সরকার ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর পেরিয়ে গেছে পাঁচ দিন। কিন্তু এখনো বাজারে বেঁধে দেওয়া দাম মানা হচ্ছে না। নির্ধারিত দাম কার্যকরের ক্ষেত্রে তেমন কোনো উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে না। উল্টো সরকার দাম বেঁধে দেওয়ার পরে ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা বেড়েছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।
আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, রামপুরা, বাড্ডা ও মোহাম্মদপুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফার্মের বাদামি ডিম বেশিরভাগ দোকানেই প্রতি ডজন ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ২৩ টাকা বেশি। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগি ১৭৫-১৯০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। সরকার এই মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা। আর সোনালি মুরগি ২৯০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। অথচ খুচরা পর্যায়ে এই মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার বাজার যাচাই না করেই দাম নির্ধারণ করেছে। যার ফলে নির্ধারিত দামের সঙ্গে বাজারে মিল থাকছে না।
মুরগি ব্যবসায়ী আজমত আলী বলেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বসে দাম ঠিক করলেতো হবে না। সাধারণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, দাম নির্ধারণের পর বাজারে ডিম ও মুরগির দাম আরও বেড়েছে। রামপুরায় বাজার করতে আসা তাসনিম হাসান বলেন, ‘গত সপ্তাহে ১৫৫ টাকায় ডিম কিনেছি। এরপর দাম নির্ধারণ করল। এখনতো দাম কমার কথা। উল্টো বেড়ে ১৬৫ হলো।’
ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। মাছ-মাংস পাত থেকে উঠে গেছে আগেই। ডিমও নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তাঁরা।
আঞ্জু আরা বেগম নামের এক গৃহকর্মী বলেন, ‘আমরা বড়রা ভাত, ডাইলের পানি খাইয়া দিন চালাইতে পারি। কিন্তু বাইচ্চাগো জইন্য তো একটু ভালো খাওন লাগে। ঘরে দুইডা বাইচ্চা। ওগো মাছ-মাংস দিবার পারি না। ডিম দেওনেরও ক্ষমতা এহন আর থাকতেছে না।’
দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ডিম আমদানির অনুমতিও দিয়েছে। ভারত থেকে ৭ টাকা দরে ডিম আনা হলেও বাজারে তা মিলছে না। আমদানির ডিম বাজারে দেখা যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার যাচাই না করে দাম নির্ধারণ এবং বাজার মনিটরিং না থাকায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে।
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যখন দাম নির্ধারণ করা হলো, তখন বাজারে এর চেয়ে কম দামে পণ্য মিলছিল। করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বসে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর ব্যবসায়ীরা দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পুরো বিষয়টিই লোক দেখানো’। একটা দাম বেঁধে দিয়েছে কিন্তু তা কার্যকর করতে কোনো উদ্যোগ নেই। কোথাও বাজার মনিটরিং নেই। যে কারণে বিগত সরকারের সময়েও দাম বেড়ে গেলে কিছু পণ্যের যৌক্তিক দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, কিন্তু বাজারে তা বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি।’
বাজারে ডিম, মুরগির মতো পেঁয়াজ আলুর দামও চড়া। এই দুটি পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। তবে বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই।
গত ৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানায়, পেঁয়াজ আমদানিতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর আলুর ক্ষেত্রেও আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার পাশাপাশি ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে বাজারে পূর্বের মতো উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে এ দুটি পণ্য। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকা দরে। আর প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে।
এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী খলিল মিয়া বলেন, বাজারে এখনো ভারতের পেঁয়াজ আসেনি। দেশি পেঁয়াজই বিক্রি হচ্ছে সব জায়গায়। মোকামে পেঁয়াজের দাম এখন বাড়তি। ভারতের পেঁয়াজ দেশে ঢুকলে দাম একটু কমবে।
সবজিও পূর্বের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এ জন্য ব্যবসায়ীরা বন্যাকে দায়ী করছেন। তাঁরা বলছেন, বন্যায় অনেক ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৷ যার ফলে সরবরাহ স্বাভাবিক নেই। শীতের সবজি বাজারে উঠতে শুরু করলে দাম কমবে বলে জানান তাঁরা।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিটি ডিমের দাম উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা শূন্য ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা; ব্রয়লার মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা এবং সোনালি মুরগির দাম উৎপাদক পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা, পাইকারিতে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে