একটি শহরকে ভালো রাখতে হলে, শহরের মানুষকে সুস্থ রাখতে হলে প্রতিটি শহরেই পরিমিত পরিমাণে খোলা জায়গা থাকা দরকার।
শহরে মানুষ বাড়লে সে অনুপাতে তাদের জন্য খোলা জায়গার পরিমাণও বাড়া উচিত। কিন্তু হচ্ছে ঠিক তার উল্টোটা। শহরে মানুষ যত বাড়ছে, খালি বা খোলা জায়গা তত কমছে, জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে, খাল সরু হতে হতে একসময় মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে থাকছে না। অথচ প্রতিটি শহর ও শহরের মানুষকে ভালো রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ ও উন্মুক্ত পাবলিক স্পেস থাকা দরকার। এসব খোলা জায়গা নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া এগুলো নগরবাসীকে সামাজিক সংহতি গড়ে তুলতেও সাহায্য করে। এমনকি এরূপ খোলা জায়গা ও সবুজ অঞ্চল থাকলে তা নগরের বায়ুদূষণ কমায় ও মানুষকে নানা রকম আর্থিক সুবিধা দেয়। কেননা, মানুষ সুস্থ থাকলে স্বভাবতই সে চিকিৎসকের কাছে যাবে না। ফলে নগরবাসী প্রতিবছর যে বিপুল পরিমাণ টাকা চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করছে তা সাশ্রয় হবে, যা তাদের জীবনমান বাড়াতে সাহায্য করবে।
বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখন বাস করে শহরে। এই সংখ্যা ২০৩০ সালে হবে ৬০ শতাংশ ও ২০৫০ সালে হবে ৭০ শতাংশ। শহর এলাকার অবস্থা ও মান তাই বিশ্বের অনেক মানুষের সুস্থতার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। স্বাস্থ্য সচেতন নগর গড়তে না পারলে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই অসুস্থ থাকবে। শহর কেবল শুধু মানুষের থাকার স্থানই না, বরং সেটি উদ্ভাবন, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি চর্চারও কেন্দ্রস্থল। তাই শহরের মানুষেরা ভালো না থাকলে এসব বিষয়ও বিকশিত হবে না, সভ্যতার বিকাশও রুদ্ধ হবে। তাই প্রতিটি শহরেই প্রয়োজনীয় পরিমাণে পাবলিক স্পেস থাকতে হবে।
পাবলিক স্পেস হলো যেখানে জনসাধারণের প্রবেশ উন্মুক্ত এবং সে জায়গাকে উপভোগ করার জন্য জনগণকে কোনো মূল্য দিতে হয় না। এসব স্থান হলো জনসাধারণের বিভিন্ন কার্যকলাপ ও বিনোদনের একটি কেন্দ্র। ঢাকা শহরের প্রধান পাবলিক স্পেসগুলো হলো রমনা, সোহরাওয়ার্দী, ওসমানী, চন্দ্রিমা, বলধা ও উদ্ভিদ উদ্যান এবং ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিল ও গুলশান লেক। দুটি সিটি করপোরেশনের আওতায় ৩০৬ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা শহরে বাস করে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ। তার মানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ঢাকা শহরে বাস করে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ। অথচ এ শহরে খেলার মাঠ আছে মাত্র ৩৩২ একরে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ তথা খোলা জায়গা নেই। শহরে একজন মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচতে হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে জনপ্রতি ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গার প্রয়োজন। ঢাকা শহরে যা আছে ১ বর্গমিটারেরও কম। ঢাকা শহরে প্রতি বর্গফুটের হিসাবে যেখানে জমি বেচাকেনা হয় সেখানে বর্গকিলোমিটারের হিসাবে ফাঁকা জায়গা বা পাবলিক স্পেস থাকা দুরাশা।
জাতিসংঘের ইউএন-হ্যাবিটেটের তথ্য অনুযায়ী একটি শহরে মোট আয়তনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ জায়গা পাবলিক স্পেস হিসেবে থাকা উচিত, যার মধ্যে ৩০-৩৫ শতাংশ থাকবে রাস্তাঘাট ও ফুটপাত এবং ১৫-২০ শতাংশ জায়গা থাকবে পাবলিক স্পেস। প্রাচীনকালে ঢাকা শহরের পাবলিক স্পেস ছিল অবারিত, ধানখেতও ছিল। মোগল আমলের আগে পুরান ঢাকা একটি সহজাত পদ্ধতিতে বিকশিত হয়েছিল। ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকাবাসী খোলামেলা জায়গায় সামাজিকীকরণের অভ্যাস পেয়েছিল। এর ফলে একটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক স্থানবিন্যাস গড়ে উঠেছিল। গলি (রাস্তা), মোড় (নোড), মহল্লা (পাড়া) ও চক (বাজার)। রাস্তার ধারে মহল্লাগুলো রৈখিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল। রাস্তাগুলো ছিল মহল্লার কেন্দ্রবিন্দু। এগুলো ছিল আঁকাবাঁকা, অনিয়ত এক জটিল নেটওয়ার্ক, যেগুলো গিয়ে মিশেছিল চকে। ঢাকা একসময় প্রশান্তির শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। সে শহরে ছিল মনোরম উদ্যান, পরিষ্কার রাস্তা ও সবুজের সমারোহ। এখন তা হয়েছে ইট ও কংক্রিটের জঙ্গল। শহরের পুরোনো অংশে ৫ শতাংশেরও কম খোলা জায়গা রয়েছে, নতুন অংশে রয়েছে ১২ শতাংশ। মোট খোলা জায়গার পরিমাণ ৫ হাজার একরের বেশি হবে না।
এখানে দুটি বিষয়, একটি হলো খোলা জায়গা বাড়ানো বা রাখা, অন্যটি হলো খোলা জায়গার সদ্ব্যবহার ও সঠিক ব্যবস্থাপনা। একটি সুস্থ শহর গড়ে তুলতে হলে একটি আদর্শ স্বাস্থ্যবান শহরের প্রায় অর্ধেকটায় থাকবে মানুষ, বাকি অর্ধেকে থাকবে রাস্তাঘাট, উদ্যান, জলাশয়, খেলার মাঠ ইত্যাদি। বর্তমান বাস্তবতায় ঢাকা শহরে যা অসম্ভব। তাই নজর দিতে হবে যতটুকু খোলা জায়গা আছে সেটুকুও যেন সংকুচিত না হয় এবং সেসব জায়গা যেন প্রকৃত পাবলিক স্পেস হয়ে ওঠে, যেখানে থাকবে সবার সহজ প্রবেশাধিকার, নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য। বিশেষজ্ঞজনেরা ঢাকা শহরের পাবলিক স্পেস নিশ্চিত করতে চারটি মুখ্য পরামর্শ দিয়েছেন, এগুলো হলো, বিদ্যমান উন্মুক্ত স্থান পুনরুদ্ধার, উদ্যানগুলোর উন্নয়ন, রাস্তাগুলোকে নাগরিক স্থান হিসেবে তৈরি করা এবং জলাশয়গুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা। নগরবিদেরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন কি?
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও পরিবেশবিষয়ক লেখক

ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তায় নামলে যদি সেগুলো ভেঙে পড়ে! ভেঙে না পড়লেও যদি একটা ছাদের রেলিং ভেঙে মাথায় পড়ে! রাস্তায় থাকা তো সেই ঝুঁকিরই ব্যাপার। মুহূর্তের মধ্যে চিন্তা করলাম, আশপাশে ফাঁকা বড় মাঠ কোথায়? কাছাকাছি তার একটিও নেই। তার চেয়ে ঘরে কোনো মজবুত বিমের নিচে থাকাটাই নিরাপদ ভেবে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম একটি কলাম ধরে। কাঁপাকাঁপি করে ফ্রিজ সরল, আলমারি নড়ল। আর একটু জোরে হলে রক্ষে ছিল না। ঢাকা শহর থেকে লাশ উদ্ধারের মানুষ পাওয়া যেত না। এই হলো আমাদের প্রিয় ঢাকা শহর।
একটু খালি জায়গাও আমরা আমাদের রক্ষার জন্য ছেড়ে দিইনি। নিজেদের জন্য যখন ছাড়িনি, তখন গাছপালার জন্য কেন আর ছাড়ব? মহল্লায় মহল্লায় কোনো বড় মাঠ নেই। যে রাস্তা দিয়েই হেঁটে যাই, সে রাস্তাতেই কেবল দালানকোঠার জঞ্জাল, পাকা রাস্তা আর ফুটপাত। যেসব রাস্তার ধারেও যে গাছপালা আছে, সেগুলোরও গোড়া পর্যন্ত পাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ যেন একটি গাছকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলে তার গলা টিপে হত্যার সব আয়োজন আমরা সেরে রেখেছি। গাছটা যে আকাশের দিকে বাড়বে তারও জো নেই। রাস্তার ধারে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার গাছপালার সে সাধকেও খুন করেছে। বৃষ্টি হলে সে বৃষ্টির পানিতে যে মাটি ভিজবে, চারদিকে কংক্রিটে চাপা পড়া মাটির সে সুযোগও নেই। গাছগুলো তো দিনের পর দিন পানির পিপাসায় ধুঁকছে। রাস্তায় বা সরকারি জায়গাগুলোয় লাগানো গাছগুলোতে কেউ পানি দেয় না, খাবার দেয় না। মানুষ গাছকে না দেখলেও গাছ তো মানুষকে না দেখে পারে না। তাই সে তার সব শক্তি দিয়ে পৃথিবীকে সবুজ ও বাসযোগ্য রাখতে সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছে। অথচ সেই উপকারী বন্ধুদেরই আমরা জায়গা না দিয়ে জায়গা করে দিচ্ছি দালানকোঠাদের। দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে ঢাকাসহ সব শহরের সবুজ এলাকা। কেবল কংক্রিট আর কঠিন মমতাহীনতার গল্পই যেন রোজ আমরা লিখে যাচ্ছি। অথচ একটি শহরকে ভালো রাখতে হলে, শহরের মানুষকে সুস্থ রাখতে হলে প্রতিটি শহরেই পরিমিত পরিমাণে খোলা জায়গা থাকা দরকার।
শহরে মানুষ বাড়লে সে অনুপাতে তাদের জন্য খোলা জায়গার পরিমাণও বাড়া উচিত। কিন্তু হচ্ছে ঠিক তার উল্টোটা। শহরে মানুষ যত বাড়ছে, খালি বা খোলা জায়গা তত কমছে, জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে, খাল সরু হতে হতে একসময় মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে থাকছে না। অথচ প্রতিটি শহর ও শহরের মানুষকে ভালো রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ ও উন্মুক্ত পাবলিক স্পেস থাকা দরকার। এসব খোলা জায়গা নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া এগুলো নগরবাসীকে সামাজিক সংহতি গড়ে তুলতেও সাহায্য করে। এমনকি এরূপ খোলা জায়গা ও সবুজ অঞ্চল থাকলে তা নগরের বায়ুদূষণ কমায় ও মানুষকে নানা রকম আর্থিক সুবিধা দেয়। কেননা, মানুষ সুস্থ থাকলে স্বভাবতই সে চিকিৎসকের কাছে যাবে না। ফলে নগরবাসী প্রতিবছর যে বিপুল পরিমাণ টাকা চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করছে তা সাশ্রয় হবে, যা তাদের জীবনমান বাড়াতে সাহায্য করবে।
বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখন বাস করে শহরে। এই সংখ্যা ২০৩০ সালে হবে ৬০ শতাংশ ও ২০৫০ সালে হবে ৭০ শতাংশ। শহর এলাকার অবস্থা ও মান তাই বিশ্বের অনেক মানুষের সুস্থতার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। স্বাস্থ্য সচেতন নগর গড়তে না পারলে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই অসুস্থ থাকবে। শহর কেবল শুধু মানুষের থাকার স্থানই না, বরং সেটি উদ্ভাবন, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি চর্চারও কেন্দ্রস্থল। তাই শহরের মানুষেরা ভালো না থাকলে এসব বিষয়ও বিকশিত হবে না, সভ্যতার বিকাশও রুদ্ধ হবে। তাই প্রতিটি শহরেই প্রয়োজনীয় পরিমাণে পাবলিক স্পেস থাকতে হবে।
পাবলিক স্পেস হলো যেখানে জনসাধারণের প্রবেশ উন্মুক্ত এবং সে জায়গাকে উপভোগ করার জন্য জনগণকে কোনো মূল্য দিতে হয় না। এসব স্থান হলো জনসাধারণের বিভিন্ন কার্যকলাপ ও বিনোদনের একটি কেন্দ্র। ঢাকা শহরের প্রধান পাবলিক স্পেসগুলো হলো রমনা, সোহরাওয়ার্দী, ওসমানী, চন্দ্রিমা, বলধা ও উদ্ভিদ উদ্যান এবং ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিল ও গুলশান লেক। দুটি সিটি করপোরেশনের আওতায় ৩০৬ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা শহরে বাস করে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ। তার মানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ঢাকা শহরে বাস করে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ। অথচ এ শহরে খেলার মাঠ আছে মাত্র ৩৩২ একরে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ তথা খোলা জায়গা নেই। শহরে একজন মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচতে হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে জনপ্রতি ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গার প্রয়োজন। ঢাকা শহরে যা আছে ১ বর্গমিটারেরও কম। ঢাকা শহরে প্রতি বর্গফুটের হিসাবে যেখানে জমি বেচাকেনা হয় সেখানে বর্গকিলোমিটারের হিসাবে ফাঁকা জায়গা বা পাবলিক স্পেস থাকা দুরাশা।
জাতিসংঘের ইউএন-হ্যাবিটেটের তথ্য অনুযায়ী একটি শহরে মোট আয়তনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ জায়গা পাবলিক স্পেস হিসেবে থাকা উচিত, যার মধ্যে ৩০-৩৫ শতাংশ থাকবে রাস্তাঘাট ও ফুটপাত এবং ১৫-২০ শতাংশ জায়গা থাকবে পাবলিক স্পেস। প্রাচীনকালে ঢাকা শহরের পাবলিক স্পেস ছিল অবারিত, ধানখেতও ছিল। মোগল আমলের আগে পুরান ঢাকা একটি সহজাত পদ্ধতিতে বিকশিত হয়েছিল। ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকাবাসী খোলামেলা জায়গায় সামাজিকীকরণের অভ্যাস পেয়েছিল। এর ফলে একটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক স্থানবিন্যাস গড়ে উঠেছিল। গলি (রাস্তা), মোড় (নোড), মহল্লা (পাড়া) ও চক (বাজার)। রাস্তার ধারে মহল্লাগুলো রৈখিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল। রাস্তাগুলো ছিল মহল্লার কেন্দ্রবিন্দু। এগুলো ছিল আঁকাবাঁকা, অনিয়ত এক জটিল নেটওয়ার্ক, যেগুলো গিয়ে মিশেছিল চকে। ঢাকা একসময় প্রশান্তির শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। সে শহরে ছিল মনোরম উদ্যান, পরিষ্কার রাস্তা ও সবুজের সমারোহ। এখন তা হয়েছে ইট ও কংক্রিটের জঙ্গল। শহরের পুরোনো অংশে ৫ শতাংশেরও কম খোলা জায়গা রয়েছে, নতুন অংশে রয়েছে ১২ শতাংশ। মোট খোলা জায়গার পরিমাণ ৫ হাজার একরের বেশি হবে না।
এখানে দুটি বিষয়, একটি হলো খোলা জায়গা বাড়ানো বা রাখা, অন্যটি হলো খোলা জায়গার সদ্ব্যবহার ও সঠিক ব্যবস্থাপনা। একটি সুস্থ শহর গড়ে তুলতে হলে একটি আদর্শ স্বাস্থ্যবান শহরের প্রায় অর্ধেকটায় থাকবে মানুষ, বাকি অর্ধেকে থাকবে রাস্তাঘাট, উদ্যান, জলাশয়, খেলার মাঠ ইত্যাদি। বর্তমান বাস্তবতায় ঢাকা শহরে যা অসম্ভব। তাই নজর দিতে হবে যতটুকু খোলা জায়গা আছে সেটুকুও যেন সংকুচিত না হয় এবং সেসব জায়গা যেন প্রকৃত পাবলিক স্পেস হয়ে ওঠে, যেখানে থাকবে সবার সহজ প্রবেশাধিকার, নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য। বিশেষজ্ঞজনেরা ঢাকা শহরের পাবলিক স্পেস নিশ্চিত করতে চারটি মুখ্য পরামর্শ দিয়েছেন, এগুলো হলো, বিদ্যমান উন্মুক্ত স্থান পুনরুদ্ধার, উদ্যানগুলোর উন্নয়ন, রাস্তাগুলোকে নাগরিক স্থান হিসেবে তৈরি করা এবং জলাশয়গুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা। নগরবিদেরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন কি?
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও পরিবেশবিষয়ক লেখক

এক নতুন সামরিক–রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট ভবনে যেদিন সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস হলো। সিনেটে সামান্য হই হই চই এবং দুজন বিচারকের পদত্যাগ ছাড়া অনেকটা নিরবেই পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোয় ঐতিহাসিক রূপান্তর ঘটে গেল।
২২ দিন আগে
কাজী মারুফুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও নীতিবিষয়ক কেন্দ্রের সিনিয়র ফেলো।
৮ ঘণ্টা আগে
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। ১৪ বছর বয়সী সেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ধর্ষণের আট দিন পরে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে এলাকাবাসী আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন।
৮ ঘণ্টা আগে
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। ১৪ বছর বয়সী সেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ধর্ষণের আট দিন পরে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে এলাকাবাসী আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। মারের ঝড়টা ছিল যথেষ্ট বেগবান, সে কারণে অভিযুক্ত শিক্ষককে পুলিসি পাহারায় মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
জিনের ভয় দেখিয়ে মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের ধর্ষণ করার অভিযোগও উঠেছে কখনো কখনো। বেশি দূরে যেতে হবে না, ২০২৫ সালের ৬ আগস্ট টাঙ্গাইলে জিনের ভয় দেখিয়ে ও বাথরুমে গোপন ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল ওই মাদ্রাসার দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এরপর তাঁদের কোনো শাস্তি হয়েছিল কি না, তা জানা যায়নি।
রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি মসজিদের ইমাম, পাশাপাশি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার যিনি শিক্ষক, তিনিও ১৮ বছর ধরে স্থানীয় অনেকের অসুস্থতায় ঝাড়ফুঁক ও তাবিজ-কবজ দিতেন। বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে ঝাড়ফুঁক ও জিনের ভয় দেখিয়ে সুন্দরী নারীদের জোরপূর্বক ধর্ষণ করে আসছিলেন তিনি। বাদ যায়নি মাদ্রাসা ও মসজিদে আসা শিশুরাও। ২০১৯ সালের ২২ জুলাই এই খবর বেরিয়েছিল পত্রিকায়। মতলববাজ এই ইমাম ধরাও পড়েছিলেন পুলিশের হাতে।
মাদ্রাসাশিক্ষকদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার শিশুর তালিকা করা হলে তা হয়ে উঠবে দীর্ঘ। অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে শিশুদের ধর্ষণ করার এই প্রবণতা শুধু মাদ্রাসাশিক্ষকদের মধ্যেই নয়, ক্ষমতা আছে, এমন যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই দেখা যায়। বড়দের যৌনলিপ্সার শিকার হয় শিশুরা। এর প্রতিকার কী করে হবে, তা খুঁজে বের করা সহজ নয়। তবে, এর বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। নিজ এলাকায় যে সব মাদ্রাসা রয়েছে, সে মাদ্রাসাগুলোয় শিশুদের সঙ্গে কোনো অসামাজিক কর্মকাণ্ড ঘটছে কি না, সেদিকে থাকতে হবে তীক্ষ্ণ নজর। অসামাজিক কর্মকাণ্ডে যাঁরা জড়িত হন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আর বিচারালয়ে তাঁরা যেন শাস্তি পান, সেটাও নিশ্চিত করা দরকার।
যৌনলিপ্সা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে সহজে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হওয়া। ভালো কিছুর সঙ্গে সেখানে মন্দ কিছুরও সদ্ভাব গড়ে তোলা যায়। গোপনে এই দুনিয়ায় ঢুকে বিপথে যাওয়ার অনেক তরিকা খুঁজে পাওয়া যায়। আরেকটি কারণ হলো, শিশুদের অসহায়ত্ব। ক্ষমতাবান শিক্ষক যদি কিছু চাপিয়ে দিতে চান, তাহলে তা থেকে নিষ্কৃতির উপায় খুঁজে বের করা কঠিন।
যে শিক্ষার্থীটি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে একজন মাদ্রাসাশিক্ষকের লিপ্সার কাছে পরাজিত হলো, তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই। একজন অসৎ, যৌন-উন্মাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হয়তো তাঁদের কিছুটা শান্তি দেবে, কিন্তু তাঁরা কি আর তাঁদের সন্তানকে ফিরে পাবেন? ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর বাড়িতে ফিরে শিক্ষার্থীটি এই নৃশংস পাশবিকতার কথা জানিয়েছিল মা-বাবাকে। সেই ভারও সহ্য করতে হচ্ছে তাঁদের—এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কী হতে পারে?

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। ১৪ বছর বয়সী সেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ধর্ষণের আট দিন পরে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে এলাকাবাসী আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। মারের ঝড়টা ছিল যথেষ্ট বেগবান, সে কারণে অভিযুক্ত শিক্ষককে পুলিসি পাহারায় মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
জিনের ভয় দেখিয়ে মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের ধর্ষণ করার অভিযোগও উঠেছে কখনো কখনো। বেশি দূরে যেতে হবে না, ২০২৫ সালের ৬ আগস্ট টাঙ্গাইলে জিনের ভয় দেখিয়ে ও বাথরুমে গোপন ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল ওই মাদ্রাসার দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এরপর তাঁদের কোনো শাস্তি হয়েছিল কি না, তা জানা যায়নি।
রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি মসজিদের ইমাম, পাশাপাশি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার যিনি শিক্ষক, তিনিও ১৮ বছর ধরে স্থানীয় অনেকের অসুস্থতায় ঝাড়ফুঁক ও তাবিজ-কবজ দিতেন। বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে ঝাড়ফুঁক ও জিনের ভয় দেখিয়ে সুন্দরী নারীদের জোরপূর্বক ধর্ষণ করে আসছিলেন তিনি। বাদ যায়নি মাদ্রাসা ও মসজিদে আসা শিশুরাও। ২০১৯ সালের ২২ জুলাই এই খবর বেরিয়েছিল পত্রিকায়। মতলববাজ এই ইমাম ধরাও পড়েছিলেন পুলিশের হাতে।
মাদ্রাসাশিক্ষকদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার শিশুর তালিকা করা হলে তা হয়ে উঠবে দীর্ঘ। অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে শিশুদের ধর্ষণ করার এই প্রবণতা শুধু মাদ্রাসাশিক্ষকদের মধ্যেই নয়, ক্ষমতা আছে, এমন যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই দেখা যায়। বড়দের যৌনলিপ্সার শিকার হয় শিশুরা। এর প্রতিকার কী করে হবে, তা খুঁজে বের করা সহজ নয়। তবে, এর বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। নিজ এলাকায় যে সব মাদ্রাসা রয়েছে, সে মাদ্রাসাগুলোয় শিশুদের সঙ্গে কোনো অসামাজিক কর্মকাণ্ড ঘটছে কি না, সেদিকে থাকতে হবে তীক্ষ্ণ নজর। অসামাজিক কর্মকাণ্ডে যাঁরা জড়িত হন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আর বিচারালয়ে তাঁরা যেন শাস্তি পান, সেটাও নিশ্চিত করা দরকার।
যৌনলিপ্সা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে সহজে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হওয়া। ভালো কিছুর সঙ্গে সেখানে মন্দ কিছুরও সদ্ভাব গড়ে তোলা যায়। গোপনে এই দুনিয়ায় ঢুকে বিপথে যাওয়ার অনেক তরিকা খুঁজে পাওয়া যায়। আরেকটি কারণ হলো, শিশুদের অসহায়ত্ব। ক্ষমতাবান শিক্ষক যদি কিছু চাপিয়ে দিতে চান, তাহলে তা থেকে নিষ্কৃতির উপায় খুঁজে বের করা কঠিন।
যে শিক্ষার্থীটি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে একজন মাদ্রাসাশিক্ষকের লিপ্সার কাছে পরাজিত হলো, তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই। একজন অসৎ, যৌন-উন্মাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হয়তো তাঁদের কিছুটা শান্তি দেবে, কিন্তু তাঁরা কি আর তাঁদের সন্তানকে ফিরে পাবেন? ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর বাড়িতে ফিরে শিক্ষার্থীটি এই নৃশংস পাশবিকতার কথা জানিয়েছিল মা-বাবাকে। সেই ভারও সহ্য করতে হচ্ছে তাঁদের—এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কী হতে পারে?

এক নতুন সামরিক–রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট ভবনে যেদিন সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস হলো। সিনেটে সামান্য হই হই চই এবং দুজন বিচারকের পদত্যাগ ছাড়া অনেকটা নিরবেই পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোয় ঐতিহাসিক রূপান্তর ঘটে গেল।
২২ দিন আগে
কাজী মারুফুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও নীতিবিষয়ক কেন্দ্রের সিনিয়র ফেলো।
৮ ঘণ্টা আগে
ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে।
৮ ঘণ্টা আগে
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মূল চালিকা শক্তি ছিল একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। স্বাধীনতার পর গত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করলেও গণতন্ত্র উত্তরণের পথ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য দায়ী মূলত ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিরোধী দল এবং রাজনীতিকেরা।
গণতন্ত্রের প্রাণ হলো অবাধ, গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বিগত সরকারের সময়ে নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল। বিরোধী দলের অনুপস্থিতি, বলপ্রয়োগ এবং ভোটের দিন সাধারণ মানুষের ভোট দিতে না পারার কারণে জনগণের ভোটের প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়েছিল। পাশাপাশি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে দলীয় বৃত্তের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। সংসদ এক দলের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ায় তা কার্যকর বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারেনি।
এর বাইরে বিচার বিভাগ সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন হলেও, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়েও প্রশ্ন আছে। একই সঙ্গে সরকারি প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর একটি অংশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে, যা তাদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
গত সরকারের বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগের পরেও কি আমরা বলতে পারি, গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার বিগত সরকারের সময়ের সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে? উত্তর হবে ‘না’। কারণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথের পথিক বলে অভিযোগ আছে। বিগত সরকারের পতনের পরপরই সচিবালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ থেকে সব ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সেসব জায়গায় এখনকার প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাদের দলীয় আনুগত্যের লোকজন বসিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তাহলে এ দেশে কীভাবে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব হবে?
বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এই সংকট থেকে মুক্ত করতে একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন, যার কেন্দ্রে থাকবে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী করা, যাতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হয় এবং জনগণ স্থানীয় পর্যায়ে অংশীদারত্বের ভূমিকা পালন করতে পারে সরাসরি।
তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সংকট যেমন রাতারাতি সৃষ্টি হয়নি, তেমনি এর সমাধানও দ্রুত সম্ভব নয়। এই উত্তরণের পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অনুধাবন করতে হবে, গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব। কেবল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক এবং শক্তিশালী কাঠামোগত ব্যবস্থার মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক উত্তরণ অর্জন সম্ভব হতে পারে। এই সংকটে জনগণই শেষ ভরসা। বৃহত্তর জনগণের অংশগ্রহণ, সচেতনতা এবং জবাবদিহির দাবিই পারে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। তবে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ছাড়া সেটা সম্ভব না।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মূল চালিকা শক্তি ছিল একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। স্বাধীনতার পর গত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করলেও গণতন্ত্র উত্তরণের পথ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য দায়ী মূলত ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিরোধী দল এবং রাজনীতিকেরা।
গণতন্ত্রের প্রাণ হলো অবাধ, গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বিগত সরকারের সময়ে নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল। বিরোধী দলের অনুপস্থিতি, বলপ্রয়োগ এবং ভোটের দিন সাধারণ মানুষের ভোট দিতে না পারার কারণে জনগণের ভোটের প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়েছিল। পাশাপাশি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে দলীয় বৃত্তের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। সংসদ এক দলের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ায় তা কার্যকর বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারেনি।
এর বাইরে বিচার বিভাগ সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন হলেও, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়েও প্রশ্ন আছে। একই সঙ্গে সরকারি প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর একটি অংশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে, যা তাদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
গত সরকারের বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগের পরেও কি আমরা বলতে পারি, গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার বিগত সরকারের সময়ের সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে? উত্তর হবে ‘না’। কারণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথের পথিক বলে অভিযোগ আছে। বিগত সরকারের পতনের পরপরই সচিবালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ থেকে সব ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সেসব জায়গায় এখনকার প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাদের দলীয় আনুগত্যের লোকজন বসিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তাহলে এ দেশে কীভাবে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব হবে?
বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এই সংকট থেকে মুক্ত করতে একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন, যার কেন্দ্রে থাকবে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী করা, যাতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হয় এবং জনগণ স্থানীয় পর্যায়ে অংশীদারত্বের ভূমিকা পালন করতে পারে সরাসরি।
তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সংকট যেমন রাতারাতি সৃষ্টি হয়নি, তেমনি এর সমাধানও দ্রুত সম্ভব নয়। এই উত্তরণের পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অনুধাবন করতে হবে, গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব। কেবল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক এবং শক্তিশালী কাঠামোগত ব্যবস্থার মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক উত্তরণ অর্জন সম্ভব হতে পারে। এই সংকটে জনগণই শেষ ভরসা। বৃহত্তর জনগণের অংশগ্রহণ, সচেতনতা এবং জবাবদিহির দাবিই পারে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। তবে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ছাড়া সেটা সম্ভব না।

এক নতুন সামরিক–রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট ভবনে যেদিন সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস হলো। সিনেটে সামান্য হই হই চই এবং দুজন বিচারকের পদত্যাগ ছাড়া অনেকটা নিরবেই পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোয় ঐতিহাসিক রূপান্তর ঘটে গেল।
২২ দিন আগে
কাজী মারুফুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও নীতিবিষয়ক কেন্দ্রের সিনিয়র ফেলো।
৮ ঘণ্টা আগে
ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে।
৮ ঘণ্টা আগে
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। ১৪ বছর বয়সী সেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ধর্ষণের আট দিন পরে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে এলাকাবাসী আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন।
৮ ঘণ্টা আগে