নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর দিয়ে তথ্য যাচাইসহ বেশ কিছু অনুরোধ করেছিল ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। এনটিএমসির তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের (বর্তমানে বরখাস্ত) দেওয়া ওই চিঠি এখতিয়ারবহির্ভূত ছিল জানিয়ে সে ‘আবদার’ না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে এনটিএমসিকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বলেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব শফিউল আজিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটি করা হবে না জানিয়ে আমরা ওই চিঠির (এনটিএমসির) উত্তর দিয়েছি।’
সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ১১ জুলাই ইসিকে বেশ কিছু অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয় এনটিএমসি। এনটিএমসির তৎকালীন মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানের পক্ষে সিইসিকে চিঠিটি পাঠান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ বাকের। ওই চিঠিতে এনটিএমসি অনুরোধ করেছে, এনআইডি ডেটাবেইস থেকে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেসের (এপিআই) মাধ্যমে এনআইডি নম্বর ও জন্মতারিখ ইনপুট হিসেবে পাঠালে আউটপুট হিসেবে যেন নাগরিকের এনআইডি-সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্যের পাশাপাশি ভোটার আইডি নম্বরও দেওয়া হয়। এ ছাড়া শুধু এনআইডি নম্বরের অনুকূলে (জন্মতারিখ ব্যতীত) এনআইডি-সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া; দেশের প্রতিটি কারাগারের অভ্যন্তরে দ্রুত ও সঠিকভাবে কারাবন্দীদের শনাক্তকরণ, পরিচয় নিশ্চিতকরণ এবং ভেরিফায়েড ডেটাবেইস তৈরির লক্ষ্যে এনটিএমসিকে দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্নভাবে বায়োমেট্রিক ক্রস ম্যাচিং সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় আলাদা চিঠিতে।
এনটিএমসির কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে পুলিশ সদর দপ্তরসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, ডিজিএফআই, এনএসআই, র্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, এসএসএফ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো নাগরিকের এনআইডি-সম্পর্কিত তথ্য পায়। সংস্থাগুলো ইসির ডেটাবেইস থেকে এনআইডি-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা ও তদন্ত পরিচালনাকারী সংস্থাসমূহকে এনটিএমসির কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার থেকে এনআইডি-সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) অনুরোধ করেন তৎকালীন এনটিএমসির প্রধান।
এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে জিয়াউল আহসান সিইসিকে চিঠি দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ইসি সচিব। তিনি বলেন, একজন মেজর জেনারেল কীভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি লেখেন! তাই তাদের বলেছি, পত্র যোগাযোগের যে নিয়ম আছে, সেটি যেন অনুসরণ করা হয়।
এর আগে গত জুনের শেষ দিকে এনটিএমসিকে দেওয়া ইসির এক চিঠিতে বলা হয়, এনটিএমসি থেকে কয়েক মাসের আসা ফিঙ্গারপ্রিন্টের রিকোয়েস্টের সংখ্যা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ৪৫ হাজার অনুরোধ এসেছে। কিন্তু শুধু গত মার্চ মাসে এনটিএমসি থেকে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮৪টি অনুরোধ এসেছে। এ ছাড়া এনটিএমসি প্রতিদিন একসঙ্গে ১৫ থেকে ১৭ হাজার অনুরোধ করেছে। অত্যধিক এবং অস্বাভাবিক এই অনুরোধের কারণে বায়োমেট্রিক আইডেনটিফিকেশন সেবা দেওয়ার স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করছে এবং ইসি সচিবালয়সহ মাঠপর্যায়ের কার্যালয় ও ইসি থেকে এই সেবা নেওয়া অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে বায়োমেট্রিক আইডেনটিফিকেশন সেবা দেওয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য বা বায়োমেট্রিক আইডেনটিফিকেশন সেবা নিরবচ্ছিন্নভাবে সচল রাখতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের অনুরোধের সংখ্যা সীমাবদ্ধ (প্রতি সেকেন্ডে একটি অনুরোধ) হারে পাঠানোসহ একই সঙ্গে না পাঠিয়ে বিরতি দিয়ে অনুরোধ পাঠানোর জন্য এনটিএমসির কাছে অনুরোধ করা হয়।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে