প্রায় বিনা খরচে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা এবং গবেষণা সরবরাহ করায় উচ্চশিক্ষার জন্য অনেকেই পাড়ি জমাচ্ছেন জার্মানিতে। বাংলাদেশের মেয়ে আফসানা তাবাসসুম জার্মানির গটিঙ্গেন ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশ লিটারেচার অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ নিয়ে পড়াশোনা করছেন। এ দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বিস্তারিত জানিয়েছেন তিনি।
বৃত্তি
প্রতিবছর এখানে লাখো শিক্ষার্থী পড়তে এলেও, বৃত্তি পান মাত্র ২৫ শতাংশ। জার্মানির একটি প্রথম সারির বৃত্তি হলো ডিএএডি। এর আওতায় ব্যাচেলর কোসের্র শিক্ষার্থীরা মাসে ৬৫০ ইউরো, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা ৭৫০ ইউরো এবং পিএইচডি গবেষকেরা এক হাজার ইউরো পেয়ে থাকেন।
এ ছাড়া স্টিপেন্ডিয়াটেন ডেয়ার স্টুডিয়েনস্টিফটুং ডয়েচেস ফল্ক, ডয়েচলান্ড স্টিপেন্ডিয়ুম, ডিএএডি কনরাড আডেনাওয়ার ফাউন্ডেশন, হাইনরিশ ব্যোল ফাউন্ডেশন, ফ্রিডরিশ এবার্ট ফাউন্ডেশন, বোরিংগার ইংগেলহাইম ফাউন্ডেশন বৃত্তিসহ অন্য অনেক ফাউন্ডেশন থেকে বৃত্তি পেয়ে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তবে বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের কাজ করা নিষিদ্ধ, কারণ তাঁদের খরচ জার্মান সরকার বা অন্য কোনো সংগঠন বহন করে থাকে।
টিউশন ফি
জার্মানির প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর প্রোগ্রামের জন্য সেমিস্টার প্রতি টিউশন ফি ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা। আর মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য মোট খরচ হয় ১৮ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা।
তবে জার্মানিতে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো টিউশন ফি লাগে না। তাই থাকা-খাওয়ার খরচই মূলত নিয়ে যেতে হয়। প্রতি সেমিস্টারে একটি কন্ট্রিবিউশন ফি আছে। এই ফি দিয়ে লাইব্রেরি, বাসভাড়া ইত্যাদি মেটানো হয়।
সুযোগ-সুবিধা
জার্মানির পরিবেশ বেশ নিরাপদ, ছিমছাম, গাছপালায় ঘেরা। জার্মানিতে সবার ব্যবহারই বেশ আন্তরিক, তাই আপনার কোনো অসুবিধা হবে না। কেউ যদি স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে পড়তে যান, তবে তাঁর খণ্ডকালীন চাকরির সুবিধা সীমাবদ্ধ। ভিসাতেই উল্লেখ থাকে যে বিদেশি শিক্ষার্থীরা বছরে ৯০ দিনের বেশি কাজের অনুমতি পাবেন না। অর্থাৎ জার্মানিতে একজন ছাত্রের সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা এবং মাসে ৮০ ঘণ্টা কাজ করার বৈধতা রয়েছে; যা বছরে ১২০ দিন ফুলটাইম অথবা বছরে ২৮০ দিন হাফটাইম কাজের সুযোগ রয়েছে। তবে রেস্তোরাঁয় কাজ করলে সপ্তাহে ১০-১৬ ঘণ্টা কাজ করা যায়। যদিও এর জন্য জার্মান ভাষায় দক্ষ হতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি লাগবে। সেমিস্টার ব্রেক বা গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ফুলটাইম কাজ করা যায়।
কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্মে থাকতে চান, তাহলে এখানে আসার অন্তত তিন মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তা জানাতে হবে। তা না হলে আপনার জন্য কোনো রুম ফাঁকা থাকবে না। এখানে থাকা-খাওয়ার খরচ মাসে সাধারণত ৪০০-৭০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে।
পড়াশোনা শেষে আপনি দেড় বছরের জন্য চাকরি খোঁজার ভিসা পাবেন। জার্মানিতে একটানা বৈধভাবে পাঁচ বছর থাকার পর স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং আট বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এ সুযোগটি নেওয়ার জন্য আপনাকে আপনার পড়াশোনাসংক্রান্ত একটি ফুলটাইম চাকরি করতে হবে।
ভর্তির প্রক্রিয়া
জার্মানিতে ভর্তির জন্য দুই ধরনের পদ্ধতি রয়েছে: ওপেন অ্যাডমিশন, অন্যটি অ্যাপটিউড টেস্ট। মোট দুটি সেমিস্টারে আবেদন করা যায়: সামার ও উইন্টার সেমিস্টার। এখানে ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডি থেকে শুরু করে ডিপ্লোমা সব বিষয়েই পড়তে পারবেন। আপনি যদি গবেষণায় আগ্রহী হন, তাহলে জার্মানি আপনার জন্য সেরা জায়গা।
পছন্দের কোর্স খুঁজে নিতে এই ওয়েবসাইটে যান:
এখানে গিয়ে আপনার পছন্দ অনুযায়ী কোর্সের বিস্তারিত তথ্য বের করা খুবই সহজ। ডাডের তথ্য অনুযায়ী, এখানে প্রায় ২০৫৮টি কোর্স রয়েছে। এর মধ্যে ইংরেজিতে রয়েছে ১৫০৭টি কোর্স, ব্যাচেলরে ১৪২টি এবং মাস্টার্সে ১০৮৩টি কোর্স রয়েছে।
জার্মানির উল্লেখযোগ্য
লুদভিক ম্যাক্সিমিলিয়ান ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখ, ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব বার্লিন, হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি, উলম ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাড হনেফ হলো জার্মানির উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়। জার্মানিতে ইংরেজি ও জার্মান উভয় ভাষাতেই পড়তে পারবেন। ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য আপনাকে আইইএলটিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাচেলরের জন্য ৫.৫-৬.০০ স্কোর থাকা প্রয়োজন। মাস্টার্সের ক্ষেত্রে ৬.০০-৬.৫ অথবা কোর্স এবং বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভিন্ন হতে পারে। জার্মান ভাষার ক্ষেত্রে বি-১ থেকে বি-২ পর্যন্ত স্কোর চেয়ে থাকে।
অনুলিখন: মুসাররাত আবির
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে