স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও পাহাড়ি নারীরা আজও বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। আদমশুমারিতে জানা যায় না পাহাড়িদের প্রকৃত সংখ্যা। পাহাড়ি নারীদের উৎপাদিত পণ্য পায় না ন্যায্য দাম। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত অভিন্ন পারিবারিক আইন বিষয়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায়’ এ সব কথা বলেন বক্তারা।
আদিবাসী নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁদের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের দাবি জানান তাঁরা। ‘নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ কর সম অধিকার নিশ্চিত কর’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘সংবিধানে সকলের জন্য সমতা ও মানবিক মর্যাদার কথা বলা হলেও সকল নাগরিকের মানবিক মর্যাদা, সমতা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা এখনও পিছিয়ে আছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ এখনও নানা বৈষম্যের শিকার। বৈষম্যের মূল কারণ নারীর প্রতি সহিংসতা।’ এ সময় নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে অভিন্ন পারিবারিক আইনের গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।
সভায় লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাড. মাকছুদা আক্তার বাংলাদেশের প্রচলিত পারিবারিক আইন সম্পর্কে আলোচনা করেন। পাশাপাশি তিনি বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব, দত্তক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রস্তাবিত অভিন্ন পারিবারিক আইন বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
সভায় বক্তারা পাহাড়িদের মানবাধিকার ও সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে, আদিবাসীদের ভূমির প্রকৃত মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে, আদিবাসী নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য তাঁদের যোগ্যতার মূল্যায়ন করতে হবে, মারমাসহ সকল অধিবাসীদের সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে নিবন্ধন প্রক্রিয়া আইনের মাধ্যমে বলবৎ করতে হবে, আদমশুমারিতে পাহাড়িদের প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত করতে হবে, ভূমি ও অর্থনীতিতে সমঅধিকার নিশ্চিত করতে আদিবাসীদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যে ন্যায্যদাম নিশ্চিত করতে হবে, আদিবাসীদের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করতে হবে, আদিবাসী ও বাঙালিদের মধ্যে চলা সংঘর্ষ নিরসন করতে হবে, সকলের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, প্রস্তাবিত অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নে আমরা যে প্রক্রিয়ায় মধ্যে আছি তা আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে। সকল নাগরিকের অধিকার বাস্তবায়নে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে, আদিবাসী নিজস্ব প্রথার সঙ্গে যাতে সাংঘর্ষিক না হয় সেটিও বিবেচনায় রেখে তাঁদের মূলধারার নারী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব চঞ্চনা চাকমা, সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা, বাংলাদেশ যুব ফোরামের মনিরা ত্রিপুরা, কাপেং ফাউন্ডেশনের সুজয়া ঘাগ্রা ও মহিলা পরিষদের জুনিয়র আইনজীবী সিনো মারমাসহ প্রমুখ।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে