একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট মারা যান। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। আগের দিন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁর মৃত্যু ঘিরে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ২ মিনিট ৭ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটির প্রথম ১ মিনিট ৩ সেকেন্ডে অপারেশন থিয়েটারে অস্ত্রোপচারের দৃশ্য দেখানো হয়। তাতে দাবি করা হচ্ছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে অস্ত্রোপচার চলাকালে মেরে ফেলা হয়েছে, ভিডিওটি এত দিন প্রকাশ্যে আনা হয়নি।
ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ‘লিভার ট্রান্সপ্লান্ট অ্যান্ড গ্যাস্ট্রো সায়েন্সেস আর্থেমিস হসপিটাল’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি পাওয়া যায়। এটি ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল চ্যানেলটিতে পোস্ট করা হয়। ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি ভারতের নয়াদিল্লির গুরগাঁওয়ে অবস্থিত আর্থেমিস হসপিটালের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট অপারেশন থিয়েটার থেকে ধারণ করা। ৩৯ সেকেন্ডের এই ভিডিওর সঙ্গে সাঈদীর অস্ত্রোপচারের ভিডিও দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটির হুবহু মিল আছে। দুটি ভিডিওতেই অপারেশন থিয়েটার, থিয়েটারে উপস্থিত চিকিৎসকদের সংখ্যাসহ অপারেশন থিয়েটারের অন্য সব উপকরণের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে কারাগারে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। কারাগারে থাকাকালীন ২০১৮ সালে বা তার কাছাকাছি সময়ে কখনো তাঁর অস্ত্রোপচারের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ভিডিওটি সাঈদীর মৃত্যুর অন্তত ৫ বছর আগে থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান। এর সঙ্গে সাঈদীর মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই।
সাঈদী মৃত্যু সম্পর্কে ঢাকার বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউর রহমান বিবিসি বাংলাকে ওই সময় বলেন, ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট রাত ৮টা ৪০ মিনিটে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট (হার্ট অ্যাটাক) হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে সন্ধ্যায় তাঁর আরেকটি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল। সাঈদী বহুদিন ধরে হৃদ্রোগের জটিলতায় ভুগছিলেন। এর আগে তাঁর হৃৎপিণ্ডে পাঁচটি স্টেন্ট পরানো হয়েছিল।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে