একদিন শুনবেন আমিও নেই–অনেকটা আবেগতাড়িত হয়েই এই কথাটা বলেছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সহ-অধিনায়ক প্রতাপ শংকর হাজরা। প্রিয় বন্ধু বিমল করকে হারানোর এক দিন পর আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল এবং হকি দলের সাবেক এই কিংবদন্তি খেলোয়াড়।
মনটা বেশ ভারাক্রান্ত। এক এক করে সবাই চলে যাচ্ছেন মহাসিন্ধুর ওপারে। যাদের সঙ্গে বহুদিন খেলেছেন, যুদ্ধের দিনগুলোতে এক হয়ে দেশের জন্য লড়েছেন সেই চেনা মুখগুলোকে আর দেখবেন না—এটা ভেবেই যেন গলা ধরে আসছে, ‘মনে হয় আমরা দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। যদিও আমাদের মধ্যে কোনো একতা ছিল না। কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমও ছিল না। তবু এই যে এক এক করে চলে যাওয়া...মনে হচ্ছে আমরা দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি।’
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল–বাংলাদেশের মানুষের আবেগের নাম। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে তত দিন এই নামটি লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু এই দলের সৈনিকেরা একে একে অনেকটা নীরবেই হারিয়ে যাচ্ছেন। অমলেশ সেন, আইনুল হক, সাইদুর রহমান প্যাটেলরাও পাড়ি জমিয়েছেন অনন্তলোকে। ভারতে সামরিক প্রশিক্ষণ শিবির থেকে বিমানে উড়িয়ে এনে প্রথম ম্যাচটি খেলানো গোলরক্ষক খোন্দকার নূরন্নবীও আজ শুধুই ছবি। চলে গেলেও তাঁদের কর্মই তাঁদের বাঁচিয়ে রাখবে।
এখন যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই আবার খেলার জগতের বাইরে। বয়স ৭৫ বা ৮০ পেরোনো এই মানুষগুলো এখন গোধূলিতে বসে পুরোনো স্মৃতির পাতাগুলো উল্টিয়ে–পাল্টিয়ে দেখছেন। প্রতাপ শংকর হাজরার অবশ্য ফুটবলের প্রতি একটু অভিমান, কেন জানি একটু অনীহাও। ফুটবলের সোনালি দিনের সৈনিক হলেও তাঁর পছন্দের জায়গা হকি। যেখানে কয়েক যুগ কাটিয়েছেন। সেই গল্পটাই শোনালেন, ‘আমি অবসর নেওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি ফুটবলে যাব না, আমি হকিতে যাব। সেখানে আমি বহুদিন ছিলাম, প্রায় ৭৭ বছর হকিতে কাজ করেছি। আমি সেটা নিয়ে সন্তুষ্ট। একটুও আফসোস নেই। আর ফুটবল, এটা নিয়ে আমি চিন্তাও করতাম না। কারণ, আমার প্রিয় খেলাই হকি। এরপরও ফুটবল অনেক দিন খেলেছি। কোথায় সেই ১৯৬৬ আর কোথায় ১৯৭৫। একসঙ্গে হোক, প্রতিপক্ষ হিসেবে কিংবা দেশের জন্য হলেও অনেক দিন খেলেছি। তবে এসব নিয়ে এখন আর মন কাঁদে না।’
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিও খানিকটা নাড়া দিয়েছে জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক এই কোচকে। হকি নিয়ে এখন আর ভাবার সময় নেই তাঁর। তবে আক্ষেপটা এ জন্য, তাঁর প্রিয় অঙ্গনে কেন নেই প্রিয় মানুষগুলো, ‘এখন কয়টা হকি খেলোয়াড় আছে দেখেন তো। একটা সময় ছিল যখন ফেডারেশনে সবাই ছিল হকি খেলোয়াড়। তাহলে উন্নতিটা হবে কীভাবে।’
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে