বিড়ালের কামড় খেলে সেটাকে কম গুরুত্ব দেয়া ঠিক নয়। বিড়ালের দাঁত সরু ও সূক্ষ্ম হওয়ায় ত্বকের গভীরে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই বিড়ালের কামড় খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত৷
জার্মানির রস্টক বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের ডা. আলিস ভিশেলহাউস বলেন, ‘বিড়ালের কামড় বিপজ্জনক হতে পারে। কেননা, এগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয় না।’
বিড়ালের কামড় খেয়েছিলেন রস্টকের বাসিন্দা ডানিয়েল ফলব্রেশট। তিনি বলেন, ‘বিষয়টা অবাক করেছিল৷ হাসপাতালে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমার ধারণা ছিল না যে, বিড়ালের কামড় এত মারাত্মক হতে পারে৷’
নিজের পোষা বিড়ালেই কামড়েছিল ফলব্রেশটকে। হাতের দাগ এখনো তাকে সেই কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি বলেন, ‘সেদিন সকালে সমস্যা হয়েছিল৷ বিড়ালের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল৷ সে আমার হাতে ছিল৷ মনে হয় সে বাইরে যেতে চায়নি, তাই সে দ্রুত মাথা ঘুরিয়ে আমার তর্জনী ও মধ্যমা আঙুলের মধ্যে কামড়ে দেয়৷’
এরপর ফলব্রেশট হাত ধুয়ে সেখানে প্লাস্টার লাগিয়ে কাজে চলে যান৷ এটা নিয়ে খুব একটা ভাবেননি৷ কিন্তু সন্ধ্যার সময় তিনি খেয়াল করেন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে- তার হাত ভালো হচ্ছে না৷
ফলব্রেশট বলেন, ‘ব্যথাটা হাতের পেছনের দিকে সরে এসেছিল এবং সেটা অনেক বেড়ে গিয়েছিল।’
এছাড়া তার খারাপ লাগা শুরু হয়েছিল, জ্বরের মতো অনুভূতি হচ্ছিল৷ সে কারণে ফলব্রেশট সেই সন্ধ্যায় ক্লিনিকে যান৷ সময়মতোই গিয়েছিলেন৷ ডাক্তাররা তাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে গিয়ে কামড়ের জায়গাটি গুরুত্ব সহকারে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন৷
ডা. ভিশেলহাউস জানান, ‘বিড়ালের কামড়ের একটি বিষয় হচ্ছে, সংক্রমণ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, কখনও সেটা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হয়, এবং এটা খুব অল্প সময়ের মধ্যে আরও খারাপ হতে পারে৷ ফলে আপনি এমনও দেখতে পারেন যে, পরীক্ষার ফল আসা পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই আপনার সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে৷’
সমস্যা হলো বিড়ালদের লম্বা কিন্তু পাতলা, সূক্ষ্ম দাঁত থাকে৷ যখন তারা কামড়ায় উপর থেকে দেখতে ছোট মনে হলেও গভীরে ক্ষতটা বেশি হয়ে থাকে৷ সুঁইয়ের মতো ধারালো দাঁতের মাধ্যমে কিছু বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া ত্বকের টিস্যুর গভীরে জমা হয়৷ সেখানে তারা নির্বিঘ্নে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ ত্বকের নিচে কী হচ্ছে তা বোঝা কঠিন৷
ডা. ভিশেলহাউস বলেন, ‘সেখানে থাকা টিস্যু ধ্বংস করে ব্যাকটেরিয়া৷ ফলে যখন আপনি কেটে সেখানে দেখার চেষ্টা করেন, তখন সেখানে আর টিস্যু থাকে না, থাকে শুধু পুঁজ৷,
হাতের ত্বকের নীচে গুরুত্বপূর্ণ টেন্ডন ও জয়েন্ট থাকে, তাই গভীর কামড় দ্রুত গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে৷
ডা. পাউল প্রাইসার বলেন, বিড়াল কামড়ালে দ্রুত অস্ত্রোপচার করা জরুরি৷ একমাত্র এভাবেই জানা সম্ভব, কামড়টি সম্ভাব্য বিপজ্জনক এলাকায় পৌঁছেছে কিনা কিংবা সংক্রমণের ঝুঁকি কতটা৷
‘এটার উপর নির্ভর করে আমরা বলতে পারি যে, শুধু জায়গাটুকু জীবাণুমুক্ত করলেই হবে, নাকি সেখানে আরেকটু কেটে জায়গাটা পরিষ্কার করতে হবে৷ প্রশিক্ষণ থাকলেই একমাত্র সেটা করা সম্ভব।’
ডানিয়েল ফলব্রেশটের কামড়টা খুব খারাপ ছিল না৷ তারপরও তার অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়েছে। শুধু অ্যান্টিবায়োটিক পর্যাপ্ত ছিল না৷ তিন মাস পর তিনি ভালোভাবে হাত নাড়াতে পেরেছেন৷ তবে পুরো ঠিক হতে সময় লাগবে৷
ইদানিং তিনি বিড়ালের দাঁত থেকে আরও বেশি সতর্ক থাকেন৷
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে